ছবি : আপন দেশ
কয়েকদিন ধরে তীব্র শীতের কারণে হাত-পায়ে কাঁপন ধরেছে। এ মৌসুমে কুড়িগ্রামে এমন ঠান্ডা আর অনুভুত হয়নি, বলছিলেন, জেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের বাসিন্দা লুৎফর (৬৫) ও মজিবর (৭৩)। বৃদ্ধা লুৎফর ও মজিবর পেশায় মাটি কাটা শ্রমিক। তারা দুই সহোদর। জীবিকা নির্বাহের প্রয়োজনে প্রতিদিন খুব সকালেই তাদেরকে ঘর ছেড়ে বের হতে হয়। এদিনও ছুঁটছেন তারা। দুজনার হাতে ব্যাগ। ব্যাগের ভেতরে রাখা টিফিন বক্সে দুপুরের খাবার নিয়ে চলছেন গন্তব্যের দিকে।
দুই সহোদর জানান, এমন ঠান্ডায় বার্ধক্য নিয়ে কাজ করার মতো শক্তি পাই না! কনকনে ঠান্ডায় হাত-পা টাডায়! কোদাল ধরতে ইচ্ছে করে না! কিন্তু কাজ না করলে কী খেয়ে বাঁচবো?
দিনমজুর লুৎফর ও মজিবরের মতো খেটে-খাওয়া অনেক মানুষের মুখেই শীতের তীব্রতার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে নিম্ন আয়ের কেউ কেউ এ শীতকে "অসহনীয়" বলছেন।
একই দিন জীবিকার সন্ধানে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে জেলা শহরমুখী কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর যাত্রাপুর এলাকার আব্বাস আলী (৭০)। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠান্ডায় শরীর কাঁপছে বাবা। কয়েকদিন ধরে যে ঠান্ডা পরছে তা আর সহ্য করা যাচ্ছে না। ঠান্ডায় ভাড়াও ঠিকমতো মিলছে না। তিনবেলার খাবার যোগানো মুশকিল হচ্ছে।
জেলার রাজারহাট আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার (০২ জানুয়ারি) সকালে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৮-১০ কিলোমিটার। আর্দ্রতা ৯৯ শতাংশ। কয়েকদিন ধরে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রির মধ্যেই অবস্থান করছে। তাপমাত্রা খুব একটা না কমলেও কয়েকটি কারনে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। পুরো জানুয়ারি মাসজুড়েই শীতের এমন অনুভূতি থাকতে পারে।
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, তাপমাত্রা এখনো অস্বাভাবিক নয়। তবে উত্তরীয় হিমেল হাওয়ায় তীব্র ঠান্ডা অনুভুত হচ্ছে। সেসঙ্গে আকাশে মেঘের উপস্থিতি ও ঘন কুয়াশার কারনে সূর্যের দেখা না মেলায় দূর্ভোগ বেড়েছে মানুষের।
এ পরিস্থিতিতে বেশী দূর্ভোগে রয়েছেন জেলার সাড়ে চার শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের মানুষ। গরম কাপড়ের অভাবে তীব্র শীত কষ্ট ভুগছেন তারা। দূর্ভোগ বেড়েছে শিশু ও বয়স্কদেরও।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের মাঝের চর এলাকার বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, ঠান্ডায় ঠিক মতো কাজ কাম মিলছে না। গরম কাপড় না থাকায় তীব্র শীত কষ্টে ভুগছেন ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার খেটে খাওয়া মানুষ। জরুরি ভিত্তিতে এ এলাকায় শীতবস্ত্রের প্রয়োজন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল হাই সরকার বলেন, শীতার্তদের জন্য মোট ১২ হাজার কম্বল ও ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তারমধ্যে ২৭ লাখ টাকার শীতবস্ত্র ও ১২ হাজার কম্বল বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট টাকারও শীতবস্ত্র বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।