
ছবি : আপন দেশ
কুয়াশায় ঢাকা চারিদিক। এর সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। গত কয়েক দিন ধরেই চলছে এ অবস্থা। শীতের দাপটে স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোর জনজীবন। ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। এতে বিপাকে পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটেখাওয়া শ্রমজীবী মানুষেরা। উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছে, সকালে ঘন কুয়াশায় ঢেকে ছিল নওগাঁর আকাশ। হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডা বাতাসে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। রোববার (২৬ জানুয়ারি) নওগাঁর বদলগাছিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মৌসুমে এ জেলায় এটি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। সকাল ৬টায় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ১০০ শতাংশ।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। সকাল ৮টা পর্যন্ত কুয়াশায় ঢাকা আছে চারপাশ। সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা ঝরছে। সঙ্গে হিমেল বাতাস শীতের মাত্রাকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন আবহাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষরা। অনেকে খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে দিনাজপুর। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, সঙ্গে বৃষ্টির মতো ঝরছে শিশির। সূর্যের দেখা মিলছে না গত চার দিন। ফলে শীতের দাপটে কাঁপছে পুরো জেলা। টানা কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রায় ছন্দপতন। একদিন বাড়ে তো আরেক দিন কমে। কোনো দিন রোদ তো কোনো দিন ঘন কুয়াশা। কুয়াশার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাতে বেড়েছে শীতের প্রকোপ।
রোববার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস। এর আগে শনিবার এ জেলায় ৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।
সরেজমিনে সকালে ঘুরে দেখা গেছে, ঘন কুয়াশার সঙ্গে বইছে তীব্র হিম বাতাস। আগুন জ্বালিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ। হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীতে সাধারণ মানুষ কিছুটা কাহিল হয়ে পড়েছে। শীতের কারণে জরুরি কাজ ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। তবে পরিবারের চাহিদা মেটাতে অনেকেই শীত উপেক্ষা করেই কাজের সন্ধানে ছুটছেন।
অপরদিকে তীব্র শীতে অনেকটাই জনশূন্য হয়ে পড়েছে ব্যস্ততম সড়ক ও হাটবাজারগুলো। দিনের বেলা সূর্যের দেখা না মিললেও ঠান্ডা বিরাজমান, কাজে যাচ্ছেন না অনেকেই। ভোরে হালকা কুয়াশা থাকার কারণে বিভিন্ন সড়কগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহনগুলোকে চলাচল করতে দেখা গেছে। এদিকে শীতের কারণে হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, এ জেলায় ঘন কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। তীব্র শীতের কারণে কাজে বের হতে পারছেন না শ্রমজীবী মানুষরা। টানা ছয়দিন ধরে জেলায় সূর্যের দেখা মিলছে না। বিকেল হতেই নেমে আসে অন্ধকার। এছাড়া হিমশীতল বাতাসে মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
কুড়িগ্রাম রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিসের পর্যবেক্ষণ সুবল চন্দ্র সরকার জানান, রোববার (২৬ জানুয়ারি) জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা ও আলু ক্ষেত নিয়ে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। কৃষক জহির আলী বলেন, প্রচণ্ড শীতের কারণে আলু ক্ষতি হবে। এতো কষ্ট করে আবাদ করেছি। ভেবেছিলাম আলুর ফলন ভালো হলে বিক্রি করে ভালো টাকা পাবো। এখন দুশ্চিন্তায় আছি। আল্লাহ ভরসা।
অন্যদিকে তীব্র শীতে জেলায় বাড়ছে ঠান্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। অনেকেই সমস্য নিয়ে ভিড় করছেন হাসপাতালে। কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ডা. শাহিদ সর্দার বলেন, শীতের কারণে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে বেশি ভর্তি হচ্ছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।