
হাবিবুর রহমান বাপ্পি- আনেয়ার হোসেন কায়সার
ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিতে তাদের দোসররা এখনও বহাল তবিয়তে আছে। চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কার্যক্রম। চাঁদা দিতে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। যেখানে ভবন উঠছে, সেখানে চাঁদা দাবি করছে। কেউ অস্বীকার করলে হত্যার হুমকি দিচ্ছে।
বলছি, জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ আলম ডকইয়ার্ড এলাকায় তান্ডব চালানো নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দৌরাত্বের কথা। এ এলাকায় চাঁদা আদায়ে নেতৃত্বে দিচ্ছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি পিকআপ ড্রাইভার হাবিবুর রহমান বাপ্পী। সঙ্গে রয়েছে, তার দুই সহোদর ছাত্রলীগ নেতা মো. রাব্বী ও মো. রাকিব।
এ গ্যাংয়ের সঙ্গে আরও জড়িত আছে জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন কায়সারসহ অজ্ঞাত কয়েকজন। গ্যাংটি পুরো এলাকায় অর্ধকোটি টাকারও বেশি চাঁদা আদায় করেছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
গ্যাংটি ওই এলাকায় সাবা টাউয়ারের মালিক প্রবাসী মো. ইউনুছকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করেছে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ মাফিয়া চক্রটি শুধু চাঁদা নিয়ে থেমে থাকেনি। ওই ভবনের নিচতলায় আয়না ঘর বানিয়ে সাধারণ মানুষকে আটকে মারপিট করে চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, এসব সন্ত্রাসীরা শুধু চাঁদা আদায়ই করছে না, অনেক নারীকে শারীরিকভাবে নির্যাতনও করেছে। তবে সম্প্রতি আনোয়ার হোসেন কায়সারকে চট্টগ্রাম থেকে পুলিশ আটক করলেও গ্যাংটির সন্ত্রাসী কার্যক্রম এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। ফ্যাসিস্ট আমল থেকে এ পর্যন্ত গ্যাংটির অত্যাচারের শিকার হয়নি এমন লোক এ এলাকায় কম রয়েছে। তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ তটস্থ থাকে। ভয়ে কেউ খুলছে না মুখ। আবার যারা মুখ খোলার চেষ্টা করছে তাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দেয়া হচ্ছে।
তারা আরও জানায়, সারাদেশের ন্যায় রাঙ্গামটিতে ডেভিল হান্টের অভিযান শুরু হয়েছে। তবে কোনো এক অদৃশ্য কারণে গ্যাংটির লাগাম টানা যাচ্ছে না। এরা দিন দিন বেপেরোয়া হয়ে উঠছে। চাঁদাবাজির পাশাপাশি, স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের ইভটিজিং, প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি, সীমান্ত পথ ব্যবহার করে ভারতীয় সিগারেট বিক্রিসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে গ্যাংটি। গ্যাংটির নেতৃত্বে থাকা ছাত্রলীগ নেতা বাপ্পী মোটরসাইকেল চোর চক্রের অন্যতম সদস্য বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা ।
সন্ত্রাসী এ মাফিয়া গ্যাংয়ের নির্যাতনের শিকার মো. জাহাঙ্গীর বলেন, তিনি বনরূপা হর্টিকালচার সেন্টারে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। গত বছরের জুন মাসে তিনিসহ তার দুই সহকর্মীকে বাসায় ফেরার পথে সন্ত্রাসী বাপ্পীসহ গ্যাংয়ের সদস্যরা তাদের গতিরোধ করে পাহাড়ি চোলাই মদ দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন। এমনকি সন্ত্রাসীরা তাদের ধরে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। না দিলে হত্যার হুমকি দেয়।
তিনি আরও বলেন, আটক থাকা অবস্থায় আমার স্ত্রীকে ফোন দিতে বলে সন্ত্রাসীরা। পরে আমার স্ত্রী আমাকে বাঁচাতে জমি বন্ধক রেখে ৪ লাখ দিলে সন্ত্রাসীরা আমাদের তিনজনকে মুক্তি দেয়। ওই ঘটনায় গত ১৭ফেব্রুয়ারি চক্রটির বিরুদ্ধে রাঙ্গামাটি কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। আশা করছি, সঠিক বিচার পাবো।
ভুক্তভোগী রং মিস্ত্রী আকতার হোসেন বলেন, আমি একটি ভবনে রংয়ের কাজ করার সময় সন্ত্রাসী রাব্বি এসে আমাকে কাজ করতে নিষেধ করে। সে বলে তোর বাড়ির মালিকের সঙ্গে আমাদের বোঝাপড়া আছে। তিনি আমাদের পাঁচ লাখ টাকা দিলে কাজ চলবে।
আরেক ভুক্তভোগী মো. করিম বলেন, সন্ত্রাসী বাপ্পীর ছোট ভাই ছাত্রলীগ নেতা রাকিব এবং কাউসার আমার নির্মিত ভবনের ৬ মিস্ত্রিকে তুলে নিয়ে এসে তাদের আয়না ঘরে ব্যাপক মারধর করে। তাদের মোবাইলও ছিনিয়ে নেয়। আমি খবর পেয়ে এসে তাদের গ্যাং লিডার বাপ্পীকে জানায়। কিন্তু কোনো বিচার পায়নি। উল্টো আমার নির্মাণ শ্রমিকদের বলে আসে তাদের যেন ত্রিশ হাজার টাকা চাঁদা দেয়।
এছাড়া একাধিক ভুক্তভোগীরা জানান, এ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ গ্যাংয়ের অত্যাচারে এলাকায় থাকাই দুস্কর হয়ে গেছে। তাদের আতঙ্কে আমরা সব সময় তটস্থ থাকি। এসব চাঁদাবাজদের এখনই প্রতিহত করতে হবে। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে আন্দোলনের পাশাপাশি অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।
রাঙ্গামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মারুফ আহমেদ বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার জন্য বিশেষ অভিযান চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় জেলা পুলিশ কর্তৃক এ অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে এবং নিয়মিত মামলা দায়ের করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলে আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।
আপন দেশ/এমএস
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।