ছবি: সংগৃহীত
সমাজসেবা অধিদফতরের কর্মকর্তাদের জন্য ভীষণ উদ্বেগের একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে মহসিন দিনু নামের এক ব্যক্তি। তিনি বিভিন্ন পরিচয়ে আসেন- কখনো ব্যবসায়ী, কখনো সাংবাদিক, আবার কখনো বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক। তবে তার আসল পরিচয় হলো ব্ল্যাকমেইলিং ও চাঁদাবাজি। সরকারি দফতরগুলোতে ভয়ভীতি দেখিয়ে অর্থ আদায় করাই তার মূল লক্ষ্য।
সাংবাদিক পরিচয়ের আড়ালে চাঁদাবাজি
মহসিন দিনু নিজেকে বাংলা টিভির সাংবাদিক বলে পরিচয় দেন। তবে বাংলা টিভির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ নামে তাদের কোনো সাংবাদিক নেই। তিনি সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি হয়েছে দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশের হুমকি দিয়ে চাঁদাবাজি করছেন।
অফিস পরিচালনা ব্যয়ের বরাদ্দ সম্পর্কিত তথ্য বের করতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এ ধরনের তথ্য সাধারণ মানুষের জানার কথা নয়। তাই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, অধিদফতরের মধ্যে কিছু অসাধু কর্মকর্তা তার সঙ্গে জড়িত।
ভয় ও হুমকির রাজত্ব
দিনুর চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করার পর থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তা তার হুমকির শিকার হচ্ছেন। ‘ছাত্র আন্দোলন সমন্বয়’ পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি সমাজসেবা অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালকের কক্ষে গিয়ে পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করেন। কর্মকর্তাদের সন্দেহ হলে তারা বিষয়টি যাচাই করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতার সঙ্গে কথা বলেন। এতে নিশ্চিত হন যে ওই ব্যক্তি আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
দিনু ফোনে হুমকি দিয়ে বলেন, অফিস পরিচালনার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাট হয়েছে। বাড়াবাড়ি করলে চাকরি খেয়ে ফেলবেন।
রাজনৈতিক নাটক এবং বিক্ষোভ
গত ২৬ সেপ্টেম্বর, সমাজসেবা অধিদফতরের সামনে ৩০-৪০ জন ব্যক্তি ‘শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন’ শিরোনামে বিক্ষোভ করেন। তারা মহাপরিচালক ও অতিরিক্ত পরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সেখান থেকে বিতাড়িত করে। সমাজসেবা অধিদফতর দাবি করেছে, মহাপরিচালক এখনও তার দায়িত্ব পালন করছেন। এ বিক্ষোভের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
মহসিন দিনুর পরিচয় ও অপকর্ম
মহসিন দিনু ‘জনতার গোয়েন্দা’ নামের একটি অনলাইন পোর্টাল চালান। যা তার স্ত্রী আয়েশা মহসিনের সঙ্গে যৌথভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এ পোর্টালের মাধ্যমে তিনি অসত্য সংবাদ প্রকাশ করে সরকারি কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি দেখান। তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছবি তুলে সে-সব ছবি দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেন।
মহসিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তিনি ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক নেতা ও বর্তমান রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত হন। বর্তমানেও তিনি দাবি করছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের লোক ও খালেদা জিয়া তাকে ‘সাংবাদিকতা’ করতে বলেছেন।
এখন পর্যন্ত মহসিন দিনুর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন। এ পরিস্থিতি সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আতঙ্কের এক নতুন অধ্যায় তৈরি করেছে।
আপন দেশ/কেএইচ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।