
ছবি: আপন দেশ
কুড়িগ্রামের চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে ব্রহ্মপুত্র নদে সারা বছর ড্রেজিংয়ের কথা বলা হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। একদিকে নাব্যতা সংকট যেমন কাটছে না, অন্যদিকে ড্রেজিংয়ের নামে সরকারকে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।
ব্রহ্মপুত্রের নাব্যতা সংকট নিরসনে গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর বিআইডব্লিউটিসি’র সে সময়কার চেয়ারম্যান ড. একেএম মতিউর রহমান নদ খননের তাগিদ দিলেও কর্ণপাত করেনি বিআইডব্লিউটিএ।
স্থানীয়রা বলছেন, নাব্যতা সংকট কাটাতে ব্যর্থ বিআইডব্লিউটিএ। নদী ড্রেজিংয়ে গাফিলতি এবং নৌকার মালিকদের সঙ্গে সিন্ডিকেটের কারণে এ অঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের ফেরি আলোর মুখ দেখছে না। এতে চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে যাতায়াতকারী মানুষ ও পরিবহন চালকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, চিলমারীর রমনা ঘাট থেকে রৌমারীর ফলুয়ার চর ঘাটের দূরত্ব প্রায় ২২ কিলোমিটার। দীর্ঘ এ নদী পথ পাড়ি দিতে নানা সংগ্রাম করতে হয় এ অঞ্চলের মানুষদের। কখনও চর হেঁটে বা কখনও নৌপথে। দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটিয়ে ২০২৩ সালের শেষের দিকে চিলমারী-রৌমারী নৌরুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
তবে এর সুফল বেশি দিন ভোগ করতে পারেনি এ অঞ্চলের মানুষ। নাব্যতা সংকটের অজুহাত দেখিয়ে বছরের বেশিরভাগ সময় বন্ধ থাকে ফেরি চলাচল। ফলে বাড়তি ভাড়াসহ নানা ভোগান্তির মধ্যে নৌকায় পারাপার করতে হচ্ছে নদীর দুপারের মানুষকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটি’র সঙ্গে নৌকার মালিকদের যোগসাজস রয়েছে। ফলে রহস্যজনক কারণে কচ্ছপ গতিতে তারা নদী ড্রেজিংয়ের কাজ করছেন। ফলে বাড়তি ভোগান্তির সঙ্গে পকেট ফাকা হচ্ছে নদী পারাপারকারী মানুষজনের। গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর থেকে নদীতে নাব্যতার সংকট ও ড্রেজিংয়ের কারণে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখে বিআইডব্লিটিএ। দেড় মাসে এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি তারা।
এদিকে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় বিআইডব্লিউটিসি প্রতি মাসে প্রায় ১২ লক্ষাধিক টাকা গচ্ছা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি ফেরি বন্ধ থাকায় ফেরির ইঞ্চিন ক্ষতির মুখে পড়ছে।
সরজমিনে আলম মিয়া, শাহাজামাল হোসেন, তোফাজ্জল হোসেনসহ কয়েকজন নৌকার যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তারা জানায়, ফেরি চালু হওয়ায় অনেক সুবিধা হতো। কিন্তু নৌকায় তো বড় সিন্ডিকেট। একটা মোটরসাইকেল নৌকায় ওঠাতে-নামাতে খরচ হয় ১২০। মোটরসাইকেলের ভাড়া দিতে হয় ১০০ টাকা। এছাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়া। এতো টাকা ভাড়া দিয়ে আমাদের পক্ষে নৌকায় যতায়াত করা অসম্ভব। ফেরি থাকলে ১০০ টাকাতেই হতো।
রংপুরের বাসচালক মোজাফফর হোসেন বলেন, সামান্য রাস্তা সংযোজন করে চিলমারী ফেরি ঘাটটি যদি ফকিরেরহাটে স্থানান্তর করা হয় তাহলে দূরত্ব কমে যাবে। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের অনেক বাস পরিবহন মালিক এ রুটে বাস পারাপার করতে আগ্রহী। এক্ষেত্রে দূরত্ব কম হলে এবং নেভিগেশনের (রাতে বাতি) ব্যবস্থার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক সার্ভিস চালু রাখলে গাড়ি পারাপারে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে।
বিআইডব্লিউটিসি চিলমারীর ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল চৌহান বলেন, গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে ফেরি কদম ও কুঞ্জলতা বন্ধ রয়েছে। এতে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে পরিবহন ও যাত্রীদের। দ্রুত ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হলে এ ভোগান্তি নিরসন করা সম্ভব হবে।
বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের পাঁচটি ড্রেজারের মধ্যে তিনটি ড্রেজার দিয়ে খননকাজ অব্যাহত রয়েছে। একদিকে খনন করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তবে কবে নাগাদ ফেরি চালু হবে এ বিষয়ে নিদিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
বিআইডব্লিউটিএ’র উপপরিচালক রবিউল ইসলাম বলেন, ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হলে নাইট নেভিগেশনের (বাতি) ব্যবস্থা চালু করা হবে।
আপন দেশ/এমএস
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।