লুটপাট, ভাংচুর শেষে অগ্সি সংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। ছবি-আপন দেশ
দলীয় কোন্দলের জেরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে মৎস্যজীবী দলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জালাল উদ্দিন নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে, জালাল হত্যার জেরে ওই এলাকার বেশকিছু বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঘটনাস্থল হেমায়েতপুর ইউনিয়নে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। হত্যার দিন থেকে হেমায়েতপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় অন্তত ৫ থেকে ৭ টি বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছাড়া হামলার শিকার পরিবারগুলো।
পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম জানান, নিহত জালালের ভাই লাবু হোসেন বাদী রোববার (১৭ নভেম্বর) রাতে মামলা করেছেন। এতে ২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি।
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছিল জেলা বিএনপির সদস্য মুন্তাজ আলির সঙ্গে হেমায়েতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম পক্ষের। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে এলাকার ইসলামি জলসা নিয়ে দুই পক্ষের বাকবিতন্ডা হয়। এরই জেরে পরদিন শনিবার সকালে বেতেপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে কয়েকজন আহত হন। এদের মধ্যে আবুল হাসেম অনুসারী জালালকে হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান।
এরপরই, শনিবার রাতে ও রোববার দিনভর মন্তাজের অনুসারীদের বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় হাসেমের লোকজন। মন্তাজ অনুসারীদের দাবি, হাসেমের অনুসারীরা হেমায়েতপুর মানসিক হাসপাতাল এলাকায় জেলা যুবদলের সাবেক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হাসান আলী, রেজাউল করিম, মোহাম্মাদ আলীর বাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মামলা হামলা আতঙ্কে এসব বাড়ি পুরুষ শূন্য। দুএকটি ব্যতীত অধিকাংশ বাড়িতে পরিবারের নারী সদস্যরাও নেই। হামলার শিকার পরিবারগুলোর অভিযোগ, প্রায় শত লোকের একটি দুর্বৃত্তের দল বিভিন্ন সময় লোহার রড, চাপাতি, হাসুয়া ও বাঁশের লাঠিসোঁটা নিয়ে বাড়িগুলোতে হামলা চালায়। এ সময় বাড়িতে থাকা গরু, ছাগল, মোটরসাইকেল, গহনা, টাকা পয়সা সহ আসবাবপত্রও লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ভাঙচুর শেষে দেয়া হয় অগ্নিসংযোগ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, রাজনীতি বা হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত নন এমন অনেক পরিবারের ওপরও এ হামলা ও লুটপাট চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। অভিযোগ জানানোর পরেও প্রশাসন তাদের নিরপত্তা দিতে পারছে না বলেও অভিযোগ তাদের।
এব্যাপারে রেজাউল করিম বলেন, আমি সাধারণ ব্যবসায়ী। কোনো ধরণের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই। আমার ছোটভাই বিএনপির ওদের (হামলাকারী) বিপরীত গ্রুপের রাজনীতি করে জন্য আমার বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। লুটপাট ও ভাঙচুর করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। এখনো হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, দুই গ্রুপই বিএনপি। যে গ্রুপের লোক মারা গেছে তার বিরুদ্ধ গ্রুপের বাড়িঘর তো হামলা হয়েছেই, এর সঙ্গে রাজনীতি করে না এমন নিরীহ কিছু লোকের বাড়িও লুটপাট করা হয়েছে। আশেপাশের এলাকাগুলোতেও প্রচন্ড আতঙ্ক বিরাজ করছে। যারা হত্যার সঙ্গে জড়িত বা অপরাধী তাদের শাস্তি হোক, কিন্তু এভাবে সাধারণ পরিবারের ওপর হামলা করা উচিত না। চারিদিকে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে চলাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।
তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে দাবি করে পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম বলেন, নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ওই এলাকায় এখনো অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।