Apan Desh | আপন দেশ

জমি ভরা ধান আছে হারিয়ে যাচ্ছে গোলাঘর

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:১২, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ১৭:১৪, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫

জমি ভরা ধান আছে হারিয়ে যাচ্ছে গোলাঘর

ছবি: আপন দেশ

গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ-দুয়ে মিলে বলা হতো ধনী মানুষ। কয়েকযুগ আগে গ্রাম বাংলার কয়কদের বাড়িতে দেখা মিলত ধান রাখার গোলাঘর বা ধানের গোলা।

আধুনিক সভ্যতায় ইমারতের তৈরি গুদাম ঘরের যুগে হারিয়ে গেছে এ ঘর। তবে বাবা-দাদার ঐতিহ্যকে স্মৃতির ফলক হিসেবে ধরে রাখতে এখনো কেউ কেই বাড়িতে এ গোলা ঘর রেখে দিয়েছেন। এমনই ধান রাখার জরাজীর্ণ পৃথক দুটি আয়তাকার গোলা ঘড়ের দেখা মিলবে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার পালশা ইউপির চৌধুরী বাড়িতে।

সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ শামীম হোসেন চৌধুরীর বাড়িতে ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এ দুটি আয়তাকার গোলা ঘর। তার দাদা এ গোলা ঘর তৈরি করেছিলেন। পুরোটাই বাঁশের তৈরি এ গোলাধর। ভেতরের অংশের পুরো দেয়াল মাটির আস্তরণ দেয়া। বাইরে অর্ধেকের বেশি অংশ জুড়ে মাটির আস্তরণ লাগানো আছে। কয়েক জোড়া গাছের খুঁটি এবং ইটের উপর দাঁড়িয়ে আছে এ গোলা ঘর।

মাটি থেকে প্রায় দুই ফুট উপরে এ ঘরের মেঝে সেখানেও বাবহারিত হয়েছে বাঁশের উপরে মাটির মোটা আস্তরণ। উপরে রয়েছে টিনের চালা। চালার ঠিক নিচেই রয়েছে ছোট্ট ৩টি দরজা। সে ছোট্ট দরজা দিয়েই এক সময় সোনালী ধান উঠানামা করানো হতো। সে ঘর দুটিতে এখন ধানের বস্তা নেই। আছে বাড়িতে ব্যবহারিত অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এক সময় কন্যা পাত্রস্থ করতেও বর পক্ষের বাড়ি থেকে ধানের গোলার খবর নিতো কনে পক্ষের লোকজন, যা এখন শুধু রূপকথা।

এ গোলা ঘর তৈরির জন্যই প্রয়োজন হতো কারিগরের। সেসব কারিগররাও এখন আর নেই। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ শামীম হোসেন চৌধুরী বলেন, এ ধান রাখার গোলা ঘর আমার দাদার আমলে তৈরি। সেটি আমার বাবাও ব্যবহার করেছেন। আমিও ২০০৭ সাল পর্যন্ত এটি ব্যবহার করেছি।

তিনি আরও বলেন, এখন আর গোলা ঘরের তেমন প্রয়োজন হয় না। জমি থেকে ধান কাঁটার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবসায়িরা ধান কিনে নেয়। শুধু বাড়িতে যাওয়ার জন্য যে পরিমান চালের প্রয়োজন, সে পরিমান ধান বাড়িতে রাখা হয়। এ ধানের গোলা আমার পরিবারের, স্মৃতি বহন যায়। তাই এটি না ভেঙ্গে এভাবেই রেখে দিয়েছি।

পালশা ইউপির বিলপাড়া গ্রামের ৮৩ বছর বয়সী বৃদ্ধ আব্দুল জলিল। তিনি বলেনও এ বড় বড় ধানের গোলা আগে সব বাড়িত দেখাও ছিল না। বড়লোক গৃহস্থের বাড়ির খালি আছিল। এ গোলা বানাতে সে আমলেত ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। এখনকার যুগের ছোট মাইয়া-পোলতো গোলা কি জিনিস জানেই না।

গোলা ঘর নিয়ে ঘোড়াঘাট কে.সি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ লুৎফর রহমান বলেনও আধুনিকতার যুগে প্রাচীন ইতিহাস-ঐতিহ্যর অনেক নিদর্শন হারিয়ে গেছে। তারমধ্যে ধান রাখাও গোলাঘর একটি। এক সময় গ্রামীণ জনপদের ধনী কৃষকদের বাড়িড়ে গোলাঘর এর দেখা মিলত। এ ঘরে রাখা ধান হতো বেশ শক্ত। সে ধানের চাল হতো বেশ সুস্বাদু। আগামী প্রজন্মের জানান জন্যে হলেও এসব গ্রামীণ বিলুপ্ত প্রায় ঐহিত্য সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। 

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়