ফাইল ছবি
অতীতে আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলন করে মুদ্রানীতি ঘোষণা করে আসছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। যেখানে নানান বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিতেন গভর্নর। তবে দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে এবার ওয়েবসাইটে মুদ্রানীতি প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করা হয়। এদিন বিকেল ৩টার পর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে তা আপলোড করা হয়। এরপর তথ্যটা জানিয়ে দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম।
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে ব্যাংকঋণের সুদের হারের যে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রয়েছে, তা কিছুটা শ্লথ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রকাশিত মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার আর না বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি বা বিধিনিষেধ শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে সংস্থাটি।
আরও পড়ুন<> বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কারণে সাংবাদিকেরা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুষ্ঠান বর্জন করে আসছেন কয়েক মাস ধরে। এ কারণে এবার প্রথম সংবাদ সম্মেলন না করে মুদ্রানীতির সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
মুদ্রানীতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, এখন থেকে গাড়ি, ফলমূল, ফুল ও প্রসাধনী আমদানির ক্ষেত্রে শুধু ঋণপত্রের বিপরীতে নগদ অর্থ জমা দিয়ে এসব পণ্য আমদানি করতে হবে। এর বাইরে অন্য পণ্য আমদানিতে অগ্রিম অর্থ জমার বিষয়টি শিথিল করা হবে।
এদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৯.৮০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
গত অর্থবছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১০.৩৫ শতাংশ।
অথচ পুরো ২০২৩-২৪ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রাই ছিল ১০ শতাংশ। তবে গত অর্থবছরের জুন পর্যন্ত প্রকৃত প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯.৮০ শতাংশে। মুদ্রানীতি বিবরণী অনুযায়ী, সরকারি খাতে ঋণের আনুমানিক প্রবৃদ্ধি হবে ১৪.২০ শতাংশ।
নতুন মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আগের মতো রাখা হয়েছে। গত জুন পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৯.৮ শতাংশ। আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির এ হারই বহাল রাখা হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি জুন শেষে দাঁড়িয়েছে ১২.৮ শতাংশ।
নতুন মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়িয়ে ১৪.২ শতাংশ করা হয়েছে। অর্থাৎ ব্যাংক খাত থেকে সরকারকে আরও বেশি ঋণ গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন টাকা ছাপিয়ে (রিজার্ভ মানি) মুদ্রার সরবরাহ বাড়াবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। জুনে রিজার্ভ মানির প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.৯ শতাংশ। ডিসেম্বরে এ প্রবৃদ্ধি কমিয়ে ২ শতাংশ নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র জানান, মনিটারি পলিসি স্টেটমেন্ট জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪ বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েব সাইটে আপলোড করা হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সভায় এটি পাস হয়। তার আগে ১৪ জুলাই মুদ্রানীতি ঘোষণা সংক্রান্ত মূল কমিটি সভা করে। বুধবার অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, গবেষণা সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেয়া নীতিতে দুর্বলতা আছে। শুধু সংকোচন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসে না। বাজারে জিনিসপত্র আছে, কিন্তু বাজার মনিটরিং হচ্ছে না।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।