Apan Desh | আপন দেশ

হাদিয়া না দেয়ায় শিবিরকর্মীদের মারধরের শিকার ব্যাংক কর্মকর্তা 

নরসিংদী প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:৪২, ৮ এপ্রিল ২০২৫

আপডেট: ১৩:৩২, ৮ এপ্রিল ২০২৫

হাদিয়া না দেয়ায় শিবিরকর্মীদের মারধরের শিকার ব্যাংক কর্মকর্তা 

ছবি : আপন দেশ

নরসিংদীর মাধবদীতে ঈদুল ফিতরের হাদিয়া না দেয়ায় ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে প্রকাশ্যে মারধর করার অভিযোগে উঠেছে স্থানীয় ছাত্রশিবিরের কর্মীদের বিরুদ্ধে। সোমবার (৭ মার্চ) সকাল পৌনে ১০টায় উপজেলার মাধবদী পৌরসভার ইসলামী ব্যাংকের শাখা সংলগ্ন একটি গলিতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার সহকর্মীদের দাবি, হামলাকারীরা ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মী এবং স্থানীয় এক জামায়াত নেতার অনুসারী। 

মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নজরুল ইসলাম ঘটনার সত্যথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এরই মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ভুক্তভোগী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদীতে ঈদের আগে দলীয় হাদিয়া (এয়ানত) না পেয়ে ইসলামী ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে সড়কে ফেলে মারধর করা হয়। আহত ব্যাংক কর্মকর্তার নাম মো. সেলিম মিয়া (৪৩), যিনি ১৬ বছর ধরে ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করছেন। তিনি মাধবদী পৌর শাখায় বিনিয়োগ বিভাগের (লোন সেকশন) প্রধান। শাখাটিতে তিনি পাঁচ মাস ধরে কর্মরত রয়েছেন। মারধরের শিকার সেলিম মিয়া বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মাধবদী পৌর শাখার একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ২৭ মার্চ সকালে ওই ব্যাংকে ছাত্রশিবিরের ৯ থেকে ১০ জন কর্মী চাঁদা নিতে আসেন। ঈদের আগমুহূর্ত হওয়ায় ওই দিন ভিড় ছিল ব্যাংকে। এ সময় ভিড় ঠেলেই হাদিয়া (চাঁদা) তুলতে শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে তারা মো. সেলিম মিয়ার ডেস্কে গেলে তিনি তাদের বলেন, আপনারা এভাবে কালেকশন না করে এক জায়গায় বসেন। এ সময় তিনি একজন কর্মকর্তাকে হাদিয়া তুলে দেয়ার দায়িত্ব দেন। বিষয়টি শিবিরকর্মীদের পছন্দ হয়নি।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ওই দিন বিকেলেই মাধবদী পৌর জামায়াতের আমীর আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে শিবিরের নেতা–কর্মীরা আবার ব্যাংকে আসেন। এ সময় ওই জামায়াত নেতা শাখার ব্যবস্থাপক (ম্যানেজার) আবু সাঈদকে বলেন, তার কক্ষে যেন সেলিম মিয়াকে ডেকে আনা হয়। ব্যবস্থাপকের কক্ষে ঢোকার পর কোনো কিছু না শোনেই তারা সেলিম মিয়াকে আক্রমণ করে কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে সেলিম মিয়ার হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দেন তারা। যদিও এ সময় প্রতিবাদ করেন শাখা ব্যবস্থাপক।

এ ঘটনার জের ধরেই হামলার শিকার হয়েছেন বলে দাবি সেলিম মিয়ার। ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি জানান, ওই দিন হুমকি দেয়া শিবিরের ১০ থেকে ১২ জন নেতা–কর্মী তার পথ রোধ করেন এবং টেনেহিঁচড়ে পাশের গলিতে নিয়ে যান। সেখানে তাকে উপর্যুপরি কিলঘুষি, লাথি ও লাঠির আঘাত করতে থাকেন তারা। কয়েক ব্যক্তি দূরে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখলেও তারা এগিয়ে আসেননি। একপর্যায়ে চিৎকার শুনে দুজন সহকর্মী এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যান।

এরপর সেলিম মিয়াকে উদ্ধার করে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। এখন নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে তার চিকিৎসা চলছে। সেলিম মিয়া জানান, হামলাকারীরা প্রায়ই চাঁদা তুলতে আসেন। তাই নাম জানা না থাকলেও তাদের চেনেন। তিনি বলেন, দুজন সহকর্মী এগিয়ে না এলে আজ কী হতো, জানি না।

নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফাতিমা আক্তার জানান, শরীরের বিভিন্ন অংশে মারধরের শিকার ওই ব্যাংক কর্মকর্তার চিকিৎসা চলছে। বেশ কিছু প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এসব পরীক্ষার ফলাফল দেখে বোঝা যাবে আঘাতের মাত্রা কতটা।

শিবিরের নেতা–কর্মীরা হাদিয়া না পেয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে জানান ব্যাংকটির শাখা ব্যবস্থাপক আবু সাঈদ। তিনি বলেন, সম্প্রতি তিনজন জামায়াত নেতাসহ অন্তত ৪০ জনের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির মামলা করায় তারা ক্ষুব্ধ ছিলেন। বিষয়টি হেড অফিস ও জোনাল অফিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এবং থানা জামায়াতের আমীরকে জানানো হয়েছিল। সব জায়গা থেকেই বলা হয়েছিল, ঈদের ছুটি শেষে বিষয়টি তারা দেখবেন। এর মধ্যেই এমন ঘটনা ঘটে গেল। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।

এ বিষয়ে মাধবদী পৌর জামায়াতের আমীর আমিনুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নজরে আনা হলে মাধবদী থানা জামায়াতের আমীর জাফরুল্লাহ খান বলেন, আজ (সোমবার) সকাল থেকেই গাজার ঘটনার প্রতিবাদ নিয়ে আমরা ব্যস্ত ছিলাম। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে শুনেই ব্যাংকে গিয়েছি। বিষয়টি আগে আমাদের জানা ছিল না। বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধান করব আমরা।

এ ঘটনায় ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে জানিয়ে মাধবদী থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান, এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ভুক্তভোগী কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়