Apan Desh | আপন দেশ

রূপালীর এমডি হতে সোনালীর ডিএমডি ওয়াহিদের জালিয়াতি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২২:৫৯, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ২২:৫৯, ৪ ডিসেম্বর ২০২৪

রূপালীর এমডি হতে সোনালীর ডিএমডি ওয়াহিদের জালিয়াতি!

কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসমলাম

লেখাপড়ায় প্রকৌশলী। কর্মে ব্যাংকার। চাকরি জীবনের প্রথম ব্যাংক রূপালীতেই ফিরতে চান। নামের পরে যোগ করার ইচ্ছ এমডি পদবী। সঙ্গে চান বাড়তি সুবিধা। তিনি কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসমলাম। এখন তিনি সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালকের চেয়ারে।  

১৯৯৮ সালে সিনিয়র অফিসার পদে তিনি যোগদান করেছিলেন রূপালী ব্যাংকে। ধাপে ধাপে হয়েছিলেন ব্যাংকটির মহাব্যবস্থাপকও। ২০২২ সালে আরেক দফা পদোন্নতি পেয়ে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) হন। অর্থমন্ত্রণালয় তাকে পাঠায় সোনালী ব্যাংকে।

চামড়া বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করা প্রকৌশলী কাজী মো. ওয়াহিদুল ইসলাম কালের আবর্তে খোলস পাল্টানোর চেষ্টায় রয়েছেন। স্বৈরাচার আমলে সম্পৃক্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সঙ্গে। সময় এখন বৈরী; তাই বদলে যেতে চান কাজী ওয়াহিদুল ইসলামও। বৈরী হাওয়ায় নৌকার পাল ছেড়ে দিতে চান, ভুলে যেতে চান বঙ্গবন্ধুকে। অস্বীকার করতে চান রাজনৈতিক আদর্শও। এ নিয়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছেন তিনি। কিন্তু পদ বাগাতে নাছোড়বান্দা কাজী ওয়াহিদুল। 

বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ রূপালী ব্যাংক শাখার সিনিয়র সহসভাপতি পদ নিয়েছিলেন ওয়াহিদুল। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারির কমিটিতে। তৎকাল থেকেই কমিটির সভাপতি শচীন্দ্র নাথ সমাদ্দার। এখন আছেন বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংকে (বিডিবিএল)। কমিটি গঠনের সময় তার পোস্টিং ছিল খুলনায়, রূপালীর ডিজিএম হিসেবে। সভাপতির অনুপস্থিতিতে গুরুদায়িত্ব পালনের জন্যই হয়তো সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ বাগিয়েছিলেন এই কাজী ওয়াহিদ।

স্বৈরাচার আমলেই জুলাই আন্দোলন ও ‘গণহত্যা’ চলাকালেও ওই পদের পরিচয় দিতে বিব্রতবোধ করেননি তিনি। কিন্তু ৫ আগষ্ট তার নেত্রী শেখ হাসিনা পলায়নের পর থেকে রূপ বদলাচ্ছেন ওয়াহিদুল।

আরও পড়ুন<<>> বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ নেতা কাজী ওয়াহিদ হচ্ছেন রূপালী ব্যাংকের এমডি!

রাষ্ট্রায়াত্ব ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের এমডির চুক্তি বাতিল করে অন্তর্বর্তী সরকার। নয়া হিসাব কষেন কাজী ওয়াহিদুল। নজর দেন উপরের চেয়ার এমডির দিকে। দৌড়ঝাঁপ করেন মহল বিশেষে। এ দৌড়ের বেগ বাড়াতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এ কর্তাকে নিয়ে আছে নানা কথাও। কাজীই এমডি! প্রজ্ঞাপন হবার কথাও মতিঝিল থেকে মন্ত্রণালয়ে চাউর ছিল। কিন্তু বিধিবাম। গণমাধ্যমে তার দোসরচিত্র প্রকাশ পায়। এখনো আটকে আছে কাজীর পদোন্নতির ফাইল।

এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক আপন দেশ’কে জানান, রূপালী ব্যাংকের এমডির বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ফাইল চলমান। হলে জানবেন।  

এদিকে, কাজী ওয়াহিদুল ইসলাম ‘বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের কমিটিতে ছিলেন না’-এ মর্মে পত্র দাখিলও করেছেন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখায়। তাতে সাক্ষর করেছেন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি/সম্পাদক। এ পত্রের বদৌলতে আপাতত তুষ্ট ছিলেন পদোন্নতির ফাইল তৈরীকারকরা। নতুন বাধা না পড়লে রূপালীর এমডি কাজী ওয়াহিদুল ইসলামই! 

বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করে ডেইলি আপন দেশ ডটকম। মিলেছে কাজী ওয়াহিদ ইসলামের ঘটানো ভয়ঙ্কর চিত্র। 

০৪ ডিসেম্বর দুপুরে টেলিফোনে (০১৭১*****১৭) আপন দেশের এ প্রতিবেদক কথা বলে বিডিবিএল-এর ডিএমডি শচীন্দ্র নাথ সমাদ্দারের সঙ্গে। তিনি এখনো বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের রূপালী ব্যাংক শাখার সভাপতি। 

এক প্রশ্নের জাবাবে শচীন্দ্র নাথ সমাদ্দার বলেন, কাজী ওয়াহিদুলের সঙ্গে আমার দেখা হয়না অনেকদিন। ওরা কি করেছে তা আমার জানা নেই। 

আপনি তো ওই কমিটির সভাপতি? জবাবে তিনি বলেন, ২০২১ সালে আমি খুলনায় ছিলাম। কোনোদিন কোনো মিটিং হয়েছে ওরা বলতে পারবে? 

কী জালিয়াতি করেছেন ওয়াহিদুল!

অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগসহ বিভিন্ন দফতরে কাজী ওয়াহিদুল ইসলামের দাখিল করা পত্রটির বিষয়ে আরও অনুসন্ধান করে আপন দেশ। 

বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের ভীত অনেক শক্তিশালী। এ সংগঠনটি ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেমোরিয়াল ট্রাস্ট কর্তৃক অনুমোদিত। বিভিন্ন সেক্টরে প্রকৌশলীদের কমিটি গঠনে এ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি বিশেষ নজর রাখে। বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী হাবীবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামান।  

কাজী ওয়াহিদুল ইসলাম যে পত্র দাখিল করেছেন তাতে কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি/সম্পাদক স্বাক্ষরিত। তাহলে কি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি/সম্পাদক পদত্যাগ বা পদ ছেড়েছেন? 

এ বিষয়ে জানতে ০৪ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা ০৩ মিনিটে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. নুরুজ্জামানের সঙ্গে ০১৮১*****৮৯ নম্বরে কথা হয়। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের কমিটি এখনো বহাল। কে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি? কে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক? বৈরী পরিস্থিতির কারণে সংগঠনের অ্যাক্টিভিটিজ নেই-জানান এ নেতা। 

এ তথ্য প্রমাণীত যে, কাজী ওয়াহিদুল ইসলামের দাখিল করা পত্রটি জাল।

এ বিষয়ে জানতে ওয়াহিদুল ইসলামের ০১৯২৭****১৬ নম্বরে কলা করা হয়। একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। হোয়াট্স অ্যাপে বার্তা পাঠালে তিনি সিন করেন কিন্তু কোনো জবাব দেননি। 

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়