ছবি: আপন দেশ
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলায় স্থানীয় বিরোধের জেরে ডাকা সালিসে দুই শিক্ষার্থীকে জুতাপেটা করা হয়েছে। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) বিকেলে উপজেলার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
রাজিবপুর থানার ওসি তসলিম উদ্দিন এবং ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ঘটনাটিকে নিজেদের অপরাধের শাস্তি বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে তাদের কোনও অভিযোগও নেই বলে জানিয়েছেন তারা।
এদিকে সালিসে দুই শিক্ষার্থীকে জুতাপেটার ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করে এ ঘটনাকে ‘সমন্বয়কদের জুতাপেটা’ করা হচ্ছে বলে দাবি করছেন কেউ কেউ। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী গতবছর এইচএসসি পরীক্ষায় পাশ করেছেন। তারা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু। তারা দুজন সহপাঠী এবং রাজিবপুর সদর ইউনিয়নের বাসিন্দা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তারা অংশ নিলেও বর্তমানে তারা সমন্বয়ক কিংবা অন্য কোনও পদে নেই। সালিসে এক শিক্ষার্থীর বড় ভাইকে কান ধরে উঠবস করানো হয় বলেও জানা গেছে।
সালিসে দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা ছাড়াও স্থানীয় বিএনপি ও যুবদলের একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। তবে জনসম্মুখে দুই শিক্ষার্থীকে জুতাপেটা করার বিষয়ে তারা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী বলেন, আমার বন্ধুর বড় ভাই স্থানীয় দোকানদার। তার সাঙ্গে পাশ্ববর্তী ধুলাউড়ি গ্রামের ফরমান নামে এক সেনা সদস্যের ব্যবসায়ীক লেনদেন নিয়ে ঝামেলা হয়। বড় ভাইয়ের দোকান হওয়ায় তাতে আমার বন্ধুও জড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার ওই সেনা সদস্যের সঙ্গে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়। বন্ধুর সাঙ্গে বিরোধ হওয়ায় আমিও সেখানে জড়িয়ে পড়ি।
তিনি আরও বলেন, আমরা জানতাম না ফরমান সেনা সদস্য। আঘাতে তিনি আহত হলে আইনি ব্যবস্থা নিতে চান। কিন্তু আমাদের অভিভাবকরা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করার উদ্যোগ নেন। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) স্কুল মাঠে সালিস হয়। সেখানে আমার বড় ভাই, আমাকে ও আমার বন্ধুকে জুতা দিয়ে মারেন। এটা অনেকটা পারিবারিক শাসনের মতো করে হয়েছে। এতে আমার কোনও অভিযোগ নেই। আমি মনে করি, অপরাধ করেছি। অবিভাবকরা আমাকে শাস্তি দিয়েছেন। এটা আমার প্রাপ্তি ছিল। শাস্তির বিষয়ে অনাপত্তি জানিয়ে বলেন সদ্য কলেজ পার করা এই শিক্ষার্থী।
সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে ফেসবুকে ভিডিও ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই শিক্ষার্থী বলেন, আন্দোলনে সামনের সারিতে ছিলাম। তবে গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে আমি ও আমার বন্ধু কেউই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত নেই। কিন্তু একটি মহল পারিবারিক এ সালিসের ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ দিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের ছেলেরা সমন্বয়ক ট্যাগ দিয়ে ফেসবুকে ভিডিও শেয়ার করছে। কিন্তু এ ঘটনার সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক নেই।
এ ব্যাপারে জানতে সেনাসদস্য ফরমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সংগঠক ও রাজিবপুরের বাসিন্দা রবিউল ইসলাম বলেন, দুই শিক্ষার্থীকে পারিবারিক সালিসে শাসন করে শাস্তি দেয়া হয়েছে। এটা দুই পক্ষের পারিবারিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু একটি মহল তাদেরকে সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে গুজব ছাড়াচ্ছে। ওই দুই শিক্ষার্থীর আমাদের সঙ্গে কোনও পর্যায়ে যুক্ত নেই।
রাজিবপুর থানার ওসি তসলিম উদ্দিন বলেন, স্থানীয় বাসিন্দা এক সেনা সদস্যের সঙ্গে বিবাদের কারণে পারিবারিকভাবে দুই শিক্ষার্থীকে শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে শুনেছি। এ নিয়ে কোনও পক্ষ থানায় অভিযোগ দেয়নি।
আপন দেশ/জেড
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।
