চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশন
বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ মোটা অঙ্কের টাকা লোকসান ঠেকাতেই ট্রেনটি একেবারে ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করল। কৃষিপণ্য বহনকৃত উদ্বোধনী ট্রেনটি চাপাই নবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে ঢাকায় আসে দেড়শ ফাঁকা ডিমের খাঁচি নিয়ে। এর শুল্ক আসে মাত্র তিন শত ষাট টাকা। আর সে ট্রিপে রেল কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের লোকসান হয় প্রায় ৮ লাখ ৯৬ হাজার টাকা।
সরকার যে পরিকল্পনা নিয়ে সবজি ট্রেন চালু করেছিল তা ফলপ্রসূ হয়নি। প্রান্তিক কৃষকদের সময়ের সঙ্গে ট্রেনের সিডিউলে মিলেনি। তা ছাড়া প্রান্তিক কৃষকদের সঙ্গে রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার ও ঠাটারী বাজারের কাঁচামালের ব্যবসায়ী এবং আড়তদারদের সঙ্গে ব্যবসায়িক লেনদেনের যোগাযোগ না থাকায় কৃষকরা এ প্রক্রিয়ায় নিরুৎসাহিত হয়েছে। যার ফলে সবজি ট্রেনে সবজি পাঠায়নি প্রান্তিক কৃষকরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর রেলস্টেশন থেকে চালু হওয়া কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী শনিবার দ্বিতীয় দফায় সবজি ট্রেনটি যাবার কথা থাকলেও ট্রেনটি আর চলবে না।
রেলওয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রেনটির ব্যবজার নিয়ে কোনো প্রচারণা নেই। কৃষকদের সুবিধামতো সময়ে ট্রেন না চলায় জেলার কোনো কৃষকই এ ট্রেনে পণ্য সরবরাহ করেননি। এতে একদিনেই লোকসান হয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৭২ টাকা। আর এ লোকসান ঠেকাতেই রেল কর্তৃপক্ষ উত্তরবঙ্গে থেকে ঢাকামুখী সবজিসহ কৃষিপণ্য ট্রেন চলাচল বাতিল করেছে।
জানা গেছে, গত ২৬ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে ৩৪৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকা যেতে ট্রেনের খরচ হয় ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩২ টাকা। প্রথম দিন রাজশাহী থেকে ট্রেনটিতে গেছে ডিমের ১৫০ কেজি ফাঁকা খাঁচি (ক্যারেট)। যা থেকে রেল কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করেছে ৩৬০ টাকা। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ লোকসানে সবজি বহন ট্রেন চলবে না। শনিবার (২ নভেম্বর) রাতে বাংলাদেশ রেলওয়ের (পশ্চিমাঞ্চল) চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার সুজিত কুমার বিশ্বাস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ২৬ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করে কৃষিপণ্য স্পেশাল ট্রেন। সপ্তাহে একদিন অর্থাৎ প্রতি শনিবার ট্রেনটি রহনপুর-ঢাকা রুটে চলাচল করার কথা ছিল। কিন্তু শুক্রবার রাতে রেলওয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে ট্রেনটি আর চলবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়।
রেল কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, ট্রেন চালুর পর কৃষক বা কৃষিপণ্য ব্যবসায়ীদের তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। তারা ট্রেনে কৃষিপণ্য পরিবহনে আগ্রহী নন। সেজন্য ট্রেনটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সবজি না পাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সবজায়গাতেই প্রচার প্রচারণা করেছি। গত পরশুদিনও মুলাডলিতে বাজারে কথা বলেছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন। সবজি কেবল বাজারে উঠছে। প্রতিদিনই ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক ঢাকায় যায়। তবে প্রথম দিনে রাজশাহী পর্যন্ত কোনো সবজি পায়নি। ১৫০ কেজি ক্যারেট রাজশাহী থেকে ঢাকা যাচ্ছে। যাতে ৩৬০ টাকায় আদায় হয়েছে।
এদিকে রহনপুর থেকে ঢাকার দূরত্ব ৩৪৬ কিলোমিটার। ট্রেনটি পরিবহণ করতে খরচ হয় ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৪৩২। কিন্তু প্রথম দিনে ট্রেনটিতে গেছে মাত্র ১৫০ কেজি ক্যারেট। ফলে ট্রেনটি আয় করছে মাত্র ৩৬০ টাকা। প্রথম দিনে ট্রেনটিতে লোকসান হয়েছে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৭২ টাকা।
রাজশাহী স্টেশন ম্যানেজার শহিদুল আলম বলেন, আজ ট্রেনটির উদ্বোধন হলেও রাজশাহী থেকে কোনো সবজি বুকিং হয়নি। তবে ১৫০ কেজি ক্যারেট পাঠানো হয়েছে। ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন মাস্টার পাভেল হোসেন জানান, এ স্টেশন থেকে কৃষিপণ্য বুকিং হয়নি। একই কথা জানান সরদহ রোড, আড়ানি, আব্দুলপুর, আজিমনগর, চাটমোহর স্টেশন মাস্টার।
পশ্চিম রেলওয়ের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা সুজিত কুমার বিশ্বাস বলেন, আমরা কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন তৃণমূল প্রচার প্রচারণা চালিয়েছি। কৃষি বিপণন ও কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমেও প্রচার করেছি। মূলত কৃষকদের সঙ্গে ঢাকার ব্যবসায়ীদের সমন্বয় নেই। তারা কথা না বলে যদি মালামাল নিয়ে যায় তাহলে তারা ঝামেলায় পড়বে। তাই হয়ত কৃষক ফসল সংগ্রহ করতে পারেনি।
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।