ফাইল ছবি
শামীমা নুর পাপিয়া। যুব মহিলা লীগের সাবেক নেত্রী। ২৭ বছরের সাজা নিয়ে আছেন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের। শুদ্ধির জন্য বন্দি রাখা হলেও সেখাই স্বরূপে ফিরেছেন তিনি। কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে পাপিয়ার সহিংসতার শিকার হচ্ছেন সাধারণ বন্দিরা। তার পিটুনীতে জ্ঞান হারিয়ে, হাসপাতালে নারী হাজতি।
জেল বিধি অনুযায়ী পাপিয়াকে ‘রাইটার’ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে। এ দায়িত্ব পাবার পর তিনি স্বরূপে ফিরেছেন। ভয়ংকর হয়ে উঠেছেন। সর্বশেষ তাঁর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন রুনা লায়লা নামে এক হাজতি। এ ঘটনায় রুনার ছোট ভাই জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও করেছেন। পরে গঠন করা হয়েছে দুটি তদন্ত কমিটি।
কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারের দায়িত্বশীল একটি সূত্র বলছে, নথি চুরির একটি মামলায় শিক্ষানবিস আইনজীবী রুনা লায়লাকে ১৭ জুন কাশিমপুর মহিলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়। কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে নেয়ার পর রুনার দেহ তল্লাশি করে কর্তব্যরত মেট্রন তাঁর কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা পান। ওই টাকা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য পাপিয়া ও তাঁর সমর্থক কয়েদিরা গত ১৯ জুন রুনার ওপর নির্যাতন শুরু করেন। এক পর্যায়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রুনাকে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। এ অভিযোগ রুনার পরিবারের।
আরও পড়ুন <> ‘বিয়ে যদি না করো তাহলে লিটনের ফ্ল্যাটে নিয়ে...’
দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, এ নিয়ে কারাগারের ভেতরে কেস টেবিল বা সালিশ বৈঠকখানা বসে। সেখানে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বন্দি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে পাপিয়ার ভয়ে সাধারণ কয়েদিরা রুনা লায়লার ওপর অমানসিক নির্যাতনের প্রতিবাদও করতে পারেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহিলা কারাগারের এক কর্মচারী জানান, রুনার ওপর নির্যাতন দেখে অন্য বন্দিরা শুধু কেঁদেছেন। ঘটনার পরপরই গুরুতর অবস্থায় রুনাকে কারা হাসপাতালে নেয়া হয়। রুনার ভাই আব্দুল করিম বলেন, নির্যাতনের ফলে তার বোন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পরও রুনাকে পেটানো হয়েছে।
এ নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে রোববার ( ২৫ জুন) একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন আব্দুল করিম।
কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র জেল সুপার ওবায়দুর রহমান বলেন, হাজতি রুনা লায়লাকে মারধর করা হয়েছে এটা সত্য। তবে পুরো বিষয়টিই আমার কাছে কৌশলে গোপন রাখা হয়েছিল। সালিশ-বৈঠকখানার সামনে সেদিন ত্রিমুখী সংর্ঘষ হয়।
তিনি বলেন, সাজাপ্রাপ্ত পাপিয়া ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না। তবে পরে এসে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। প্রকাশ্য তাঁর আয়ের উৎস ছিল গাড়ি বিক্রি ও সার্ভিসিংয়ের ব্যবসা। তবে এর আড়ালে তিনি অস্ত্র, মাদক ও দেহ ব্যবসায় জড়িত ছিলেন। ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিতে পাঁচতারকা হোটেলে সুন্দরী তরুণীদের পাঠিয়ে মনোরঞ্জন করতেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। এভাবে বিপুল সম্পদের মালিক হন তিনি। ২০২০ সালের শুরুতে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।
আপন দেশ / প্রতিনিধি/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।