
গাজীপুরে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে কঠিন হবে। ফলে জনগণের আস্থা অর্জন করতে দলের নেতাকর্মীদের আহবান জানান তিনি।
রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতে ৩১ দফা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার নির্দেশনা দিয়ে তারেক রহমান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর জনগণের যে আস্থা, বিশ্বাস রয়েছে তা ধরে রাখতে হবে। আস্থা নষ্ট হয় এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হওয়া যাবে না।
মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) গাজীপুরে অনুষ্ঠিত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ জনসম্পৃক্তি বিভাগীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গাজীপুর জেলা বিএনপি'র উদ্যোগে মহানগরীর চৌরাস্তা এলাকায় সাগর সৈকত কনভেনশন সেন্টারে এ প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে গাজীপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের ৩ হাজারের বেশি নেতাকর্মী অংশ গ্রহণ করেন।
তারেক রহমান বলেন, একজন রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সবচেয়ে বড়ো সফলতা হচ্ছে, মানুষের বিশ্বাস অর্জন করা। আমরা জনগণের সর্মথন নিয়ে স্বৈরাচার সরকারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছি। কিন্তু স্বৈরাচার দেশ ছেড়ে পালালেও তাদের ষড়যন্ত্র থামেনি। বিএনপির জনসমর্থন দেখেও অনেকের হিংসা হচ্ছে, তারাও বসে নেই। কাজেই বিএনপির সকল নেতাকর্মীকে সকল ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে ষড়যন্ত্র অব্যাহত, থেমে যায়নি। স্বৈরাচারের মাথা পালিয়ে গেছে কিন্তু তাদের লেজ রয়ে গেছে। তাদের বিরুদ্ধে সচেতন থাকতে হবে। তারা কিন্তু ভিতরে ভিতরে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। অতএব তাদের প্রতি সকলকে সজাগ থাকে হবে।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপির প্রতি জনসমর্থন অনেকের হিংসার কারণ হওয়ায় ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বিএনপিকে ধ্বংস করতে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দলটিতে এজেন্ট প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামীর যে নির্বাচন হবে, আপনাদের আমি শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, কেউ যদি মনে মনে ভেবে থাকেন এখানে তো প্রধান প্রতিপক্ষ নাই, দুর্বল হয়ে গেছে, নির্বাচন খুব সহজ হবে, নো, নো, নো অ্যান্ড নো। এ নির্বাচন অতীতের যেকোনো নির্বাচনের চেয়ে অনেক, অনেক, অনেক কঠিন হবে। কাজেই নিজেদের সেভাবেই প্রস্তুত করুন যে, আগামীর কঠিন নির্বাচনে জনগণের সমর্থন নিয়ে সেই পুলসিরাত যেন পার হতে পারি।
তারেক রহমান আরও বলেন, নিশি রাতের নির্বাচন ও ভোট ডাকাতির নির্বাচনে বিশ্বাসী নয় বিএনপি। যে কোন মূল্যে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। জনগণের সমর্থন নিয়ে রাষ্ট্র মেরামত করতে হবে।
তারেক রহমান বলেন, দেশের মানুষ বিএনপির দিকে তাকিয়ে আছে। মানুষ যখন তাকিয়ে থাকে তখন দায়িত্ব এসে পড়ে যায়, কোটি কোটি মানুষের দায়িত্ব এক বিশাল দায়িত্ব। তিনি বলেন, বিএনপির প্রত্যেককে একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। মানুষের আস্থা অর্জন করা একজন রাজনৈতিক কর্মীর সবচেয়ে বড় সফলতা, সবচেয়ে বড় অর্জন। এ আস্থা ধরে রাখাও একজন কর্মীর দায়িত্ব।
তিনি দলীয় নেতকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, জনগণের সঙ্গে থাকুন, জনগণকে সাথে রাখুন। আমরা জাল ভোট দিয়ে, কারচুপি করে, নিশি ভোটে, জোর করে ক্ষমতায় যেতে চাই না। মানুষ মুক্তভাবে ভোট দিবে এমন একটি মুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতে তুলে দিতে হবে। তবেই জনগণ ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে বিএনপিকে বিবেচনা করবে।
তিনি বলেন, যারা নিজের বক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্য দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করবে তাদেরকে শক্ত হাতে রুখতে হবে। রাষ্ট্র মেরামত করতে হলে জনগণের সমর্থন নিয়েই ক্ষমতায় যেতে হবে। বিএনপি রাষ্ট্র মেরমতের যে প্রস্তাবনা করেছে তা বাস্তবায়ন করতে অবশ্যই জনগণের সহযোগিতা লাগবে। যে কোন মূল্যে জনগণের সমর্থন ধরে রাখতে হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মিডিয়ার স্বাধীনতা বলতে যা খুশি তাই লেখা নয়। অবশ্যই সততা ও নিরপেক্ষতা থাকতে হবে।
গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নানের সঞ্চালনায় প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তব্য দেন- নারায়ণগঞ্জে জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকনসহ নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিভিন্ন ইউনিটের নেতারা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন। ঢাকায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরি এ্যানি, খন্দকার আবু আশফাক ও নিপূণ রায় চৌধুরি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল, মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবিবা, বিএনপির নির্বাহী সদস্য আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা: রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সহ- শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, মেয়র মজিবুর রহমান, ইশরাক সিদ্দিকী, রাশেদুল হক ও আক্তারুল আলম মাস্টার প্রমুখ।
আপন দেশ/এসএমএস
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।