ফাইল ছবি
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে অবৈধ বিদ্যুতের লাইন নির্মাণে বাধা দেয়ায় বিউবোর বসুর হাট কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে দফায় দফায় মারধর ও মাথা ন্যাড়া করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার ৪দিন পর আহত প্রকৌশলী তার স্ত্রীর মাধ্যমে কোম্পানীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এতে চার জনের নামসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
শনিবার (১৫ জুলাই) বিকেলের দিকে কোম্পীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান মামলা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাতে মামলাটি নথিভুক্ত করা হয়।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিকেলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌর সভার ৮নম্বর ওয়ার্ডে বৈদ্যানোগো বাড়ির সামনে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে একটি লাইন নির্মাণের সংবাদ পেয়ে তিনি আবাসিক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামের নির্দেশে ঘটনাস্থল যান। সেখানে গিয়ে দেখেন খোকন, শিপন, টিপুসহ অজ্ঞাত নামা আসামিরা দুটি এলটি নির্মাণ কাজ করে। তাদের সঙ্গে কথা বললে এক পর্যায়ে তারা আমাকে (সাইফুল ইসলাম) গাল মন্দ ও এলোপাতাড়ি মারধর করে। ওই সময় আমার ব্যবহৃত স্যামসাং ব্রান্ডের একটি অ্যানড্রয়েট মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
আসামিরা এক পর্যায়ে আমাকে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বাড়ি রাজাপুর মহল্লার একটি বাড়িতে নিয়ে আটক করে লোহার রড দিয়ে এলোপাতাড়ি মারধর করে। মারধরের কারণে আমার কপাল, বামহাতে, বুকে, পিঠ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়ে আহত হই। এক পর্যায়ে বিবাদীরা আমার মাথার চুল কেটে দেয়। এতে আমি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি। আমার জ্ঞান ফিরে আসলে আসামিরা জানায় পিডিবি ফেনী কার্যালয় থেকে লোক এসেছে, তোমাকে যেতে হবে। এরপর আমাকে বাউবি বসুরহাট কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাৎক্ষণিক কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বসুরহাট পৌর যুবলীগের সদস্য মো. খোকন, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সহসভাপতি শিপন শাহরিয়ার, সদস্য মো. টিপু ও ফেনী বিউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী এমদাদ উল্যাহ। আসামি এমদাদ হামলার ঘটনায় বিউবো গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে।
তবে মামলার এজাহারে আসামি করা হয়নি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই শাহদাত হোসেনকে। এ বিষয়ে বাদী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বলেন, তিনি মুরব্বি মানুষ, তাছাড়া মন্ত্রীর ভাই। আর মূল ঘটনা তো এরা ঘটিয়েছিল, তাই তার (শাহদাত) নাম দেয়া হয়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোম্পানীগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক পুস্পবরন চাকমা বলেন ১১ তারিখে ঘটনা ঘটেলেও ১২ তারিখ পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভাগ থানা পুলিশকে ঘটনা জানায়নি। পরে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ ডিএসবির মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন। ১৩ তারিখ রাতে একজন পিয়নের মাধ্যমে হামলার শিকার প্রকৌশলী থানায় একটি চিঠি পাঠান। ওই চিঠিকে ঘটনাস্থল ও ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা ও স্বাক্ষী হিসেবে কারও নাম উল্লেখ ছিল না। তাই ওই ব্যক্তিকে থানায় এসে লিখিত অভিযোগ দিতে ওসি স্যার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি আসেননি। শুক্রবার রাত ৯টার দিকে তিনি স্ত্রীর মাধ্যমে থানায় একটি অভিযোগ পাঠান। শুনেছি তিনি চমেক হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ওসি আরও জানান, সাদেকুর রহমান বলেন ঘটনার ৪ দিন পর শুক্রবার রাতে আহত প্রকৌশলী বাদী হয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত পরিচয় ১৫-২০ জনের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ রাতেই মামলাটি নথিভুক্ত করে। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই মামলার কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
আপন দেশ/প্রতিনিধি/জেডআই/এমএমজেড
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।