ছবি : আপন দেশ
পাবনায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। বর্তমানে পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ। এতে লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা। প্রথমে প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফলন বিপর্যয়, পরে উত্তোলন মৌসুমে দাম কমে যাওয়ায় দিশেহারা তারা। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে উত্তোলন মৌসুমে বিদেশি পেঁয়াজ আমদানি সাময়িক বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
পেঁয়াজ সমৃদ্ধ পাবনার সুজানগর উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রাম। পদ্মা চরের গ্রামটির মাঠে মাঠে এখন শীতকালীন মুড়িকাটা পেঁয়াজ তোলা নিয়ে ব্যস্ত চাষীরা। সে পেঁয়াজ বাড়িতে নেয়ার পর বাছাই করে বাজারে নেয়া হয় বিক্রির জন্য।
গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে লাভবান হওয়ায় এ বছরও সুজানগর, সাঁথিয়া, বেড়া ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ করেন চাষিরা। প্রথম দফায় উচ্চমূল্যে কেনা কন্দবীজ রোপণের পরপরই নষ্ট হয় অসময়ের অতিবৃষ্টিতে। নতুন করে আবারও রোপণ করায় খরচ বাড়ে দ্বিগুণ।
দেরিতে রোপণ করায় কাঙ্ক্ষিত ফলন পাননি পেঁয়াজ চাষীরা। এ না পাওয়ার আক্ষেপের মাঝেই এখন মড়ার উপর খাড়ার ঘা, বড় ধরনের দরপতন। তারপর বর্তমানে যে দাম মিলছে তাতে বিঘা প্রতি লোকসান প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এমন হলে আগামীতে পেঁয়াজ আবাদ না করার চিন্তা চাষীদের।
লক্ষ্মীপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি মনিরুল ইসলাম বলেন, এবার মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগাতে আমাদের বিঘায় এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ। ফলন পেয়েছি বিঘায় ৫০ মণ। ১৫০০ টাকা মণ বিক্রি করলে ৭৫ হাজার টাকা পাচ্ছি। লোকসান ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এরকম হলে আগামীতে পেঁয়াজ আর লাগাবো না।
উপজেলার বামুন্দি গ্রামের কৃষক ময়েন উদ্দিন খান বলেন, প্রথমে পেঁয়াজ লাগানোর পর বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেল। অনেকে সেগুলোই জমিতে রেখে বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। আবার বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আবার নতুন করে রোপণ করতে হয়েছে। এতে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু সে অনুপাতে ফলনও কম, আবার বাজারে তো দামও কম। দাম কমে যাওয়ায় উৎপাদন খরচই উঠছে না।
পাইকারি পেঁয়াজ বিক্রির অন্যতম বড় হাট চিনাখড়া হাট। কৃষক জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে এই হাটে নিতেই একের পর এক দরপতন। বর্তমানে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকায়। কিছুদিন আগে বিক্রি হয়েছে ২০০০ টাকায়।
পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী আশরাফ আলী জানান, সবাই পেঁয়াজ তুলছে। হাটে পেঁয়াজের আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। আমরা বাজার অনুযায়ী কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাই। এখানে আমাদের কোনো সিন্ডিকেট নেই। এ পেঁয়াজ তো বেশিদিন সংরক্ষণ করে রাখা যায় না।
কৃষকদের ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করছে কৃষি বিভাগও। সুজানগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রাফিউল ইসলাম বলেন, বেশি দাম পাওয়ার আশায় অনেক কৃষক একসঙ্গে পেঁয়াজ তুলে বাজারে নেয়ায় দাম কমেছে। আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি অপরিপক্ব পেঁয়াজ জমি থেকে না তোলার। পরিপক্ষ হওয়ার পর ধীরে ধীরে পেঁয়াজ তোলা ও বাজার দেখে বিক্রি করা। আশা করছি দাম আবার বাড়বে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে পাবনা জেলায় ৮ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। আর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিকটন।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।