ছবি: ইন্টারনেট
টানা ১৫ বছরের বেশি সময় সরকারে থেকে দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম করে আওয়ামী লীগ। অবশেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর মধ্যে দিয়েই আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের সমাপ্তি ঘটে। শুধুমাত্র ক্ষমতায় ঠিকে থাকতে ১৫ বছরে অসংখ্য গুম-খুন ঘটায় হাসিনা সরকার। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে বহু মানুষকে গুম করে দীর্ঘদিন আটকে রাখা হতো গোপন বন্দিশালা বা আয়নাঘরে।
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরই বের হতে থাকে ওই সকল গোপন বন্দিশালা বা আয়নাঘরের খবর। বিশেষ করে- ডিজিএফআই, সিটিটিসি, ডিবি ও র্যাবের দিকে আঙ্গুল তুলতে থাকেন ভুক্তভোগীরা। এ ছাড়া অভিযুক্ত বাহিনীর নির্যাতন ও গুমের শিকার হওয়া ব্যক্তিরাও মুক্ত হয়। তাদের অপকর্মের বিষয়ে গণমাধ্যমের সামনে বিবরণ দেয়া শুরু করে। ফলে সারাদেশ থেকে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পেতে তৎপরতা চালায় পরিবারের সদস্যরা।
সে সময় দেশের পরিস্থিতি স্বভাবিক করতে গত ৮ আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
পরবর্তীতে হাসিনা সরকারের আমলে সারাদেশে ব্যপক গুম-খুনের ঘটনা তদন্তে ঘটন করা হয় গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন। যারা গত শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশন ‘আনফোল্ডিং দ্য ট্রুথ’ শিরোনামে তদন্ত প্রতিবেদনটি প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেয়।
ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। যেখনে- আটটির বেশি গোপন বন্দিশালা বা ‘আয়নাঘর’ শনাক্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর সেখানেই আটকে রাখা হতো গুম করা ব্যক্তিদের।
আরও পড়ুন<<>> গুমে শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা মিলেছে, র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ কমিশনের
কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), র্যাব এবং পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট এসব বন্দিশালা পরিচালনা করত। আয়নাঘরের পাশাপাশি কখনও সাধারণ বন্দীদের সঙ্গেও রাখা হতো গুম করা ব্যক্তিদের।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, গুমের ঘটনায় কমিশনে এ পর্যন্ত ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ জমা পড়েছে। এর মধ্যে ৭৫৮ অভিযোগের যাচাই-বাছাই সম্পন্ন হয়েছে।
প্রতিবেদনে গুমের শিকার ব্যক্তিদের দীর্ঘদিন সবার নজরের বাইরে কীভাবে রাখা হতো, তার লোমহর্ষক বিবরণ উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তিকে বিভিন্ন সময়সীমায় আটক রাখা হতো—কেউ ৪৮ থেকে ৬০ ঘণ্টা, কেউ কয়েক সপ্তাহ বা মাস, আবার কেউবা বন্দী ছিলেন আট বছর পর্যন্ত।
অনেকের ধারণা, গুমের শিকার ব্যক্তিদের কেবল গোপন বন্দিশালায় আটকে রাখা হতো। তবে জীবিত ফিরে আসা কয়েকজনের সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে ভিন্ন চিত্র। তারা জানান, অনেককে এমন বন্দিশালায় রাখা হয়েছিল যেখানে সাধারণ বন্দীদেরও আটক রাখা হতো।
উদাহরণস্বরূপ, ডিবি কর্তৃক আটককৃতদের বন্দিত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। গুমের শিকার ব্যক্তিদের বৈধ বন্দীদের সঙ্গে রাখার মাধ্যমে তাদের অবৈধভাবে আটক রাখার বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা হতো। গুম ফেরাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে কমিশন ধারণা করতে পেরেছে- তাদের কোথায় কোথায় বন্দী রাখা হয়েছিল।
এক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, বন্দিশালায় তিনি একটি ভিন্ন ধরনের দরজা লক্ষ্য করেছিলেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে কমিশন কক্ষটি চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়, যা একসময় তিনটি পৃথক কক্ষে বিভক্ত ছিল। তবে পরিদর্শনের আগেই ওই পার্টিশনগুলো ভেঙে ফেলা হয়। ভুক্তভোগীর সাক্ষ্য যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট স্থান থেকে আরও একটি প্রমাণ সংগ্রহ করে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন<<>> সাবেক সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ
কমিশনের কর্মকর্তারা বন্দীদের জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষ, আটক রাখার স্থান এবং ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ঘটনাস্থল থেকে তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা। এ লক্ষ্যে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছেন।
গোপন বন্দিশালা দেখতে তদন্ত কমিশন যেসব দপ্তরে গিয়েছে তা হলো- ডিজিএফআই, সিটিটিসি, ডিএমপির ডিবির প্রধান কার্যালয়, চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ডিবি, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন ইউনিট ২, ৪, ৭ ও ১১, র্যাব ২, সিপিসি ৩, র্যাবের সদর দপ্তর, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার এবং এনএসআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়।
আপন দেশ/এসএমএস
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।