Apan Desh | আপন দেশ

ঈদের ছুটিতে গারো পাহাড়ে ছুটছেন দর্শনার্থীরা

মালেক মল্লিক, শেরপুর থেকে ফিরে

প্রকাশিত: ১৪:১৭, ৪ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ২২:০৩, ৪ এপ্রিল ২০২৫

ঈদের ছুটিতে গারো পাহাড়ে ছুটছেন দর্শনার্থীরা

ছবি : আপন দেশ

ঈদের ছুটিতে শেরপুরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। জেলার সীমান্তজুড়ে বিস্তৃত গারো পাহাড়ের লুকোচুরি ও নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতেই এ ভিড়। কর্মজীবনের নানা ব্যস্ততা ও শহরের যান্ত্রিক কোলাহল ভুলে গারো পাহাড়ের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজারো মানুষ। 

এবার সবচেয়ে বেশি এসেছেন ভারতের মেঘালয় ঘেঁষা ঝিনাইগাতী উপজেলার গজনী অবকাশ কেন্দ্রে। কেউ আসছেন পরিবার নিয়ে, কেউ আসছেন একা আবার কেউ আসছেন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে দল বেঁধে। টানা ৪ দিন এমনই চিত্র দেখা গেছে। সবুজের হাতছানি পেতে ছুটে আসছেন অসংখ্য মানুষ। এদিকে পর্যটন কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে  জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি গারো পাহাড়ের গজনী এলাকাটি ব্রিটিশ আমল থেকেই পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিত। প্রায় ২০০ ফুট উঁচু টিলায় নির্মাণ করা হয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট অবকাশ ভবন। এটি পর্যটকদের জন্য রেস্ট হাউস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সমতল ভূমি থেকে অবকাশ ভবনে ওঠানামা করার জন্য পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে আকর্ষণীয় আঁকাবাঁকা ‘পদ্মসিঁড়ি’। আছে পাতালপুরী, মৎস্যকন্যা, ভাসমান সেতু, গারো মা ভিলেজ, ডাইনোসরের প্রতিকৃতি, ড্রাগন টানেল, দন্ডায়মান জিরাফ, পদ্মসিঁড়ি, লেক ভিউ পেন্টাগন কৃত্রিম জলপ্রপাত, কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিফলক, ঝলন্ত ব্রিজ, হাতিসহ বিভিন্ন প্রাণীর ভাস্কর্য। 

প্রাকৃতিক  সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আকাশচুম্বী সাইট ভিউ টাওয়ার। এখানে উঠলে চোখে পড়বে ভারতের  মেঘালয় রাজ্যের সুউচ্চ পর্বতরাশি। সবুজে সবুজে ভরা পাহাড়। পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। পড়ন্ত বিকেলে ছোট ছোট নৌকায় করে বেড়ানোর জন্য রয়েছে লেক। 

বোট ক্লাব বাড়তি আকর্ষণ: গারো মা ভিলেজেও ছোঁয়া লেগেছে নতুনত্বের। মাশরুম ছাতার নীচে বসে বা পাখি বেঞ্চে বসে পাহাড়ের ঢালে আদিবাসীদের জীবনযাত্রা, দিগন্ত  জোড়া ধানক্ষেত আর পাহাড়ি জনপদের ভিন্ন জীবনমান উপভোগ করা যায় খুব সহজেই। আগত শিশু দর্শণার্থীর জন্য চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্কের পাশাপাশি এবার নতুন যুক্ত হয়েছে শিশু কর্ণার। রয়েছে লাভ সেল্ফি ও সেল্ফি ব্রিজ। লেকের ওপর দিয়ে বানানো হয়েছে ভাসমান সেতু। এবার সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে গজনী বোট ক্লাবে। এখানে বোটে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর জন্যেও পর্যটকদের দীর্ঘ লাইন।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিপুলসংখ্যক পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসু মানুষ গজনী অবকাশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে, বেড়াচ্ছেন। কেউ সেলফি তুলছেন। আবার  কেউবা প্রিয়জনের ছবি মুঠোফোনে ক্যামেরাবন্দি করছেন। বিশেষ করে ঝুলন্ত ব্রিজ, ভাসমান সেতু, ওয়াটার পার্ক ও গারো মা ভিলেজ কর্নারে দর্শনার্থীদের অনেক ভিড় ছিল। অনেকে আবার অবকাশের লেকে প্যাডেল বোটে চড়ে আনন্দ উপভোগ করছেন। অবকাশের ‘চুকোলুপি’ শিশুপার্কের বিভিন্ন রাইডে চড়ে ও খোলামেলা পরিবেশ পেয়ে শিশুরাও আনন্দে মেতে ওঠে। এক কথায় গজনী অবকাশ কেন্দ্র এখন বিপুলসংখ্যক পর্যটক আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত।

