চাঁদাবাজ মিনারুল ইসলাম ও তার ভাই মনিরুল।
পাবনার চাটমোহরে বিএনপির নামধারী একটি চক্রের বিরুদ্ধে কলেজ শিক্ষক শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় তাকে ও তার পরিবারকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় শহিদুল ইসলাম জেলা পুলিশ ও স্থানীয় সেনা ক্যাম্পে অভিযোগ করেছেন।
শহিদুল ইসলাম প্রফেসর বয়েন উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। তিনি সন্তোষপুর গ্রামের বাসিন্দা দবির উদ্দিনের ছেলে।
চাঁদাবাজির মূলহোতা মিনারুল ইসলাম (৪৭) একই গ্রামের মৃত আলাউদ্দিনের ছেলে। সরকার পতনের পর নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দিয়ে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়েছেন। তিনি তার দলবল নিয়ে নিয়মিত চাঁদাবাজি করে আসছেন। মিনারুলের দলের সদস্যরা, তার ভাই মনিরুল, মাসুম, আনার মেম্বার, গোলাপ হোসেন, তানজিল সহ ২৫/৩০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল গঠন করেছেন। তারা এলাকাবাসীর কাছে চাঁদা দাবি করে। না দিলে তাদের বাড়িঘরে হামলা ও ভাঙচুর করে।
মিনারুলের সন্ত্রাসী দল পুলিশ পরিচয় দিয়ে আবু জাফর মাস্টারের বাড়িতে হামলা চালায়। পরে তারা অবৈধ অস্ত্র আবু জাফরের হাতে দিয়ে ছবি তুলে। তাকে ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করে। তারা চাঁদা আদায়ের জন্য শহিদুল ইসলামের কাছে ১২ লাখ টাকা দাবি করে। চাঁদা না দিলে হত্যার হুমকি দেয়।
ভুক্তভোগীর কাগজপত্র যাচাই করে দেখা যায়, মিনারুল চাটমোহর উপজেলার বোঁথর গ্রামের আব্দুর রউফের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা ধার নেন। কিন্তু সে টাকা ফেরত না দিয়ে নানা তালবাহানা শুরু করেন। ২০১৭ সালে আব্দুর রউফ আদালতে মিনারুলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। শহিদুল ইসলাম ওই মামলায় প্রধান সাক্ষী হন।
মিনারুল তার বিরুদ্ধে একটি জাল নোটিস পাঠিয়ে শহিদুলের কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা দাবি করেছে। এ নোটিসের সত্যতা যাচাই করে দেখা গেছে, তা আইনজীবী আশরাফুজ্জামান হালিমের নাম ও প্যাডে জালিয়াতি করা হয়েছে। আইনজীবী হালিম বলেন, মিনারুলের পক্ষ থেকে আমি কখনোই কোনো লিগ্যাল নোটিস পাঠাইনি। এটি সম্পূর্ণ জালিয়াতি। আমি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
এ ব্যাপারে মিনারুল বলেন, তিনি বিএনপির নেতা নন। কেবল সমর্থক। কয়েক বছর আগে শহিদুল আমার কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা নিয়ে ছিল। আমি তাকে আমার পাওনা টাকা ফেরত চেয়েছি। তবে কাউকে হুমকি বা হামলা করিনি।
ভুক্তভোগী শহিদুল ইসলাম জানান, তার মিনারুলের সঙ্গে কখনো কোনো লেনদেন ছিল না। তবে মিনারুল ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তার কাছে টাকা দাবি করছে। তিনি মিনারুলকে বলেছেন, যদি সত্যিই কোনো পাওনা থাকে তবে প্রমাণ দিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। কিন্তু মিনারুল তা না করে ক্রমাগত হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
মিনারুলের বিরুদ্ধে একটি মামলা ছিল। সে মামলায় শহিদুল ইসলাম সাক্ষী ছিলেন। তার স্বাক্ষীত্বের কারণেই মিনারুলের ক্ষোভ ছিল। তার পর থেকেই মিনারুল শহিদুল ও তার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে।
এ বিষয়ে চাটমোহর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং: ৬৪৪) করা হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা অভিযোগ পেলে তদন্ত শুরু করবেন। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
এলাকার অনেকেই জানান, মিনারুল ও তার দলের লোকেরা দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তারা বিভিন্ন সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মকবুলের বাহিনীর সদস্য ছিল। কিন্তু পরে বিএনপি যোগ দিয়েছে।
এদিকে মুলগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আ. কুদ্দুস রেজা জানিয়েছেন, মিনারুল কখনোই বিএনপির সদস্য ছিলেন না। তাকে চাঁদাবাজি ও হামলার অভিযোগে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আহবান জানিয়েছেন।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, আইনশৃঙ্খলা অবনতির চেষ্টা করলে কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। অভিযোগপত্রটি আমি এখনও হাতে পাইনি। তবে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।