
মঞ্জুরুল ইসলাম সুমন
জামালপুরে হামলা ভাংচুর ও লুটপাট থেকে রেহায় পায়নি ইউএনও পরিবারও। হামলার শিকার পরিবারটি নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছেন। ওই হামলার নেতৃত্বে ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম সুমন। মামলার চারদিন হলেও আসামি গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এদিকে প্রভাবশালী আসামিরা প্রকাশ্য ঘুরছে। প্রাণনাশসহ ইউএনও'র বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে সন্ত্রাসীরা।
স্ত্রীর ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন ইউএনও ইমদাদুল হক তালুকদার। তিনি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। জামালপুর প্রশাসন ও বিএনপির নেতাদের বিষয়টি জানিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেনা তিনি।
জানা গেছে,গত বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) শহরের রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন শাহপুর এলাকায় ইউএনও'র বাড়িতে লাঠি সোঠাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। জমি বেদখল দিয়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতা আরিফুল আলম চিকু ও তার লোকজন বাড়িঘর ভাঙচুর করে জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণ শুরু করেন। নেতৃত্বে ছিলেন সুমন। এসময় ইউএনওর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যা থানায় অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে আরিফুল আলম চিকুকে আটক করে। পরে তাকে ভ্যানে উঠিয়ে থানায় নিয়ে আসতে চাইলে চিকুর মামাতো ভাই জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মনজুরুল করিম সুমন লোকজন নিয়ে চিকুকে ছিনিয়ে নেয়। তখন সুমন জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যাকে গলাচেপে ধরে মেরে ফেলার হুমকি দেন। অকথ্যভাষায় গালমন্দ করেন। পরে নিরাপত্তার স্বার্থে ওইদিন পুলিশ তাদের গাড়ি করে বন্যাকে অন্যত্র সরিয়ে নেন।
ঘটনার দিন ১২ মার্চ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যা বাদী হয়ে জামালপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করতে যান। কিন্ত মামলা নেয়নি পুলিশ। ঘটনার পরদিন (১৩ মার্চ) ব্যাক ডেটে মামলা আমলে নেয় ওসি আবু ফয়সল মোহাম্নদ আতিক।
আরও পড়ুন<<>> চাঁদাবাজি-দখলবাজি করলে কেউ ছাড় পাবে না: টুকু
মামলার আসামিরা হলেন-যুবলীগ কর্মী আরিফুল ইসলাম চিকু, ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিন, জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম সুমন ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি রাজুসহ ৩০/৩৫ জন অজ্ঞাত।
বাদী জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যা বলেন, জেলা ছাত্রাল নেতা মঞ্জুরুল করিম সুমনের নেতৃত্বে ও যুবলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম চিকুসহ ভুমিদস্যুরা জমি দখল করতে যায়। বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাটের সময় আমার উপরও হামলার চেষ্টাকালে আমার হাতব্যাগ ও কানের দুল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে দেয়াল নির্মান করে। ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে আরিফুল ইসলাম চিকুকে গ্রেফতার করে পিকআপ ভ্যানে তুলতে গেলে ছাত্রদল নেতা সুমনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে জামালপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আসামিরা আমার বাড়ীঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিচ্ছে। আমাকে প্রাণনাশেরও হুমকি দিয়েছে। আমি জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। দ্রুত আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ প্রশাসনের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
জামালপুর সদর থানার ওসি আবু ফয়সল মো. আতিক বলেন, জমি নিয়ে মারামারির ঘটনায় থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
এ প্রসঙ্গে মনজুরুল করিম সুমন বলেন, বন্যার প্লটের সঙ্গে আমার ফুফাতো ভাই চিকু ৭/৮ বছর আগে এক দশমিক ৩৭ পয়েন্ট জমি ক্রয় করে স্থানীয় হীরার কাছ থেকে। জমি নিয়ে চিকু এবং বন্যার মধ্যে বিভেদ চলছিল। ঘটনার দিন আমি বিচারকের ভূমিকায় ছিলাম। তবে পুলিশ এসে চিকুকে আটক করলে স্থানীয়রা তাকে ছিনিয়ে নেয়। আমি শুধু দাঁড়িয়ে ছিলাম। মামলায় বন্যা যে অভিযোগ করেছে তা সত্য নয়।
ইউএনওর পরিবারের জমি দখল ও পুলিশের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া আরিফুল হক চিকু যুবলীগ কর্মী। তার বিরুদ্ধে দাদন ব্যবসা, ষ্টেশন সংলগ্ন আবাসিক হোটেল খুলে যৌনকর্মী রেখে দেহ ব্যবসা, চুরি ছিনতাইসহ নানা অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার ভাই রাজু জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি, আরেক ভাই রবিন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, তার মরহুম মাতা ওয়ার্ড মহিলা লীগের সভানেত্রী ছিলেন। মামাতো ভাই জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম সুমনের শেল্টারে জমি দখলসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।