ফাইল ছবি
প্রতিদিনই বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। বলা চলে অস্থির বাজার। ফলে নির্দিষ্ট ও সীমিত আয়ের মানুষেরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। অর্থাৎ ধুঁকছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। ঋণ করে সংসার চালাতে হচ্ছে স্বল্প আয়ের এসব মানুষকে। নতুবা সঞ্চয় ভেঙে খেতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানান, তাদের আয় বাড়েনি। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর বাকি সময়ে ব্যয় বেড়েছে হু হু করে। ফলে বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। এতে করে তারা বাজেটে কাটছাট করেছেন। এমনকি খাবারের পরিমাণও কমিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে তিনটি কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। তবে বাজারে অস্থিরতা কমাতে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও রাজধানীর বাজারগুলোতে তা কার্যকর হয়নি।
পাইকারি বাজারে বা আড়তে দাম না কমলে পণ্য তিনটির দাম খুচরা বাজারে কমা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, ফার্ম ও কোল্ডস্টোরেজে সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর না হলে, আমরা কীভাবে দাম কমাব? এজন্য সরকারকে আগে মূল জায়গায় বেঁধে দেয়া দাম কার্যকর করতে হবে। পড়ে খুচরা বাজারে মনিটরিং করতে হবে।
রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, মালিবাগ রেলগেট, খিলগাঁও রেলগেট, শান্তিনগর, মতিঝিল এজিবি কলোনি, মুগদা, রামপুরা, উলনসহ বিভিন্ন বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মাছ-মুরগি, সবজিসহ সব পণ্যের দাম বাড়তি। কাঁচা মরিচ, আদা ও টমেটোর দাম আবারো বেড়েছে। সবজি মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
এদিকে বাজারে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, নিত্যপণ্যের মজুত ও সরবরাহ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। বাজার ও গুদামে পণ্যের কোনো ঘাটতি নেই। সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে পণ্যের দাম বাড়ছে। নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য এক বা একাধিক পণ্য টার্গেট করে পরিকল্পিতভাবে দাম বাড়ানো হচ্ছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশে আলু, ডিম, পেঁয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে কারা ভোক্তার পকেট কেটেছে, অসাধু পন্থায় অতিমুনাফা করছে, সেই তথ্য সরকারের কাছে আছে। তাই ভোক্তাদের স্বার্থে অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। তবেই নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা কমবে।
আবুল কালাম রাজধানীর ইস্কাটনে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিন সদস্যের পরিবার নিয়ে থাকেন মগবাজার এলাকায়। তিনি বলেন, বাসা আর অফিস কাছাকাছি। যাতায়াত খরচ নেই। একটি মেয়ে ক্লাস ওয়ানে পড়ে। যে বেতন পাই তা বাসা ভাড়া দিয়েই শেষ। চাকরির পাশাপাশি ছোট একটা ব্যবসা করি। ব্যবসা আর চাকরি মিলে কোনোমতে সম্মান নিয়ে বেঁচে আছি।
কালাম আরও বলেন, গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল। মাসে একবার বাড়ি যাই। বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা আছেন। তাদের খরচসহ দেখভাল করতে হয়। যে আয় করি তার চেয়ে ব্যয় বেশি। তিনি বলেন, একটি কথা কি জানেন, আমরা যারা শিক্ষিত স্বল্প আয়ের মানুষ। আমাদের চেয়ে বেশি কষ্টে আর কেউ নেই। না পারি হাত পাততে, না নারি সম্মান নষ্ট করতে। বাজারের যে অবস্থা। ভয়ে বাজারে যাই না। কোনো মতে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি।
আরও পড়ুন <> পেঁয়াজ-ডিম, আলু বিক্রি হচ্ছে আগের দামেই
তেজতুরি বাজার এলাকায় থাকেন শরীফুল মিয়া। বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তগাছায়। শরীফুল বলেন, এভাবে চলা যায় না। প্রতি মাসেই ঋণ হতে হচ্ছে। বেতন বাড়ছে না। ইনক্রিমেন্ট নেই। সঞ্চয়তো দুরের কথা, ঢাকা শহরে বেতনের টাকা দিয়ে থাকা যায় না। যে বেতন পাই বাসা ভাড়া দিতেই শেষ। কিন্তু একশেণীর মানুষের কাছে টাকার অভাব নেই, তাদের কোনো সমস্য নেই। তারা টাকার পাহাড় বানাচ্ছে। সমস্যা শুধু আমাদের মতো মানুষের।
বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো. মোহসিন বলেন, দেশে জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বরের দিকে ডিমের দাম বাড়তি থাকে। তবে সরকার ডিমের যে দর নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে দরে আমরা ডিম বিক্রি করতে পারব যদি আমাদের শুধু ডিম বিক্রি করার জন্য সরকার একটি জায়গা নির্দিষ্ট করে দেয়। তাহলে ডিম বেশি হাতবদল হবে না। এতে খরচ কমবে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বলেছেন, যেসব ব্যবসায়ী আলু সংরক্ষণ করেছেন, তারা দাম বাড়াচ্ছেন। খুচরা বাজারে আলুর দাম ৩৬ টাকা কেজির বেশি হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, বাজার তদারকিতে সরকারের গাফিলতি আছে। তদারকির নামে সরকারি কর্মকর্তারা ফোন করে আলুর বাজারের তথ্য নিচ্ছেন, সরাসরি বাজারে গিয়ে খোঁজ নেন না। বিশেষ করে হিমাগারগুলোতে সরাসরি তদারকি না করলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ডিম, আলু ও দেশি পেঁয়াজ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দরে বিক্রি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেন সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকে সে জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে।তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজ, আলু, ডিমের বেঁধে দেয়া দাম শক্তভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। ভোক্তা অধিকারের যথেষ্ট পরিমাণ লোকের অভাব রয়েছে। এরপরেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আমরা শক্ত অবস্থানে রয়েছি।’
দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হঠাৎ করে অনেক বেড়ে গেছে। গত আগস্টে সার্বিক খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ। জুলাইয়ে এ হার ছিল নয় দশমিক ৭৬ শতাংশ। অর্থাৎ, আগস্টে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়েছে দুই দশমিক ৭৮ শতাংশ।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।