
ছবি: আপন দেশ
সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার চরবর্ধনগাছা আড়তে প্রতিদিন শত শত মণ আলু ও খিড়া পাইকারী কেনাবেচা হচ্ছে। দিনভর আলু ও খিড়ায় আড়ত ভরপুর থাকছে। বিভিন্ন মোকাম বাজারে এখানকার আলু ও খিড়া বিক্রি হচ্ছে। বহু শ্রমিক এখানে খাটছেন। ফলে খিড়া ফসলের দাম কমেছে। দেশী জাতের এক মণ খিড়া সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচশো টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে। হাইব্রিড জাতের খিড়া ফসল দেশী জাতের খিড়ার দামের চেয়ে মণ প্রতি এক থেকে দেড়শো টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে আলু সবচেয়ে বেশী সাতশো টাকা দরে কেনাবেচা হচ্ছে ।
উল্লাপাড়ার বর্ধনগাছা এলাকায় দুটি আড়ত আছে। এর মধ্যে চরবর্ধনগাছা আড়তে প্রতিদিন শত শত মণ আলু ও খিড়া ফসল আমদানী হচ্ছে। কৃষকেরা মাঠ থেকে খিড়া ও আলু ফসল তুলে সরাসরি এখানে এনে এখানে বেচছেন। প্রায় দুমাস হলো কৃষকেরা খিড়া ফসল এখানে কেনাবেচা করছেন। আর সপ্তাহ দুয়েক হলো আলু কেনাবেচা হচ্ছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, এবারের মৌসুমে ২৪০ হেক্টর পরিমাণ জমিতে খিড়া ফসলের আবাদ হয়েছে। উপজেলার মোহনপুর, কয়ড়া, বড় পাঙ্গাসী ও উধুনিয়া ইউনিয়ন এলাকায় সবচেয়ে বেশী পরিমাণ জমিতে খিড়া ফসলের আবাদ হয়েছে। কৃষকেরা হাইব্রিড ও দেশীয় দুই জাতের খিড়া আবাদ করেছেন। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের খিড়া বেশী পরিমাণ আবাদ হয়েছে বলে জানা গেছে।
বড় পাঙ্গাসী ইউনিয়নের সয়দপুর, খাদুলী, উধুনিয়া ইউনিয়নের বাগমারা, কয়ড়া ইউনিয়নর সড়াতলা, রতনদিয়ার, ভাগলপুর মাঠের বহু জমিতে কৃষকেরা দুই জাতেরই খিড়া ফসলের আবাদ করেছেন। সেসব জমির খিড়া ফসল আড়তগুলো ছাড়াও এলাকার হাট বাজারে পাইকারী দরে কেনাবেচা হয়ে আসছে। আবাদী মাঠগুলোয় খিড়া ফসল এখন কম উঠছে। কোনো কোনো মাঠে আগাম করে আবাদ করা খিড়া ফসলের গাছ তুলে ফেলা হয়েছে।
এদিকে এবারের মৌসুমে এক হাজার ৩৫ হেক্টর পরিমাণ জমিতে আলু ফসলের আবাদ হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে এ তথ্য জানা গেছে। উপজেলার মাহেনপুর, দুর্গানগর ও কয়ড়া ইউনিয়ন এলাকায় সবচেয়ে বেশী পরিমাণ জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। কৃষকেরা তাদের জমিতে নানা জাতের আলু ফসলের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে রোমানা জাতের আলু বেশী পরিমাণ জমিতে আবাদ হয়েছে বলে জানা গেছে। মোহনপুর ইউনিয়নের নাদা, সাতবিলা, মাহমুদপুর, দুর্গানগর ইউনিয়নের রাউতান, মুলবেড়া, ভাটবেড়া, কয়ড়া ইউনিয়নের রতনদিয়ারসহ আরো বিভিন্ন এলাকায় মাঠে আলু তোলা হচ্ছে। কৃষকেরা জানান মাঠে আলু তোলার পর বেশীজন কৃষক বালসাবাড়ী, সরিষাকোল, তালগাছি, মোহনপুর হাট ও চরবর্ধনগাছা আড়তে সে আলু নিয়ে গিয়ে ব্যবসায়ীদের কাছে বেচছেন।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) বিকেলে চরবর্ধনগাছা আড়তে গিয়ে দেখা গেছে বহু ব্যবসায়ী কৃষকদের কাছ থেকে আলু কিনছেন। কৃষকেরা মাঠে আলু তুলে অটো ভ্যান, ট্রলি ছাড়াও নানা বাহনে আড়তে এনেছেন। আড়তে আনার পর ব্যবসায়ীরা দর দাম মিটিয়ে আলু নামিয়ে নিচ্ছেন। এরপর কিনে নেয়া আলু মোকাম বাজারে পাঠানোর জন্য পানিতে ধুয়ে পরিস্কার করে তা বস্তাজাত করছেন। এক মণ আলু সাড়ে ছয়শো থেকে সাতশো টাকা দরের মধ্যে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে ।
কৃষকদের কাছ থেকে এ দামে ব্যবসায়ীরা কিনছেন। প্রতিবেদককে বর্ধনগাছা গ্রামের কৃষক আয়নুল হক বলেন, নিজ আবাদের পনেরো মণ আলু জমি থেকে তুলে সোমবার আড়তে এনে সাড়ে ছয়শো টাকা মণ দরে বিক্রি করেছেন। তিনি দুই বিঘা জমিতে আলু আবাদ করেছেন।
আলু ব্যবসায়ী রাজীব বলেন, তিনি প্রায় দুইশ মণ আলু কিনেছেন। একাধিক মোকাম বাজারে কেনা আলু বেচতে রাতেই পাঠাবেন।
জানা গেছে, চরবর্ধনগাছা থেকে সিলেট মোকামে সবচেয়ে বেশী পরিমাণ আলু বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া ঢাকা, পাবনা, খুলনা এলাকায় ব্যবসায়ীরা এখান থেকে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এখান থেকে নিয়ে যাওয়া আলু বিভিন্ন বাজারে নিয়ে পাইকারী বিক্রি করা হয়।
চরবর্ধনগাছা আড়তে গিয়ে দেখা গেছে বহু ব্যবসায়ী কৃষকদের কাছ থেকে খিড়া কিনেছেন। কৃষকদের কাছ থেকে কেনা খিড়া মোকাম বাজারে পাঠানোর জন্য পানিতে ধুয়ে তা বস্তাজাত করা হচ্ছে। এক মণ দেশীয় জাতের খিড়া পাচশো থেকে সাড়ে পাচশো টাকা আর হাইব্রিড জাতের খিড়া চারশো থেকে সাড়ে চারশো টাকা দরের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা মাঠের জমি থেকে খিড়া তুলে বর্ধনগাছা আড়তে আনছেন। ব্যবসায়ী ও কৃষকদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে খিড়ার সিজন শেষ হয়ে আসছে। আগাম আবাদের খিড়া গাছ থেকে আর তেমন ফলন না মেলায় বেশীর ভাগ কৃষক গাছ তুলে অন্য ফসলের আবাদে জমি তৈরী করছেন।
ব্যবসায়ী সেলিম মিয়া জানান, তিনি প্রতিদিন চরবর্ধনগাছা আড়তে বসে খিড়া কেনেন। সোমবার বিকেল অবধি দেশীয় ও হাইব্রিড দুই জাত মিলে একশো ত্রিশ মণ খিড়া কিনেছেন। তিনি কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনায় মোকামে খিড়া পাঠাবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী বলেন, খিড়া ও আলু ফসল মাঠ থেকে তোলা শেষের দিকে বলা চলে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।