Apan Desh | আপন দেশ

চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৫

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২২:২৯, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ১৫

ছবি: আপন দেশ

পাবনার নগরবাড়ি ঘাট এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়ে স্থানীয় বিএনপি সমর্থিত দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে বেড়া উপজেলা যুবদলের আহবায়কসহ উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে গুরুতর আহত ৪ জনকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বেড়া উপজেলার নগরবাড়ি ঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সংঘর্ষের সঙ্গে যুক্ত দুটি গ্রুপের মধ্যে একজন হলেন বেড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিন্টু, অন্যজন হলেন বেড়া উপজেলা যুবদলের আহবায়ক রাজ্জাক ফকির।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ সংঘর্ষের পেছনে নগরবাড়ি ঘাটের ইজারা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ইজারাদারদের মধ্যে একপক্ষের নেতা এম এ আব্দুল গনি ফকির ও অন্যপক্ষের নেতা শরিফুল ইসলাম মিন্টু। গনি ফকির সাবেক সাংসদ একেএম সেলিম রেজা হাবিবের সমর্থক। আর মিন্টু সমর্থক এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী হাসান জাফির তুহিন।

এছাড়া নগরবাড়ি ঘাটে শ্রমিকদের একটি অলিখিত সমিতি বা ‘দালাল সমিতি’ রয়েছে। যারা ট্রাক প্রতি চাঁদা আদায় করে থাকে। ছয় চাকার ট্রাক ৩১০ টাকা, দশ চাকার ট্রাক ৪১০ টাকা করে চাঁদা নেন শ্রমিকরা। এ চাঁদার টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিছুদিন ধরে উত্তেজনা চলছিল। যা আজ সকালে সংঘর্ষে রূপ নেয়। 

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গণি ফকিরের ভাতিজা ও বেড়া উপজেলা যুবদলের আহবায়ক রাজ্জাক ফকির বলেন, নগরবাড়ি ঘাটে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছিলেন তাদের কর্মী কোবাদ হোসেন। আজ সকালে স্থানীয় বিএনপি নেতা শরিফুল ইসলাম মিন্টু ও মফির নেতৃত্বে তাদের সমর্থকেরা ওই দোকানটি দখল করতে গেলে তারা বাধা দেন। এতে সংঘর্ষ শুরু হয়।

আরও পড়ুন>>>কৃষকদল নেতাকে পেটালেন বিএনপি নেতা

রাজ্জাক ফকির অভিযোগ করেন, শরিফুল ইসলাম মিন্টু আগে আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মিশে নগরবাড়ি ঘাটের সুফল ভোগ করেছেন। ৫ আগস্টের পর নতুন করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, মিন্টু বালু কাটা, চর দখল, লুটপাট ও চাঁদাবাজির সাথে জড়িত। মালিক সমিতির নাম ব্যবহার করে তিনি শ্রমিকদের মাধ্যমে ট্রাক প্রতি চাঁদাবাজি শুরু করেছেন। যা প্রতিহত করতে গিয়ে তারা হামলার শিকার হয়েছেন।

আহত কোবাদ হোসেন বলেন, নগরবাড়ি ঘাটে স্থানীয় এক মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সুষমা রায়ের দোকান কিনেছি ২ লাখ টাকায়। এর মধ্যে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছি, বাকি ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করব। তবে আজকে শুনি, শরিফুল ইসলাম মিন্টু ও মফি আগে ওই দোকান কিনেছে। আজ হঠাৎ করেই তারা আমার দোকান দখল করতে হামলা চালায়। এতে সংঘর্ষ বাঁধে।

আরও পড়ুন>>>ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ এলাকার মানুষ

বেড়া উপজেলা বিএনপির সাবেক অর্থ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিন্টু তার বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, তাদের সব অভিযোগ মিথ্যা। বরং শ্রমিক সমিতি বা দালাল সমিতির কাছে রাজ্জাক ফকির গ্রুপ চাঁদার ভাগ চাইলে শ্রমিকরা দিতে অস্বীকার করে। এছাড়া, তারা শ্রমিকদের মধ্যে জোর করে তাদের লোকজন ঢুকাতে চেয়েছিল। এ নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সকালে তারা অস্ত্র নিয়ে শ্রমিকদের উপর হামলা চালায়। তখন শ্রমিকরা একজোট হয়ে নিজেদের লোকজন নিয়ে তাদের প্রতিহত করলে সংঘর্ষ বাঁধে। আর আমি ঘটনার সময় বাড়িতে ছিলাম। খবর পেয়ে দ্রুত সেখানে গিয়ে সংঘর্ষ থামিয়ে দেই।

কথিত দালাল সমিতির কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মুলত মারামারি হয়েছে ঘাট কেন্দ্রিক ঝামেলা। দালাল সমিতির যে পয়সাটা ওঠে, সে টাকা নিয়ে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। একজন বলছে আমাকে ২০ ভাগ দাও, আরেকজন বলছে আমাকে ৩০ ভাগ দাও। এইটাই মূল কাহিনী। দালাল সমিতির শ্রমিক সংখ্যা ৫০ থেকে ৫২ জন।

আমিনপুর থানার ওসি সৈয়দ আলমগীর হোসেন জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শুনেছি, একটা দোকান দখল নিয়ে ঝামেলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়