Apan Desh | আপন দেশ

আইএমএফের শর্ত পূরণে যেসব প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৫:৪৫, ১২ মে ২০২৪

আইএমএফের শর্ত পূরণে যেসব প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে

ছবি: সংগৃহীত

বৈশ্বিক ও দেশীয় মন্দার প্রভাব মোকাবেলার উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ। এজন্য ৪৫০ কোটি ডলারের ঋণ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ)। দুই কিস্তির অর্থও পেয়েছে বাংলাদেশ। দুই মাসের মধ্যে তৃতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা রয়েছে। তবে ঋণ পাওয়ার নামে সংস্থাটির নানান শর্ত মানতে হচ্ছে সরকারকে। এসব শর্তের প্রভাব পড়েছে আর্থিক ও মুদ্রা খাতে।

আইএমএফের শর্ত পূরণ করতে বাংলাদেশকে রাজস্ব হিসাবে আয় করতে হবে ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা। সেটাও ৩ অর্থবছরে। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই আদায় বাড়াতে হবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে রাজস্ব খাতে এমন সব নীতি-কৌশল নেয়া হচ্ছে, যার ফলে ভোক্তার ওপর বাড়ছে করের বোঝা। সব মিলিয়ে এসবের ইতিবাচকের চেয়ে নেতিবাচক ফল গিয়ে পড়ছে মানুষের জীবনযাপনে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ডিসেম্বরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৪৩ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। সরকার এরই মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে।

আরও পড়ুন>> দেশের অর্থনীতিতে স্পষ্ট ৭ বিপদ সংকেত

গণমাধ্যমকে এনবিআরের সাবেক সদস্য ড. সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, কিছু কিছু পদক্ষেপ রাজস্ব খাতের জন্য ইতিবাচক। তবে ঢালাওভাবে কর অবকাশ তুলে দিলে অনেক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কর্মসংস্থান সংকুচিত হবে। দেশের স্বার্থে ভালো হয়—এমনভাবে নীতি-কৌশল নিতে হবে।

২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে সাড়ে ৩ বছরের মেয়াদে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কার্যক্রমের বিপরীতে আইএমএফ অনেক শর্ত দেয়। রিজার্ভ ছাড়া প্রায় সব শর্ত পূরণ করে দুই দফায় দুই কিস্তির অর্থ পেয়েছেও বাংলাদেশ। এখন ছাড় হবে তৃতীয় কিস্তি। এ ব্যাপারে ইতিবাচক সায় দিয়েছে সংস্থাটি। এর কারণ, আর্থিক, মুদ্রা, রাজস্ব, জ্বালানিসহ বিভিন্ন খাতে যেসব শর্ত দিয়েছিল তারা, এর বেশির ভাগই সরকার এরই মধ্যে পালন করেছে। 

তবে আইএমএফ সন্তুষ্ট হলেও যেসব শর্ত তারা বাংলাদেশকে মানতে বাধ্য করেছে বা সামনে মানতে হবে। এর প্রভাব এরই মধ্যে ভোক্তাদের ওপর পড়তে শুরু করেছে।

তবে শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকার ডলার, ঋণের সুদহার, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সারের দাম যে হারে বাড়িয়েছে। প্রভাবে লাগামহীনভাবে বেড়েছে গণপরিবহনসহ বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দাম, তাতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।

বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানোর ফলে ঐসব খাতেও পণ্য ও সেবার দাম বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমুখী মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সংকুচিত হয়েছে। ফলে বাড়েনি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান।

আইএমএফের বেশিরভাগ শর্তই বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। যেমন- আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণে ক্রলিং পেগ পদ্ধতি (একটি নির্দিষ্ট সীমায় রেখে ডলারের দাম ওঠানামা) চালু করেছে। ফলে ব্যাংকগুলোতে ডলারের দাম বেড়ে গেছে। টাকার মান কমায় মূল্যস্ফীতিতে চাপ আরও বাড়ছে। এছাড়া বাড়তি সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে পুরো আর্থিক ব্যবস্থাপনাতেও চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

শিল্প ও বাণিজ্য খাতে প্রতিযোগিতা কমায় উৎপাদন কমেছে, বেড়েছে দাম। যার প্রভাব স্বাভাবিকভাবে ভোক্তার উপর পড়ছে।

এ পরিস্থিতিতে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বস্তুত আইএমএফের সব শর্ত পূরণের আগে সরকারের উচিত ছিল জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করা। এটি ঠিক, অর্থনৈতিক সংকট থেকে উদ্ধার পেতে সরকারকে আইএমএফের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। তবে আইএমএফের এ ঋণ অর্থনীতিকে সাময়িক স্বস্তি দিলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব যে রয়েই যাবে, তা বলাই বাহুল্য।

আপন দেশ/এসএমএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়