
আমিন আল পারভেজ।
কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণ দুর্নীতির মামলায় ২২ কোটি টাকার আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে আমিন আল পারভেজের বিরুদ্ধে। এরপরেও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাকে।
রোববার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, আমিন আল পারভেজকে প্রেষণে এ পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। উপ-সচিব আবুল হায়াত মো. রফিক স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
দুদক সূত্র জানায়, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে আমিন আল পারভেজ কক্সবাজারে পিবিআই ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ মামলায় (এলএ কেস) ২২ কোটি ২১ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। মামলাটি ২০২০ সালে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এ তদন্ত করা হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মামলায় আমিন আল পারভেজ ছিলেন ৩০ নম্বর আসামি। মামলাটি (নং-১, তারিখ: ১০.০৩.২০২০ ইং ও স্পেশাল মামলা নং ০৬/২০২০ ইং) তদন্ত করেন দুদকের একজন উপ-সহকারী পরিচালক। তবে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার চার্জশিট দেয়া হয়নি।দুদকের দুই প্রভাবশালী মহাপরিচালকের হস্তক্ষেপে মামলাটি ধামাচাপা দেয়া হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ২৫২ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে আমিন আল পারভেজের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি পরস্পর যোগসাজশে অপরাধমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে নিজের ও অন্যদের জন্য অবৈধ লাভের চেষ্টা করেছেন।
আরও পড়ুন>>>বেনামি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে মোরশেদ আলমের শত শত কোটি টাকা পাচার
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আমিন আল পারভেজ ‘মেসার্স ইলিয়াছ ব্রাদার্স’ কোম্পানির আপত্তির পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ভূমি অধিগ্রহণ আইনের ব্যাপারে যথাযথ জ্ঞান থাকা সত্ত্বেও তিনি ‘চন্দ্রিমা হাউজিং’-এর জমিকে অধিগ্রহণের অংশ হিসেবে দেখান।
এছাড়া তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন অসঙ্গতিপূর্ণ নথি প্রস্তুত করেন। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যদের ক্ষতি করে নিজেদের লাভবান করেন। তদন্ত প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ফিল্ডবুক ও নোট ফাইল ছাড়া চেক প্রদানের বৈধতা দেয়া, অবৈধ দলিল ও জাল খতিয়ানকে সঠিক হিসেবে ব্যবহার করা ও সংশ্লিষ্ট নথিতে জালিয়াতি করে অপরাধমূলক কার্যক্রমের প্রমাণ মেলে।
এছাড়াও তিনি তদন্তে মিথ্যা তথ্য প্রদান, কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গোপন রাখা ও জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগেও অভিযুক্ত হয়েছেন। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির দায়িত্বে থেকে একপেশে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
দুদকের তদন্তে ২২ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাতের ঘটনায় আমিন আল পারভেজসহ অন্তত তিন ডজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করার সুপারিশ করা হয়েছে। দণ্ডবিধির ৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলার সুপারিশ করা হয়।
আরও পড়ুন>>>কয়েদির স্ত্রীকে বারবার ধর্ষণ করে র্যাব কর্মকর্তা
তদন্তে জানা যায়, ৩৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমি অধিগ্রহণ করে প্রায় ২২ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। প্রথমে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের তিন সার্ভেয়ার—মোহাম্মদ ওয়াসিম খান, মো. ফেরদৌস খান ও মো. ফরিদউদ্দিন—এর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। তবে দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে আমিন আল পারভেজসহ আরো ৩ ডজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম।
তদন্তে প্রমাণিত হয় যে, এলএ কেসের তদন্ত কমিটির তিন সদস্য—তাদের মধ্যে আমিন আল পারভেজও রয়েছেন—অস্তিত্ত্বহীন তথ্য দিয়ে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। পাশাপাশি তারা ঘুষ নিয়েও মামলার বাস্তবতা আড়াল করেছেন।
অর্থ আত্মসাৎ ও জাল-জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের করা মামলায়, যেখানে অন্যান্য আসামির সঙ্গে আমিন আল পারভেজ এখন কারাগারে থাকার কথা, সেখানে তাকে দুদকের পরিচালক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, নিজের বিরুদ্ধে চলমান মামলা ‘গায়েব’ করতে ও তদন্তে হস্তক্ষেপ করার জন্যই পারভেজ কৌশল করে এ পদটি বাগিয়ে নিয়েছেন।
আপন দেশ/এমবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।