Apan Desh | আপন দেশ

পাবনা হাসপাতালে দালালদের কারণে ৩ দিন ইসিজি বন্ধ

পাবনা প্রতিনিধি 

প্রকাশিত: ২০:৩০, ৯ নভেম্বর ২০২৪

পাবনা হাসপাতালে দালালদের কারণে ৩ দিন ইসিজি বন্ধ

ছবি: আপন দেশ

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ইসিজি কক্ষ থেকে দালাল চক্রের সদস্যরা মেশিনের যন্ত্রাংশ জোরপূর্বক খুলে নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় গত তিন-দিন ধরে হাসপাতালের ইসিজি সেবা বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

শনিবার (৯ নভেম্বর) সকালে ইসিজি বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করেন। তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছেন এবং দ্রুত সুরাহার দাবি জানিয়েছেন।

পাবনা জেনারেল হাসপাতালের ইসিজি বিভাগের কর্মীরা দালাল চক্রের অত্যাচারের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেন। ইসিজি বিভাগের কর্মীরা বলেন, হাসপাতালের ইসিজি সেবা চালু হওয়ার পর থেকে দালালরা রোগী ও তাদের স্বজনদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে।

আগে হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টা ইসিজি সেবা ছিল না। ফলে দালালরা রোগীদের থেকে ৫০০-৭০০ টাকা, কখনো ১৫০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করতো। কিন্তু গত এক বছর ধরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ২৪ ঘণ্টা মাত্র ৮০ টাকায় ইসিজি সেবা চালু করে। এতে দালালদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর তারা ইসিজি কক্ষ থেকে মেশিন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে তাদের মেশিন দিয়ে সেবা নিতে বাধ্য করে। একইসঙ্গে রোগীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে।

দালাল চক্রের মূল হোতা সাদ্দাম ইসিজি রুমে চাকু নিয়ে ঢুকে কর্মীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে মেশিন ও যন্ত্রাংশ ছিনিয়ে নেয়। সাদ্দামের বিরুদ্ধে একাধিক বার প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগও উঠেছে। গত ৬ নভেম্বর রাত ১১টায় তিনি আবার চাকু নিয়ে ইসিজি রুমে প্রবেশ করেন এবং মেশিনের লিডসহ নানা যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যান। এরপর থেকে ইসিজি সেবা বন্ধ হয়ে গেছে।

ইসিজি বিভাগের কর্মীরা জানিয়েছেন, দালালরা হাসপাতালকে নিজেদের রাজত্বে পরিণত করেছে। তাদের বাধা দিলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। অনেক সময় তারা মেশিন ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায় বা সেবা বন্ধ করে রাখে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসিজি বিভাগের একাধিক কর্মী বলেন, সাদ্দাম ও তার সহযোগীরা হাসপাতালকে নিজেদের রাজত্বে পরিণত করেছে। ২৪ ঘণ্টা ইসিজি সেবা চালুর পর তাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। তাই তারা যান্ত্রিক ত্রুটি দেখিয়ে পরীক্ষা বন্ধ রাখে বা মেশিন ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিলে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে হত্যা হুমকি দেয়। এভাবে নিরাপত্তাহীনতায় আমরা কিভাবে রোগীদের সেবা দিবো?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক টেকনিশিয়ান বলেন, সাদ্দাম ও তার সহযোগীরা ব্রিফকেসে মেশিন নিয়ে রোগীদের পরীক্ষা করান। এতে তারা অতিরিক্ত টাকা নেন। বেশিরভাগ পরীক্ষাই সঠিক হয় না। ফলে রোগীরা ভুল চিকিৎসা পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এসব নিয়ে ঝামেলা হলেও কিছু বলা যায় না। সহযোগিতা না করলে এখন চাকু দেখিয়ে হত্যা হুমকি দেয়।

তিনি বলেন, এমন ঘটনা প্রথম নয়, এর আগেও বহুবার ঘটেছে। আমরা বহুবার হাসপাতালের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনো সুরাহা হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যেন দালালদের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক রফিকুল হাসান জানিয়েছেন, এ ঘটনায় পাবনা জেলা পুলিশকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। 

তিনি বলেন, দালালদের কাছে আমরা অসহায়। দিনে কড়াকড়ি থাকলেও রাতে তারা হাসপাতালে ঢুকে অপকর্ম করে। আমরা একাধিকবার পদক্ষেপ নিয়েছি, কিন্তু কোনো ফল মেলেনি। সমস্যা সমাধানে হাসপাতাল ক্যাম্পাসে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প প্রয়োজন। এর মাধ্যমে দৌরাত্ম্য কমবে।

তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে জেলা পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা চেয়েছি। আজও আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু এখনো পুলিশ ক্যাম্প পাইনি।

পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, পুলিশ হাসপাতালের নিরাপত্তায় কাজ করছে। পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।

এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ বিভিন্নভাবে কাজ করছে। টহলসহ অন্যান্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। তবে পুলিশ সদর দফতরের অনুমোদন পেলে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন সম্ভব। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আপন দেশ/এমবি
 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়