ফাইল ছবি
চলছে ঋতুবদলের আয়োজন। হেমন্তের অর্ধেক চলে গেছে। বইতে শুরু করেছে হিম বাতাস। এটাই শীতের আগমনী বার্তা। দেশের বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে নানারকম শাক সবজি। দ্রব্যমূল্যের চরম গরমে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলবে। তবে হঠাৎ করেই ঊর্ধ্বমুখী তেলের বাজার। বেড়েছে চালের দামও।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। বাজারে উঠতে শুরু করেছে শীতকালীন নানা ধরনের সবজি। দোকানীরা পরম যত্নে সাজিয়ে রেখেছেন সবজি। গত সপ্তাহ তুলনায় হাতেগোনা দু-একটি ছাড়া বেশিরভাগ সবজির দাম কমছে। সরবরাহ বাড়ায় বাজারে সবজির দাম কমতে শুরু করেছে বলে জানান ব্যাবসায়ীরা।
এদিন মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৭০-৮০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, ঢ্যাঁড়শ ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, লতি ৬০-৭০ টাকা, কহি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ৫০ টাকা ও পটোল ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, গাজর ১৪০ টাকা, কচুরমুখী ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, শিম ৮০-১০০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়।
এছাড়া, প্রতি কেজি ধনেপাতা ৬০-৮০ টাকা, পেঁয়াজের কালি ৬০ টাকা ও চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। আর মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা।
এদিকে, নিম্নমুখী শাকের বাজারও। লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০-১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০ টাকা, লাউশাক ৪০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০-১৫ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।
রাজধানীর কমলাপুর কাঁচা বাজারে আসা ক্রেতা শরীফ আহমেদ বলেন, সবজির বাজার আগের তুলনায় কিছুটা কমতির দিকে। তবে তেল কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে। বিশেষ করে খোলা তেলের দাম অনেক বেড়েছে।
দাম কমছে কাঁচা মরিচেরও। খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়, আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা দরে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরবরাহ বেড়েছে কাঁচা মরিচের। এতে পাইকারি ও খুচরা উভয় পর্যায়েই কমেছে দাম।
বাজারে কমছে মুরগির দামও। কেজিতে ১০ টাকা কমে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৮০-১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০ থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।
মুরগি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ ঠিক থাকায় দাম কমেছে। তবে সামনে বিয়ের মৌসুম আসছে। সে সময় আবারও বাড়তে পারে মুরগির দাম। তবে বাজারে অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া, প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়।
নানা নাটকীয়তার পর স্বস্তি ফিরেছে ডিমের বাজারে; বিক্রি হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, উৎপাদক পর্যায় থেকে কম দামে ডিম কিনতে পারলে পাইকারি ও খুচরা বাজারেও নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা সম্ভব হবে।
বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৪৪-১৪৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকায়। এতে প্রতি পিস ডিমের দাম পড়ছে ১২ টাকা। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকায়।
সবজি ও মুরগির দাম কমলেও বাজারে এখনও চড়া চালের দাম। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, বাজারে মোটা চালের দর কেজিতে ৫২-৫৫ টাকা, আর চিকন চাল ৬৮-৮০ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে মোটা ও চিকন চালের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ১.৯ শতাংশ ও ২.৭৮ শতাংশ।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বরিশাল রাইছ এজেন্সির বিক্রেতা জানান, নতুন করে আর না বাড়লেও চালের দাম কমেনি। বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৭০-৭২ টাকা, আটাইশ ৬০-৬২ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে আমন ধান উঠা শুরু হলে বাজারে দাম কমতে শুরু করবে।
রমজানকে কেন্দ্র করে এখন থেকেই বাড়তে শুরু করেছে ছোলা ও তেলের দাম। বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৪০ টাকায়। আর প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ও পাম তেল যথাক্রমে বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ ও ১৮০ টাকা।
টিসিবির বাজারদরের তথ্যেও প্রমাণ মিলেছে দাম বৃদ্ধির। জানা যায়, এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১১ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। লিটারে ১২ শতাংশ পর্যন্ত দাম বেড়ে খোলা পাম তেল বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানকে কেন্দ্র করে ডিলাররা বাড়াতে শুরু করে পণ্যের দাম। পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছে না। এক মাসের ব্যবধানে তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
তবে বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে আগের বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া, প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।
আর খুচরা পর্যায়ে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ কেজি হারে বিক্রি হচ্ছে ২২০০-২৩০০ টাকায়, আর এক কেজি ওজনের ১৬০০-১৭০০ টাকায়। ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০-১৬০০ টাকা হারে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ১৩০০-১৪০০ টাকা পর্যন্ত। বিক্রেতারা বলছেন, প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ছে। তাই দাম এখনো বাড়েনি। সরবরাহ অনুযায়ী ইলিশের দাম ওঠানামা করে।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের দাবি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েরই। ক্রেতারা বলছেন, নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হয় না। এতে বিক্রেতারা ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর সুযোগ পান। আর বিক্রেতারা বলছেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে নিয়মিত অভিযান চালালে অসাধুদের দৌরাত্ম্য কমবে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।