Apan Desh | আপন দেশ

ইউপি সদস্যের দুটি এনআইডি, বেতন নেন দুই প্রতিষ্ঠান থেকে! 

বাগেরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১০:৩৭, ৫ আগস্ট ২০২৩

আপডেট: ১৭:০৯, ৫ আগস্ট ২০২৩

ইউপি সদস্যের দুটি এনআইডি, বেতন নেন দুই প্রতিষ্ঠান থেকে! 

ফাইল ছবি

বাগেরহাট: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী মো. কামাল হোসেন চাকরির পাশাপাশি সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তথ্য গোপন করে ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাপ্ত সম্মানি ভাতা তুলছেন নিয়মিত।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।

কামাল হোসেন মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামের নূর মোহাম্মদ খাঁনের ছেলে। ২০১৩ সালে তিনি বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী পদে চাকরি নেন। ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর সদর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বর নির্বাচিত হন। কামাল সদর ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতিও। ইউপি সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি লাইলী বেগম নামে এক নারীকে দিয়ে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন করাচ্ছেন।

এদিকে সরকারি দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে একই সঙ্গে ভাতা তোলার নিয়ম না থাকলেও, তথ্য গোপন করে প্রতিমাসে পরিষদের সদস্য হিসেবে সরকারি কোষাগার থেকে তিন হাজার ৬০০ টাকা সম্মানি নিচ্ছেন। পাশাপাশি বিশারীঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী হিসেবে বিদ্যালয়ে নিয়মিত দায়িত্বপালন না করে প্রতিমাসে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা বেতন নিচ্ছেন।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানাযায়, মো. কামাল হোসেনের নামে দুটি জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। তিনি প্রথম আইডিকার্ডটি করেন ২০০৮ সালে। সেখানে তার নাম লেখা রয়েছে মো. কামাল হোসেন। পিতা-নূর মোহাম্মাদ। জন্ম তারিখ-০১.০১.১৯৮৩। এর পরে বিদ্যালয়ে দপ্তরি পদে চাকরি নিতে প্রায় ১০ বছর বয়স কমিয়ে ২০১৩ সালে নিজের নাম ও পিতার নামে কিছুটা পরিবর্তন দেখিয়ে আরও একটি ভোটার আইডি করেন। সেখানে জন্ম তারিখ লেখা হয়েছে ১৫.৭.১৯৯৪। নাম মো. কামাল হোসেন খান।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. শাহাদাৎ হোসেন কম্পিউটারে সার্ভার দেখে বলেন, কামাল হোসেনের দুটি ভোটার আইডি সচল আছে। যার প্রথমটির নম্বর ০১১০৫২৮৩৮১০৫। দ্বিতীয়টির নম্বর ০১১০৫২০০০১৭৪। দুটি কার্ডে জন্ম তারিখ, নিজের নাম ও পিতার নামে কিছুটা পরিবর্তন রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ও সম্মানী গ্রহণের বিষয়ে কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচনের সময় সকল তথ্য দিয়েছি। তখন তো মনোনয়নপত্র বাতিল করেনি। আমি নিয়মিত স্কুলে চাকরি করি। পরিষদেও যাই। আমার অনুপস্থিতিতে অন্য একজন দায়িত্ব পালন করেন। এতে কোন সমস্যা তো আমি দেখি না।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াসমিন আক্তার বলেন, কামাল মাঝে মধ্যে থাকেন না। তখন তার পরিবর্তে লাইলী নামে এক মহিলা দায়িত্ব পালন করে। প্রতিমাসে কামালকেই নিয়মিত দায়িত্ব পালনের বিষয়ে প্রত্যয়ন দেয়া হয়।

প্রক্সির বিষয়ে লাইলী বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

ইউনিয়ন চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির মোল্লা বলেন, কামাল হোসেন একটি বিদ্যালয়ে চাকরি করেন তা জানি। এটিতে আইনগত কোনো বাঁধা আছে কিনা আমার জানা নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের করনিক দিপক কুমার দেবনাথ বলেন, কামাল হোসেন ইউপি সদস্য হিসেবে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত সরকারি অংশের সম্মানীর টাকা নিয়েছেন।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, কামাল হোসেনের বিষয়টি জানা ছিল না। মূলত দফতরি কাম নৈশ প্রহরীদের নিয়ন্ত্রণ করেন প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের প্রত্যায়নেই তাদের বেতন হয়। প্রধান শিক্ষক কামাল হোসেনের পক্ষে প্রতিমাসে প্রত্যয়ন দিয়েছে। কেন এই অনিয়মের বিষয় জানায়নি এবং অসত্য প্রত্যয়ন দিয়েছেন এজন্য প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এসএম তারেক সুলতান বলেন, বিদ্যালয়ের দফতরি ও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হিসেবে দুটি পদে একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন ও আর্থিক সুবিধা গ্রহণের সুযোগ নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপন দেশ/প্রতিনিধি/ আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়