Apan Desh | আপন দেশ

মাউশিতে লুটপাট: প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্ত কমিটি

বিশেষ প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:২৬, ২৯ মার্চ ২০২৩

আপডেট: ১৩:২৫, ২৯ মার্চ ২০২৩

মাউশিতে লুটপাট: প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্ত কমিটি

ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী ও মাউশির নির্দেশনা উপেক্ষা করে সরকারি কলেজের কেনাকাটায় হরিলুটের ঘটনায় অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে আজ বুধবার (২৯ মার্চ)। ইতোমধ্যে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা সকল ধরনের নথিপত্র নিয়ে মন্ত্রণালয়ে হাজির হয়েছেন।

গত ১৯ মার্চ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ২৬ মার্চ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের কাছে নোটিশ দেয়া হয়। তাতে আজ ২৯ মার্চ হাজির হতে বলা হয়। তদন্ত কমিটি গঠনের ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। ফলে ৩ এপ্রিলের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। 

শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা সদরের (৭০) পোস্ট-গ্রাজুয়েট কলেজ সমূহের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় অর্ধশত সরকারি কলেজের জন্য প্রায় ৩৬ কোটি টাকার আসবাবপত্র কেনাকাটা করা হচ্ছে। কেনাকাটায় করা হয় মোট ১৭টি লটে কাজ বন্টন করা হয়। এর মধ্যে ৮টি লট দেয়া হয়েছে যুবদলের সহ-যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তরুন দের প্রতিষ্ঠানমমতা এন্টারপ্রাইজকে, শর্ত শিথিল করে লটের কাজ দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের শ্রম জনশক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত শিকদারের কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড বিডিনামক প্রতিষ্ঠানকে। এছাড়াও আখতার ফার্নিচার, অটবি, রয়েল ফার্নিচারসহ কয়েক প্রতিষ্ঠানকে বাকি লটের কাজ দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দফায় দফায় নির্দেশনা দিয়েছেন চাহিদা মোতাবেক কাজ সম্পাদনের স্বার্থে একই প্রতিষ্ঠান যেন একাধিক কাজ না দেয়া হয়। ট্রেন্ডার রুলেই আছে অনিয়মের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হলে পরবর্তীতে যে প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশগ্রহণে অযোগ্য হবে। কিন্তু এসবইকাগুজে বিধারূপ পেয়েছে।

৮টি লটের কাজ বাগিয়ে নেয়া যুবদল নেতা তরুন দের প্রতিষ্ঠান মমতা এন্টারপ্রাইজ অতীতে নিন্মমানের কাজ করার দায়ে জামনত আটকে রাখা হয়েছিল, এরপরও তার প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে কয়েকটি কাজ চলমান, আখতার ফার্নিচার অনিয়মের দায়ে সাজা স্বরূপ জরিমানা গুনেছে।

এদিকে কেনাকাটার কাজ প্রদানের প্রক্রিয়া নিয়েও স্বজনপ্রীতি অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মোট তিন ধাপে ট্রেন্ডার আহ্বান করা হয়েছিল। এরমধ্যে প্রথম ধাপে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে বাদ দেয়া এবং দ্বিতীয় তৃতীয় ধাপে দরপত্রের শর্ত পরিবর্তন করে সর্বনিম্ন দরতাদাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয়, তৃতীয় বা চতুর্থ দরতাদাকে কাজ দেয়া হয়েছে। 

আরও পড়ুন <> মাউশিতে লিয়াকত শিকদার-তরুণ দে’র লুটপাট, শিক্ষামন্ত্রণালয়ে নথি তলব

প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম আটটি লটের টেন্ডারে অন্যতম শর্ত ছিল দরতাদা প্রতিষ্ঠানের আসবাবপত্র প্রস্তুতকারী হিসেবে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। দ্বিতীয় ধাপেও একই শর্ত রেখে পাঁচটি লটের দরপত্র আহ্বান করা হয়। যুবদল নেতা তরুন দের প্রতিষ্ঠান মমতা এন্টাপ্রাইজকে দুটি ধাপের অন্তত আটটি লটের কাজ দেয়ার পরিকল্পনাসাজায়সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু অভিজ্ঞতা সংক্রান্ত সীমাবদ্ধতার কারণে ধাপেও লিয়াকত শিকদারের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার সুযোগ হয়নি।

পরবর্তীতে তৃতীয় ধাপে আসবাবপত্র প্রস্তুতকারী হিসেবে দারদাতা প্রতিষ্ঠানের শর্ত শিথিল করে আট বছর করা হয়। এতে লিয়াকত শিকদারের প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড বিডিকে দুটি লটের কাজ দেয়ার সুযোগ হয়। এতে টাকার অংকও বৃদ্ধি পায়। এর চেয়ে বেশি কাজ করারসক্ষমতাওই প্রতিষ্ঠানটির নেই বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এদিকে প্রকল্প পরিচালককে মাউশির তরফ থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছিল, সে নোটিশের  জবাবও দেয়া হয়নি।

অপরদিকে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনেছে টেন্ডারে অংশ নেয়া সুশিতারয়েলনামের দুটি প্রতিষ্ঠান। তারা প্রকল্পের পুরো ক্রয়-প্রক্রিয়া নিয়ে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন মাউশি, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কাছে।

সুশিতা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটার শফিউল আলমের অভিযোগ- তার প্রতিষ্ঠান অন্তত চারটি লটের কাজে সর্বনিম্ন দরদাতা ছিল। এসব লটের কাজ অন্যদের দেয়া হয়েছে।

প্রকল্পটির অনিয়ম দুর্নীতির ঘটনা খতিয়ে দেখতে গত ১৯ মার্চ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

কমিটির আহ্বায়ক হলেন মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগের যুগ্মসচিব মাহমুদুল আলম এবং সদস্য হলেন শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের (ইইডি) নির্বাহী পরিচালক এসএম সাফিন হাসান। কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব . ফরহাদ হোসেন।

প্রকল্প অফিস থেকে জানা গেছে, ১৭টি লটে আসবাবপত্র কেনার খাতে মোট ৩৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকার মতো বরাদ্দ রয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে টাকা খরচ দেখাতে হবে।

টেন্ডারে অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ দেয়া হলে মোট ব্যয় হতো ২৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকার মতো। কিন্তু পছন্দের প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ দিতে গিয়ে এখন সরকারের গুনতে হবে ৩৩ কোটি টাকার বেশি।

আপন দেশ/এবি

 

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়