
সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ।
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটছে। গত আট মাসে গুলি করে পাঁচজনকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যার এসব ঘটনায় পর্যালোচনা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, এসব হত্যাকাণ্ডে একই গ্যাং জড়িত।
চট্টগ্রামের চান্দগাঁওতে ছয় মাস আগে দিনদুপুরে ছাত্রলীগ কর্মী তাহসিনকে গুলি করে হত্যা করে অস্ত্রধারী একদল সন্ত্রাসী। এ ঘটনার ঠিক দুই মাস আগে একই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ নেতাসহ আরও দুজনকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব খুনে জড়িত ও সন্দেহভাজন কয়েকজন ধরা পড়লেও পরে জামিনে বেরিয়ে আসেন। জামিনে বেরোনো ও পলাতক এসব সন্ত্রাসীরা সম্প্রতি নগরের বাকলিয়াতে ফিল্মি স্টাইলে প্রাইভেট কার ধাওয়া করে গুলি করে আরও দুজনকে হত্যা করে।
অনুসন্ধান ও পুলিশের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সাত মাসের ব্যবধানে পৃথক তিন কিলিং মিশনে পাঁচ খুনের ঘটনার সব কটিতেই চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদ ও তার সহযোগীরা জড়িত। এর মধ্যে সব কটি খুনের এজাহারনামীয় আসামি ছোট সাজ্জাদ। বাকি আসামিদের সবাই সাজ্জাদ গ্যাংয়ের সহযোগী।
গত বছরের ২৯ আগস্ট অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্পাদক মোহাম্মদ আনিস ও মাসুদ (৩০) নামের এক যুবলীগ কর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় বায়েজিদ ও হাটহাজারী থানায় পৃথক দুটি হত্যা মামলা হয়। এতে ছোট সাজ্জাদ, হাসান, আরমান বাচ্চু ওরফে ডাবল হাজি, শাহজাহান ও জাহাঙ্গীরের নাম উল্লেখ করে ৩-৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়। একই বছরের ২১ অক্টোবর চান্দগাঁওতে ছাত্রলীগ কর্মী আফতাব উদ্দিন তাহসান নিহতের ঘটনায় আসামি করা হয় ছোট সাজ্জাদ, হাসান, মোহাম্মদ, খোরশেদ ও হেলালকে।
সর্বশেষ গত ২৯ মার্চ দিবাগত রাতে বাকলিয়ায় প্রাইভেট কার ধাওয়া দিয়ে গুলি করে আব্দুল্লাহ আল রিফাত ও বখতেয়ার হোসেন মানিক নামের দুই যুবককে হত্যার ঘটনায় সাজ্জাদসহ তার গ্যাংয়ের সাত সদস্যের নামে এবং অজ্ঞাতনামা ৬-৭ জনকে আসামি করা হয়।
তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়কে দুই খুনের ঘটনায় চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেফতার ছিল না। গত ১৫ মার্চ ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ গ্রেফতার হলে পরে তাকে পৃথক দুটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। চান্দগাঁও থানায় তাহসিন হত্যা মামলায় ওই বছরই গ্রেফতার হয়েছিলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সহযোগী হেলাল। তদন্তে নাম উঠে আসায় গ্রেপ্তার করা হয় ইলিয়াছ হোসেন অপু ও এমরান নামের আরও দুজনকে।
চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি একটি চাঁদাবাজির মামলায় ছোট সাজ্জাদের ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগী বোরহান, মোবারক হোসেন ইমন ও বেলালকে গ্রেফতার করে বায়েজিদ থানা-পুলিশ। এ তিনজনের মধ্যে বোরহানকে পরে চান্দগাঁও থানায় তাহসিন হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়।
আসামিরা জামিনে এসে জড়ান জোড়া খুনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহসিন হত্যা মামলায় গ্রেফতার থাকা চার আসামির সবাই বর্তমানে সবাই জামিনে রয়েছেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জামিনে বের হন তারা। জামিনে বেরিয়ে এসব আসামিদের কারও কারও সংঘবদ্ধ হয়ে পরে ২৯ মার্চ বাকলিয়ায় নতুন করে আরও একটি চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনে জড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগের হত্যা মামলায় পলাতক আসামিরাও বাকলিয়ার কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হত্যা ও চাঁদাবাজিতে সম্পৃক্ততার অভিযোগে বিভিন্ন সময় গ্রেফতার আসামিরা একে একে জামিনে বেরিয়ে যান। তবে তাদের জামিনে বেরোনোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা কিছু জানাতে পারেনি।
বায়েজিদ থানার ওসি আরিফুর রহমান বলেন, চাঁদার দাবিতে একটি গার্মেন্টসের ঝুটের মালামাল আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার মামলায় বোরহান, ইমন ও বেলালকে গ্রেফতার করি। চাঁদাবাজির মামলায় আদালতে চালান করা হয়। পরে তারা কীভাবে জামিনে বেরিয়ে এসেছে—সেটা আমারও প্রশ্ন।
নগর পুলিশের দক্ষিণ জোনের উপকমিশনার (ডিসি) আলমগীর হোসেন বলেন, জামিনের বিষয়টি পুলিশ দেখে না। এখানে পুলিশের হাত নেই। মহামান্য আদালত আসামিদের জামিনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।