Apan Desh | আপন দেশ

টাকা দিলেন ছত্রিশের, জমি লিখে নিলেন ৮০ শতাংশ

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:৪৬, ৫ জুলাই ২০২৩

আপডেট: ২০:৫৭, ৫ জুলাই ২০২৩

টাকা দিলেন ছত্রিশের, জমি লিখে নিলেন ৮০ শতাংশ

ফাইল ছবি

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে দানপত্র দলিল করে জমি লিখে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিআরডিবি দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে। 

দলিল সম্পাদনে সহযোগিতা করেছেন সাটুরিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক শফিকুল ইসলাম বিশ্বাস। তিনি দলিল লেখক সমিতির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক। 

ভুক্তভোগী পানাইজুরি গ্রামের মোহাম্মদ আলী (৭০) এ ব্যাপারে সাটুরিয়া থানায় দলিল লেখকসহ চার জনের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দাখিল করেছেন। 

অভিযোগ ও ভুক্তভোগীর বরাতে জানা যায়, গত (২৫ জুন) মোহাম্মদ আলী ও তার ভাই আব্দুর রাজ্জাক এবং বোন হালিমা বেগম সাটুরিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বিআরডিবি কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনসহ তার নিকট আত্মীয় সুলতান ও লতিফের নামে ৩৬ শতাংশ জমি লিখে দেয়ার জন্য আসেন। চতুর জয়নাল কৌশলে নিজ নামে একটি এবং সুলতান ও লতিফের নামে মুহুরি শফিকুলের সহযোগিতায় আরেকটি দলিল করেন। দু'টি দলিল লেখা শেষে দাতাদের কাছ থেকে এবং স্বাক্ষীদের স্বাক্ষর টিপসই নিয়ে প্রয়োজনীয় কার্য শেষ করে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দাখিল করে। দু'টি দলিলে ৪০ শতাংশ করে মোট ৮০ শতাংশ জমি তফসিলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু দলিলে ৩৬ শতাংশের পরিবর্তে ৪০ শতাংশ লেখায় দাতারা প্রতিবাদ করেস। পরে উপস্থিত স্বাক্ষীদের মধ্যস্থতায় দাতারা ৪০ শতাংশ জমির দুটি দলিলে স্বাক্ষর করেন। তারা বুঝতেই পারেননি দুই দলিলে তাদের ৮০ শতাংশ জমির জন্য প্রতারণা করে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে।

এরপর সাব-রেজিস্ট্রার অভিজিত কর দলিলে ভূল উল্লেখ করে ফেরত দেন এবং নতুন করে সংশোধন করে আনতে বলেন দলিল লেখক শফিকুলকে। দলিল ফেরত আসার পর মোহাম্মদ আলী ও অন্যরা জানতে পারেন দুই দলিলে তাদের ৮০ শতাংশ জমি লিখে নিচ্ছেন জমির গ্রহীতারা। তখন মোহাম্মদ আলী প্রতিবাদ করে বলেন, আমার কাছ থেকে ৩৬ শতাংশ জমি নেয়ার কথা। সেখানে ৮০ শতাংশ কেন নেয়া হলো? কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জয়নাল ও শফিকুল ইসলাম দাতাদের বলেন স্বাক্ষর টিপসই আপনারা দিয়েছেন। এখন দাখিল বাকি কাজ শেষ, ঈদের পর রেজিস্ট্রি হবে। মোহাম্মদ আলী দলিল ফেরত চাইলে মুহুরি বলেন, টাকাবুঝে নিয়ে সই করেছেন, আপনার জমির দলিল হয়ে গেছে, এ দলিল আপনাকে দেয়া যাবে না। এই বলে তিনি জমি দাতাদের ফেরত পাঠিয়ে দেন। 

মোহাম্মদ আলী তার অতিরিক্ত জমি লিখে নেয়া এবং দলিল দুটি উদ্ধারের জন্য মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সাটুরিয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগ পাওয়ার পর সাটুরিয়া থানার পুলিশ দ্রুত দলিল দুটি উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। 

ওসি সুকুমার বিশ্বাস জানান, আমার থানা অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় এলাকা। এখানে যতগুলো মামলা মোকাদ্দমা হয় তার বেশিরভাগই ভূমি সংক্রান্ত। একটি চক্র এসব ভুয়া জাল ও প্রতারণামূলক দলিল-কাগজপত্র তৈরি করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে। আমরা দলিল দুটি উদ্ধার করেছি। প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে প্রতারণার মাধ্যমে মোহাম্মদ আলীর কাছ থেকে জয়নাল জমি লিখে নিতে চেয়েছিল। তার এ কাজে দলিল লেখক শফিকুল ইসলাম বিশ্বাসের সহযোগিতা আছে। নিয়মিত মামলা নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে দলিল লেখক শফিকুল ইসলাম বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ভাই সাইফুল জানান তিনি অসুস্থ।

দলিলে সই করা স্বাক্ষীরা জানান, আমাদের দলিলের বিষয়ে কোনো কিছু না জানিয়েই স্বাক্ষর নিয়েছেন মুহুরি শফিকুলের সহকারী সাইফুল ইসলাম। তিনি অত্যন্ত তাড়াহুড়া করে বলেন জলদি স্বাক্ষর করেন, সাব-রেজিস্ট্রার সাহেব এজলাশ থেকে নেমে যাবেন। তিনি নেমে গেলে দলিল হবে না, ঈদের পর হবে। এ কারণে সরল বিশ্বাসে দাতা ও স্বাক্ষীরা দলিলে সই করে দেন। 

এ ব্যাপারে সাব-রেজিস্ট্রার অভিজিত জানান, ঘটনা আমার জানা নেই। অনেক দলিল হয়েছে ওই দিন। নির্দিষ্ট করে আমার কোনো দলিলের কথা মনে নেই। এ রকম কোনো ঘটনা আমার অফিসে ঘটার সম্ভাবনা নেই। উপস্থিত ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলীকে লিখিত আকারে একটি অভিযোগ দাখিল করতে বলেন।

তিনি আরও বলেন, সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিতে দানপত্র দলিল করতে চেয়েছিলেন এ জন্য জমি গ্রহীতা এবং স্বাক্ষীসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থানেয়া হবে বলে মৌখিকভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়। যে কোনো অভিযোগ ও প্রয়োজন ধাকলে সরাসরি তার কাছে আসার কথাও বলা হয়েছে ভুক্তভোগীকে।

মোহাম্মদ আলী বলেন, আমি জানিই না দানপত্র -হেবা-পাওয়ার-সাফকবলা দলিলের পার্থক্য বা কাকে বলে। আমাকে দলিল লেখক বলেছেন এই দলিল করলে রেজিস্ট্রি হবে, খরচও কম হবে। আমি বিশ্বাস করে দলিলে সই করে দিছি। এখন দেখি দলিলেআমার ৮০ শতাংশ জমি নিয়ে যাচ্ছে। আমি তো ৮০ শতাংশ বিক্রি করিনি। তাই আমি প্রতিবাদ করেছি। তারা বলে স্ট্যাম্পে সই করেছ জমি এখন তাদের। আমি এর প্রতিকার চাই।

দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আফজাল হোসেন জানান ঘটনা আমি শুনেছি। তবে কোনো দলিল লেখক এমন কাজ করতে পারেন না। যদি শফিকুল ইসলাম এমন কাজ করে থাকেন তাহলে তার শাস্তি পাওয়া উচিত।

আপন দেশ/প্রতিনিধি/জেডআই

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়