ছবি : সংগৃহীত
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতের কলকাতায় খুন হন। হত্যার পরিকল্পনাকারী তারই ব্যবসায়িক সহযোগী ও ‘বন্ধু’ আখতারুজ্জামান শাহীন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট ডিবি জানিয়েছে, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহীন। তিনি এমপি আনারের বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার। এ আখতারুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এবং মার্কিন পাসপোর্টধারী। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে তার বাড়ি। কোটচাঁদপুরের পৌর মেয়র শহিদুজ্জামান সেলিমের ছোট ভাই তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, মার্কিন পাসপোর্টে তার নাম মো. আখতারুজ্জামান, পাসপোর্ট নম্বর ইউএসএ ৫৬৬৮৩৩১৯৭। ঝিনাইদহের স্থানীয় সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাকারবারি চক্রের সঙ্গে যুক্ত এ শাহীন। এমপি আনারের সঙ্গে তার সখ্য এবং দুজন মিলেই সীমান্তের চোরাচালান চক্র নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ১০ মে কলকাতা থেকে শাহীন বাংলাদেশে এসে কোটচাঁদপুরে যান।
গোয়েন্দা ও স্থানীয় সূত্র জানায়, এমপি আনারের সঙ্গে শাহীনের স্বর্ণের বড় একটি চালান নিয়ে ঝামেলা চলছিল। এমপি ওই চালানের টাকা শাহীনকে দেননি। এটি নিয়ে দীর্ঘ ঝামেলার পর মূলত কলকাতায় অন্যান্য পার্টনারের সঙ্গে মীমাংসার জন্য যান এমপি আনার। মূলত তাকে এক নারী দিয়ে ফাঁদে ফেলে কলকাতায় নেয়া হয়।
স্থানীয়রা জানান, শাহীন তার ভাই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মনিরুজ্জামান মনার মাধ্যমে অন্তত ২০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা হন। সেখানে বসেই দেশে স্বর্ণ ও অস্ত্র কারবার নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। কোটচাঁদপুরের অদূরে এলাঙ্গী গ্রামে তার একটি বাগানবাড়ি রয়েছে। দেশে এলে সেখানে বসত মদের আসর। সেখানেই পরিকল্পনা হতো স্বর্ণ ও অস্ত্র কারবারের।
পরিকল্পিতভাবে আনারকে যে হত্যা করা হয়েছে, তার প্রমাণ পেয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। তবে তার মরদেহের পুরো অংশ এখনো পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার তদন্ত করছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডির মহাপরিদর্শক অখিলেশ চতুর্বেদী বলেছেন, ‘আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছি, যার ভিত্তিতে মনে করা হচ্ছে যে ওনাকে হত্যা করা হয়েছে।’
তিনি জানান, পূর্ব কলকাতার নিউ টাউন অঞ্চলে যে ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজিম আনার উঠেছিলেন, সেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবগারি দফতরের কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার রায়ের। সন্দীপের কাছ থেকে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন আখতারুজ্জামান নামের এক ব্যক্তি। আখতারুজ্জামান ওই ফ্ল্যাটে আনোয়ারুল আজিমের থাকার ব্যবস্থা করেছিলেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কলকাতার নিউ টাউনের অভিজাত আবাসিক এলাকা সঞ্জিভা গার্ডেনের ওই ফ্ল্যাটে বুধবার তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। সেখানে কী ধরনের জিনিসপত্র পাওয়া গেছে বা রক্তের দাগ পাওয়া গেছে কিনা, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু জানাননি অখিলেশ চতুর্বেদী। তিনি বলেছেন, পুলিশের ফরেনসিক বিভাগ তদন্তের কাজ শুরু করেছে। তদন্তে অগ্রগতি হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আরও পড়ুন <> আজিম হত্যার পরিকল্পনায় ‘বন্ধু’ শাহীন
আনারের সঙ্গে কয়েকজন ব্যক্তি এই ফ্ল্যাটে এসেছিলেন জানিয়ে অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, তারা কবে বেরিয়ে গেলেন, সে বিষয়ে আমরা তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলতে পারছি না। এটুকু বোঝা যাচ্ছে যে, ১৩ মে তিনি এখানে এসেছিলেন। তবে তার আগেও এসেছিলেন কিনা, সেটি আমরা এখনো জানি না।
আনোয়ারুল আজিমকে হত্যা করে দেহ খণ্ড খণ্ড করে ফেলা হয়েছে কিনা, সে বিষয়েও কিছু বলতে চাননি সিআইডি প্রধান। তবে অন্য সূত্রে জানা যায়, আজিমের মরদেহ খণ্ড বিখণ্ড করে ফেলা হয়। পরে মূল অংশ ট্রলিতে ভরে পাচার করা হয়। আরেকটি সূত্র বলছে, তার মরদেহের বিভিন্ন অংশ নানা স্থলে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
শাহীনের বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর থানার ওসি সৈয়দ আল মামুন গণমাধ্যমকে বলেন, আপনার মতো আমিও শুনেছি যে মেয়র সাহেবের ভাই শাহীন মিয়ার পুরো নাম আখতারুজ্জামান। তবে আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে আগের কোনো অভিযোগ নেই বা কোনো ডকুমেন্ট নেই।
কোটচাঁদপুরের মেয়র সহিদুজ্জামানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ওর পুরো নাম আখতারুজ্জামান। ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ওর পরিবার সেখানে থাকে। ও নিজেও সেখানে থাকে। এক সপ্তাহ আগেও বাড়ি এসেছিল। বাড়ি থেকে আখতারুজ্জামান কোথায় গেছেন জানতে চাইলে মেয়র বলেন, সেটি আমি জানি না। তিনি ভারতে গেছেন কিনা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, যেতে পারে।
কলকাতায় আখতারুজ্জামানের কোনো ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়া আছে কিনা প্রশ্ন করলে তার ভাই সহিদুজ্জামান বলেন, ‘ঠিক ভাড়া না, পরিচিত একজনের ফ্ল্যাট ও মাঝে মাঝে গিয়ে থাকত। তবে সেই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন কিনা আমার জানা নেই।’
আপন দেশ/এমআর
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।