ছবি : আপন দেশ
শরতের শেষে চলছে হেমন্ত কাল। হেমন্তের মাঝেই পঞ্চগড়ে ঝেকে বসেছে শীত। হিমপ্রবণ জেলাখ্যাত উত্তরের এ প্রান্তিক জনপদে উত্তরের হিমেল বাতাসে বাড়ছে শীতের পরশ। ভোরের শুভ্র শিশিরে সিক্ত হচ্ছে সবুজ ঘাস। শীতকে কেন্দ্র করে ঘরে ঘরে এখন নবান্নের আমেজ। রোববার (১৭ নভেম্বর) ভোর ৬টায় জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার কার্যালয় তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গতকালের তুলনায় ঘন কুয়াশা না থাকলেও হিমবাতাসে অনুভব হয় শীত। সবুজ ঘাসের ডগায় চিকচিক করতে দেখা যায় শুভ্র শিশিরকে। কার্তিক-অগ্রহায়নে মাঠে ধান কাটতে শিশির মাড়িয়ে ক্ষেতে ছুটতে দেখা যায় চাষিদের। জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন নিম্ন আয়ের মানুষদের কাজে যেতে দেখা যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, উত্তরের এ জেলাটি হিমপ্রবণ জেলা। হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা সন্নিকটে থাকায় অক্টোবর থেকেই হিমালয়ের হিমবায়ু প্রবাহিত হলে শীতের আমেজ শুরু হয়। বর্তমানে দিন দিন শীতের মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। সন্ধ্যার পর ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে শীতের অনুভূতি। রাতভর নিতে হয় কাথা কিংবা পাতলা কম্বল। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় থেকেই জানুয়ারী পর্যন্ত দাপট থাকে শীতের। শীতের আমেজে যুক্ত হচ্ছে নবান্নের আমেজ। ঘরে ঘরে বিভিন্ন পিঠেপুলি ও শহর-গ্রামের বিভিন্ন হাটবাজারে মিলতে শুরু করেছে শীতকালিন বিভিন্ন পিঠাপুলি।
উত্তরের এ জেলাটি পর্যটন অঞ্চল হওয়ায় বিশেষ আকর্ষণ কেড়েছে তেঁতুলিয়া হতে ভারত-নেপালের সুউচ্চ হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা। গত অক্টোবর থেকেই পর্যটকের ঢল নেমেছে এ জেলার তেঁতুলিয়ায়। বর্তমানে আবহাওয়ার কারণে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা না গেলেও আগামী শীতের পরশে সিক্ত হচ্ছেন পর্যটকরা। তারা বলছেন, পঞ্চগড় যে শীতের এলাকা, এ সময়টাতেই শীত উপভোগ করতে পারবো ভাবতে পারিনি। পাহাড় দেখতে এসে পাহাড়ের শীতল পরশ অনুভব করতে পারছি।
ভ্যানচালক সানোয়ার হোসেন ও মহির উদ্দিন বলেন, ভোরে ভ্যান নিয়ে বের হলে বেশ শীত অনুভব হচ্ছে এখন। একই কথা বলেন কয়েকজন পাথর ও চা শ্রমিক। তারা জানান, আমাদের এখানে শীত পড়ে গেছে। হিমালয়-কাঞ্চনজঙ্ঘা কাছে থাকায় উত্তর দিক থেকে আসা উত্তরীয় হিমপ্রবাহ শীত বয়ে নিয়ে এসেছে।
তবে এখনো সেভাবে শীত না পড়ায় দিনে গরম ও রাতে হালকা শীতের কারণে আবহাওয়ার কারণে বেড়েছে শীতজনিত বিভিন্ন রোগব্যাধি। জেলার আধুনিক সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু ও বয়স্করা সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেলা সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাতে ও ভোরে শীত পড়লেও দিনে গরম। তাই দিনে-রাতে দুই রকম গরম-ঠান্ডা মানুষের মধ্যে শীতজনিত সর্দিকাশিসহ বিভিন্ন রোগের দেখা দিতে পারে। এজন্য বলে জানিয়েছেন সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতার সঙ্গে যত্ন নিতে হবে।
পঞ্চগড়ের প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, দিন দিন তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। ভোরে কুয়াশায় জড়াচ্ছে প্রকৃতি। রাতে ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে। আজ রোববার ১৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এখন দিন যত যাবে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।