
ছবি: আপন দেশ
নোয়াখালী হাতিয়া তমরদ্দি লঞ্চঘাট বিএনপির বহিস্কৃত যুগ্ম-আহবায়ক আলমগীর কবিরের যোগসাজশে সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ঠদের দখলে থাকার অভিযোগ উঠেছে। ঘাট দখলে থাকা আওয়ামী লীগ নেতারা হাতিয়ার সাবেক এমপি ফ্যাস্টিটের দোসর মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে পরিচিত।
সোমবার (১৭ মার্চ) বিকেলে ঘাট দখলের অভিযোগ এনে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হারুন অর রশীদ আজাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন তমরদ্দি ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি মো.রুবেল মাহমুদসহ দলটির তিন নেতা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তমরুদ্দি লঞ্চঘাটের ইজারাদার সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মাওলা কাজল। ৫ আগস্টের পর উপজেলা বিএনপি বহিস্কৃত যুগ্ম-আহবায়ক আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে তমরদ্দি ঘাটের সকল কর্মকাণ্ড দখল করে নেন। পরবর্তীতে ইজারাদার গোলাম মাওলা কাজলের সঙ্গে আলমগীর সমঝোতা করেন। নেপথ্যে ছিলেন তমরদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলা উদ্দিন বাবু। তখন থেকে আলাউদ্দিন বাবু ও আলমগীর ঘাটের দায়িত্ব নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। ঘাটের প্রতিদিনের রোজগার বাবু, আলমগীর ও কাজলের প্রতিনিধিরা বসে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়।
স্থানীয়রা জানায়, আলাউদ্দিন বাবু এক সময় বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান ছিল। ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে তিনি চেয়ারম্যান পদে পরাজিত হন। এরপর তিনি ২০১৬-২০২৪ সাল পর্যন্ত সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর হাত ধরে তমরদ্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ওই সময় তিনি আওয়ামী লীগের ব্যানারে স্থানীয় বিএনপি-জামাতের নেতাকর্মিদের নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করেন। আওয়ামী লীগের হয়ে ভোট কেন্দ্র দখলে ছিলেন সামনের সারিতে। কিন্ত গত ৫ আগস্টের পর তিনি আবার রাতারাতি বিএনপি বনে যান।
কৃষকদল নেতা রুবেলের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ২২ আগস্ট আলাউদ্দিন বাবুর নির্দেশে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ৮-১০বার হামলা করা হয়। এতে আমার ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনা বিএনপির ভেরিফাইড ফেসবুকসহ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে বর্ণনা করেন। ৫ আগস্টের পর আলাউদ্দিন বাবু,তার ছোট ভাই আফসার উদ্দিন জিয়া ও আলমগীর কবির একত্রিত হয়ে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দিয়ে তমরদ্দি লঞ্চঘাট দখল করে এবং পুরো ইউনিয়নে চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়। যার ভুক্তভোগী আমি নিজেও। আমার থেকে ৩০ হাজার টাকা নেয় ঘাটে চাকরি দেয়ার কথা বলে। পরে জানতে পারি তারা এভাবে আরও ২০-৩০ জনের থেকে টাকা নিয়েছে।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, তমরদ্দি ঘাটে এখনো বিএনপি নেতাকর্মীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে। শুধু তাই না, তমরদ্দি, চর আতাউরে ধান চাষিদের কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়েছে। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করায় এবং আমার পাওনা টাকা চাওয়ায় প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়। একই সঙ্গে দুটি মামলার আসামি করা হয়। ওই সব মামলার বাদী স্থানীয় যুবলীগ ও শ্রমিক লীগের কর্মী।
জানা যায়, গত ২৭ ফেব্রুযারি হাতিয়া তমরদ্দি লঞ্চ ঘাটে মালামালের অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করায় দুই বোন আকলিমা বেগম (৩৩) ও নাসিমা বেগমকে (৩০) পিটিয়ে আহত করা হয়। এই ঘটনায় আহতদের মধ্যে আকলিমা বেগম বদেী হয়ে হাতিয়া থানায় আলমগীর কবির ও কাজলের নাম উল্লেখ করে ২৫জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
আরওপড়ুন<<>>সন্তানের আশায় কবিরাজের কাছে গিয়ে ধর্ষণের শিকার
এসব অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহবায়ক (বহিষ্কৃত) আলমগীর কবির বলেন, আমাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়নি, অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা আমাকে হাতিয়াতে তার সঙ্গে রাজনীতি করতে ডেকেছে। আমি না যাওয়ায় তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে আমাকে দুবার শোকজ করে। এরপর পদ থেকে অব্যাহতি দেয়। যারা আমার বিরুদ্ধে জেলা বিএনপির কাছে লিখিত অভিযোগ দেয় তারা সবাই একাধিক মামলার আসামি। তারাই ৫ আগস্টের পর ঘাট দখলের জন্য হামলা চালায়। যোগাযোগ করা হলে আলাউদ্দিন বাবু ফোন রিসিভ করেনি।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক খোকন বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। আলমগীরকে কমিটি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যারাই চাঁদাবাজি করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কোনো চাঁদাবাজকে রাখা হবেনা।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব হারুন অর রশীদ আজাদ বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তবে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে।
হাতিয়া থানার ওসির দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) খোরশেদ আলম বলেন, জিয়াকে অপারেশন ডেভিল হ্যান্টে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়ছে। অপরদিকে, ঘাট নিয়ে মারামারির ঘটনায় দুপক্ষই মামলা দায়ের করেন।
আপন দেশ/এমএস
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।