Apan Desh | আপন দেশ

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে তিন শতাধিক বসতভিটা বিলীন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:৪৪, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে তিন শতাধিক বসতভিটা বিলীন

ছবি : আপন দেশ

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে অসময়ে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ১০ দিনে বিলীন হয়েছে সাতটি বসতভিটা, শতাধিক বিঘা ফসলি জমিসহ গ্রামীণ সড়ক। এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে রসুলপুর মারকাজ জামে মসজিদ, রসুলপুর আলহাজ রোস্তম আলী নূরানি হাফেজিয়া মাদ্রাসা, রসুলপুর ঈদগাহ মাঠ, বেগম নুরুন্নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, অসংখ্য ফসলি জমিসহ শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের মুখে।

সম্প্রতি কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের রসুলপুর এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়ায় অসময়ে দেখা দিয়েছে ভাঙন। অনেকের বসতভিটা ও ফসলি জমি নদে গর্ভী বিলীন হয়ে গেছে। গত কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনের শিকার হচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ। বছরের পর বছর ভাঙনে বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন অনেকে। ভাঙনের হুমকিতে থাকা পরিবারগুলো তাদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে।

স্থানীয়রা জানায়, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে গত দশ দিনে ইউনিয়নের রসুলপুরের দক্ষিণের সাতটি বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এছাড়াও রসুলপুর পশ্চিম পার্শ্ব মিলে এক মাসে ওই এলাকার ৭০-৮০টি বসতবাভিটা নদী গর্ভে চলে গেছে। তাছাড়া দুই বছর ধরে থেমে থেমে ভাঙছে ইউনিয়নের রসুলপুর সহ ভোগলেরকুটি, সরকার পাড়া, কবিরাজ পাড়া ও মুছল্লী পাড়া এলাকা। এতে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে ইউনিয়নের মানচিত্র। এখন পর্যন্ত এসব গ্রামের তিন শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের হুমকিতে থাকা পরিবারগুলো ভাঙন আতঙ্ক নিয়ে রাত্রি যাপন করছেন। গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় বিচ্ছিন্নের পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ভাঙনের মুখে রয়েছে একটি মাদরাসা, একটি মসজিদ ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পরার আশঙ্কায় স্থানীয়রা। এলাকাবাসীর দাবী সরকারীভাবে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে নদীগর্ভে পুরোপুরি বিলীন হতে পারে এসব গ্রাম।

ভুক্তভোগী গৃহবধূ জমেলা খাতুন বলেন, এখানে একটি দোকান ও একটি ধান ভাঙ্গা মিল ছিল আমাদের। যা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে আমাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সন্তানদের ভরণপোষণ ও লেখাপড়ার খরচ চালাতে বিপাকে পড়ছি আমরা। ভাঙ্গন আতঙ্কে আমাদের ঘুম হারাম হয়েছে। নদী ভাঙ্গনে না জানি আমাদের গ্রামটি কখন বিলীন হয়ে যায়।

রসুলপুরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক জেলহক বলেন, এখানে আমাদের ৬০ বছরের বসতি ছিল।  যা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। গাছপালাও রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। গ্রামের পর গ্রাম বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে সবকিছু শেষ হয়ে যাবে।

আলহাজ রোস্তম আলী নুরানী মাদরাসার শিক্ষক নাজমুল আহসান বলেন, রসুলপুর মারকাজ মসজিদ ও রসুলপুর নূরানী মাদ্রাসা অত্র এলাকার একমাত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে ২০০ শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে। এ প্রতিষ্ঠান দুটি ভাঙনের মুখে রয়েছে। যা ভেঙে গেলে এ এলাকার  শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা থেকে ছিটকে পড়বে। তাই নদী ভাঙ্গন রোধে দ্রুত সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ বাবলু মিয়া বলেন, বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন ব্রহ্মপুত্রসহ তিনটি নদী দ্বারা বেষ্টিত। নদী গুলোর ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে ভাঙ্গন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙ্গনের গতি দিনে দিনে তীব্রতর হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইউনিয়নের আশি শতাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ফলে মানচিত্র থেকে বিলিনের পথে বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন। ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে একটি মাদ্রাসা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি মসজিদ। যা সপ্তাহের মধ্যে ভেঙে নদী গর্ভ বিলীন হতে পারে। তাই সরকার বাহাদুরের নিকট অনুরোধ জানাচ্ছি কার্যকরী ব্যবস্থার মাধ্যমে ইউনিয়নটিকে ভাঙন হতে রক্ষা করুন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ মো. ময়দুল ইসলাম র‌নি বলেন, বর্তমানে রাজারহাট উপজেলা ও উলিপুর উপজেলায় তিস্তা নদীতে ৬.৫ কিলোমিটার জরুরি সতর্কতা মূলক কাজ চলমান রয়েছে।  এছাড়াও উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে জরুরি ভিত্তিতে ১ হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে এবং সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের চর ইয়ুথ নেটে জরুরী সর্তকতা মূলক কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও কোথাও ভাঙ্গন দেখা দিলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়ে বরাদ্দ প্রাপ্তির মাধ্যমে ভাঙ্গন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপন দেশ/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়