সাইফুল আলম মাসুদ
শেখ হাসিনা সরকারের আশির্বাদপুষ্ট এস আলম গ্রুপ নানা কৌশলে ব্যাংক থেকে টাকা লুটের চেষ্টা চালাচ্ছে। বুধবার চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের দুটি শাখা থেকে এসআলমের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুটি প্রতিষ্ঠান প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকা তুলে নেয়ার চেষ্টা করে বলে জানা গেছে। তবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের দেয়া দুটি চেকের পেমেন্ট আটকে দেয়ায় সফল হতে পারেনি। তা রুঁখে দিয়েছে ব্যাংক কর্মকর্তারা।
এদিকে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে আগের সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ট অসাধু সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী টাকা পাচারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সোমবার পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা পালানোর পর এখনো দেশে কোনো সরকার গঠিত হয়নি। এক রকম শূন্যতা বিরাজ করছে। অবৈধভাবে উপার্জিত টাকা সরিয়ে নেয়া ও বিদেশে পাচারের এটিই শেষ সুযোগ হিসেবে বিবেচনা করছে তারা। কারণ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর মনিটরিং বেড়ে গেলে দেশ থেকে টাকা পাচার কিছুটা কঠিন হয়ে যেতে পারে।
চলমান পরিস্থিতিতে টাকা পাচার ঠেকানোর লক্ষ্যে জরুরী বৈঠক ডেকেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্ট ইউনিট (বিএফআইইউ)। দেশের সব তফসিলি ব্যাংকের প্রধান এন্টি মানি লন্ডারিং অফিসারকে এ বৈঠকে যোগ দিতে বলা হয়েছে। বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে অর্থ পাচার ঠেকাতে করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
গত সোমবার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের অনেক আগে থেকেই এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদ (এস আলম) বিদেশে অবস্থান করছেন। দেশের বিভিন্ন ব্যাংক থেকে দু’হাতে টাকা লুটে তিনি সিঙ্গাপুরে সাম্রাজ্য গড়েছেন। সরকারের বিদায়ের পরও বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, বুধবার টপ টেন ট্রেডিং কোম্পানি নামের একটি কোম্পানি চট্টগ্রামে ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ করপোরেট শাখা থেকে এক চেকের মাধ্যমে ৫৪৮ কোটি টাকা উত্তোলন করার চেষ্টা করে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সন্দেহ হওয়ায় তারা চেকটির বিপরীতে টাকা প্রদান করেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আকিজ উদ্দিন এ অর্থ উত্তোলনের নেপথ্যে ছিলেন। এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম মাসুদের এক সময়ের ব্যক্তিগত সহকারী আকিজ উদ্দিনকে চলতি বছরের এপ্রিলে ইসলামী ব্যাংকে ডিএমডি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর তিনি একদিনও ব্যাংকে আসেননি।
গতকাল ইসলামী ব্যাংকের আগ্রাবাদ করপোরেট শাখা থেকে অপর একটি চেকের মাধ্যমে ৩২৫ কোটি টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করা হয়। তবে সন্দেহজনক হওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এটিও আটকে দেয়।
এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের কোনো বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন উর্ধতন কর্মকর্তা বলেছেন, এতদিন এস আলম গ্রুপের পেছনে সরকারের শক্তি সমর্থন থাকায় তারা নানা অনিয়ম-দুর্নীতি দেখেও প্রতিবাদ করতে পারেননি। কিন্তু এখন কাউকে একটি টাকাও অবৈধভাবে সরিয়ে নিতে দেয়া হবে না। দুর্নীতির দুষ্টচক্র ভেঙ্গে দিতে ২০১৭ সালের পর থেকে এস আলম গ্রুপের পৃষ্ঠপোষকতায় নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরকে ব্যাংক থেকে বের করে দেয়া হচ্ছে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।