মধুটিলা ইকোপার্ক: শেরপুরের সীমান্তের এপার-ওপারের পাহাড়গুলোর লুকুচুরি খেলাতো আছেই। নালিতাবাড়ি উপজেলার বন বিভাগ গড়ে তুলেছে মধুটিলা ইকোপার্ক নামে পর্যটন কেন্দ্র। এখানেও রয়েছে ওয়াচ টাউয়ার, পেডেল বোর্ডসহ বিভিন্ন রাইডসঈদের দিন থেকে দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত গারো পাহাড় অঞ্চল। নতুন নতুন রাইডস আর পাহাড়ের সবুজের হাতছানি পেতে ছুটে আসছেন অসংখ্য দর্শনার্থীরা। দর্শনার্থীরা বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে ভিড় করছেন পর্যটন কেন্দ্রে। বাস, ট্রাক, মিনিবাস, লেগুনা, অটোরিকশা, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলে করে আসতে দেখা যায় তাদের। যানবাহনগুলোর মধ্যে অটোরিকশা, মোটরসাইকেল ও লেগুনার সংখ্যাই অনেক বেশি।

শেরপুর জেলার শ্রীবরদী উপজেলার বাসিন্দা আবু কাওছার আকন্দ। তিনি পেশার একজন ব্যাংকার। তিনি জানালেন, ঈদের ছুটিতে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসছি। সঙ্গে রয়েছে ছেলে রুআইফি, ভাতিজা সানাউল্লাহ এক মেয়ে। তিনি বলেন, ঈদের আনন্দতো শিশুদের বেশি। তাই ছেলে মেয়ে ও ভাতিজাকে নিয়ে এলাম। শিশু পার্কে অনেক ভিড়। একেকটা রাইডে উঠতে প্রচুর সময় চলে যাচ্ছে। তারপরও ছেলে মেয়েরা আনন্দ পাচ্ছে। তাতেই আমি খুশি।ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পোল্যন্ড প্রবাসী সাদ্দাম দেশে এসেছেন। ঈদ উদযাপনের অংশ হিসেবে সপরিবারে ঢাকা থেকে গজনী অবকাশে বেড়াতে এসেছেন। তিনি বলেন, এখানে বেড়াতে এসে চমৎকার লাগছে। গারো পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়েছি। জামালপুর থেকে আসা নজরুল ইসলাম বলেন, পরিবারের সবাইকে নিয়ে গজনী অবকাশে বেড়াতে এসেছেন। গারো পাহাড়ের সৌন্দর্য  দেখে খুব আনন্দ লাগছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী নাবিল বলেন, কয়েক মাস আগে গজনী অবকাশ সম্পর্কে ধারণা পেয়েছিলাম। তখন থেকেই ইচ্ছে ছিল সেখানে বেড়াতে যাব। আর এবার ঈদের ছুটি পেয়ে গজনী অবকাশ কেন্দ্রে বেড়াতে এসেছি। ভীষণ ভাল লাগছে। পাহাড় আর বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষরাজি দেখে নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি। স্বজনদের সঙ্গে ছবি তুলেছি, আনন্দও করছি।

অবকাশ পর্যটন কেন্দ্র ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ঈদে পর্যটকের সংখ্যা বেড়েছে। ঈদের দিন থেকে পর্যটকেরা বেড়াতে আসছেন। ভালো বেচাকেনা হচ্ছে। আশা করা যায়, শনিবার পর্যন্ত দর্শনার্থীদের সমাগম অব্যাহত থাকবে। তিনি আরো বলেন, এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের রাত যাপনের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবকাশ  কেন্দ্রের নিকটবর্তী স্থানে হোটেল- মোটেল স্থাপন করা হলে এটি পর্যটকদের কাছে আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। 

শেরপুর পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, এবার ঈদে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মানুষ ভিড় করছে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে। এর জন্যই দর্শনার্থীদের নিরাপদ ঘোরাফেরার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি টহল পুলিশের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে।

শেরপুর জেলা প্রশাসক তরফদার মাহমুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য গজনী অবকাশ কেন্দ্রের উন্নয়ন কাজ অব্যাহত আছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ পর্যটন উন্নয়ন কর্পোরেশনের মাধ্যমে অবকাশ কেন্দ্রের অদূরে হোটেলসহ রিসোর্ট নির্মাণের কাজও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। 

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়