Apan Desh | আপন দেশ

মাছের সঙ্গে চার বোনের মিতালী

বরগুনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ৮ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১০:৫৪, ৮ মার্চ ২০২৩

মাছের সঙ্গে চার বোনের মিতালী

ছবি : সংগৃহীত

বরগুনার তালতলী উপজেলার নিওপাড়া এলাকার হাচেন মোল্লার পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে। তাদের মধ্যে চার বোন জরিনা, ফাতেমা, হালিমা, রাহিমা আন্ধারমানিক নদীতে কখনো বরশি, কখনো জাল ফেলে মাছ শিকার করেন। এভাবেই চলে তাদের জীবন সংগ্রাম।

তাদেরই একজন জরিনা বেগম বলেন, ‘বাবার শ্বাসকষ্ট ছিল। আয় রোজগার করে ভরণপোষণ দিতে পারতেন না। প্রায়ই দেখা গেছে ঘরে কোনো খাবার নেই। পেটের দায়ে ছোট বেলা থেকেই খাল-বিলে মাছ ধরি আমরা চার বোন। কখনো হাত দিয়ে, কখনো বরশি দিয়ে, আবার কখনো জাল দিয়ে মাছ ধরছি। অনেক কষ্টে করে জীবন কাটছে।’

নিওপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে স্লুইসগেট সংলগ্ন নদীতে সারিবদ্ধ নৌকায় বসে বড়শির ছিপ ফেলেন চার বোন। কারো বড়শিতে চিংড়ি, পুঁটি, টেংরা, বোয়াল আবার কারো ধরা পড়ছে কোড়াল, রুই, পাঙাশসহ নানা প্রজাতির মাছ। এসব মাছ বাজারে নিলে ৩০০ থেকে চারশ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হয়। তবে কখনো কখনো খালি হাতেও ফিরতে হয়।

চার বোন জানান, নদীতে মাছ থাকলে তাদের সংসারের সব সদস্যর পেটে ভাত জোটে। আর মাছ না থাকলে উপোস থাকতে হয়। প্রায় ৪০ বছর ধরে মাছ ধরার পেশাতে আছেন তারা।

বিয়ে করলেও একই রকম রয়ে গেছে চার বোনের জীবন। সরকারি আবাসন প্রকল্পে বসবাসের সুযোগ ছাড়া জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি তাদের। 

জরিনা বেগম বলেন, ‘আমাদের বাবার তেমন ভিটে মাটি, অর্থ-সম্পদ ছিল না। বিয়ে দিয়েছে তাও গরীব বাড়িতে, বয়স্ক রোগাক্রান্ত স্বামী কাজ করতে পারে না। বড়শি দিয়ে আমি মাছ ধরে যা আয় রোজগার করি তা দিয়েই সংসার চালাতে হয়।’

আরেক বোন রাহিমা বেগম বলেন, ছোটকাল থেকেই বরশি দিয়ে মাছ ধরি। প্রথম দিকে রাতে রাতে মাছ ধরতাম। পরে পেটের টানে দিনেও মাছ ধরা শুরু করছি। মানুষে লজ্জা দিত নারী হয়ে মাছ ধরি বলে। কিন্তু আমাদের তো উপায় নেই। মাছ ধরতে পারলে খেতে পারি, আর মাছ না পেলে না খেয়েই থাকতে হয়। 

তিনি আক্ষেপ নিয়ে বলেন, যারা কোনোদিন মাছ ধরেনি তারাও জেলে কার্ডের চাল পায়। আমরা চাল পাই না।

তালতলী উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সিফাত আনোয়ার তুমপা বলেন, নারী হওয়ায় তাদের জেলের তালিকাভুক্ত করতে পারছি না৷ তবে তারা গরু, ছাগল ও অন্যান্য প্রণোদনার মাধ্যমে যেন জীবিকা নির্বাহ করতে পারে সেই বিষয়টি দেখব। এসবের মাধ্যমে তাদের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর আওতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। 

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়