Apan Desh | আপন দেশ

বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের আল্টিমেটাম

‘ব্র্যাক ব্যাংকের এমডিকে বক্তব্য প্রত্যাহারসহ ক্ষমা চাইতে হবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

আপডেট: ২৩:০৫, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

‘ব্র্যাক ব্যাংকের এমডিকে বক্তব্য প্রত্যাহারসহ ক্ষমা চাইতে হবে’

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুক্তিযুদ্ধ সংসদে প্রতিবাদ সভা করে সংক্ষুব্ধরা। প্রতিবাদ সভা। ইনসেটে এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন। ছবি-সংগৃহীত

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ-এবিবির চেয়ারম্যান সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেনের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার্স কাউন্সিল। একইসঙ্গে তাকে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থণাসহ বক্তব্য প্রত্যাহারের আহবান জানিয়েছে।

অন্যথায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মীদের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল তাকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাঙ্গণে অবাঞ্চিত ঘোষণার হুমকি দিয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করারও হুশিয়ারি দিয়েছে ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের সদস্যরা। সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

সভায় দাবি করা হয়, সেলিম রেজা ফরহাদ হোসেন গত ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন। সে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর উপস্থিতিত ছিলেন। ওই সেমিনারে রেজা ফরহাদ হোসেন অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ব্ল্যাকমেইল করছে। নিয়োগ বদলি ও প্রমোশনের বিষয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের চাপের কথা উল্লেখ করেন ওই অনুষ্ঠানে। তার এ বক্তব্যে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠে বাংলাদেশ ব্যাংকে।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুক্তিযুদ্ধ সংসদে প্রতিবাদ সভা করে সংক্ষুব্ধরা। সভা থেকে দাবি করা হয়- সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য-উপাত্ত বা প্রমাণ ছাড়ড়াই কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও এর কর্মকর্তাদের জড়িয়ে ঢালাওভাবে মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন।

বক্তরা বলেন, ব্যাংকারদের সংগঠনের প্রধান ও একটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রসঙ্গে তার নিকট পেশাদার দৃষ্টিভঙ্গি প্রত্যাশিত। কিন্তু তিনি তার বক্তব্যে চরম অপেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তার ওই অসত্য ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জন্য চরম অমর্যাদাকর। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপর থাকা জনমানুষের আস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা। বেনামী ঋণ প্রদান, লুটপাটে সহায়তা, ভূয়া ঋণ পত্র ইস্যু, অর্থ পাচারসহ ব্যাংকিং সেক্টরের বর্তমান দুর্দশার প্রাথমিক দায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যাংকের নির্বাহী প্রধানদের। ব্যাংকের নির্বাহী প্রধানদের সংগঠন এবিবির চেয়ারম্যান হিসেবে ফরহাদ হোসেন সার্বিক বিষয়ে অবগত থাকা সত্ত্বেও ৫ আগস্টের আগে তাকে এসব অনিয়মের বিষয়ে সোচ্চার হতে দেখা যায়নি।

আরও পড়ুন<<>> রূপালীর এমডি হতে সোনালীর ডিএমডি ওয়াহিদের জালিয়াতি!

সভায় বলা হয়, গত সময়ে এবিবি এবং বিএবি সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপর বিভিন্নভাবে অন্যায় প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট ছিলো। এ দুটি সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যাংকিং সেক্টরের দুর্বৃত্তায়ন এবং ব্যাংকিং আইন দুর্বলকরণের অভিযোগ রয়েছে। তারা ব্যাংকের টাকা প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রদান করে এসব আইন প্রণয়নকে প্রভাবিত করেছে। এছাড়াও, বিগত সরকারকে তুষ্ট করতে ব্যাংকের টাকায় বিশেষ দু'টি চলচ্চিত্র প্রদর্শনীসহ নানাবিধ অপেশাদার কর্মকান্ডের মাধ্যমে এবিবি প্রধান হিসেবে ব্যাংকিং সেক্টরকে ক্ষতিগ্রস্থ করে এখন নিজের দায় এড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিকে একের পর এক অভিযোগ তুলছেন। 

রেজা ফরহাদ হোসেন নিজের নিয়োগ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন নীতি প্রণয়নে ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে প্রায়শঃ প্রভাব রাখতে চেষ্টা করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মানতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তিনি কোন ব্যাংকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন না করেই রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে সরাসরি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেছেন। অন্যদিকে, এবিবির চেয়ারম্যান হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে তিনি নিজের ব্যাংকের বিশাল সংখ্যক কর্মীদের পদত্যাগে বাধ্য করেছেন যা ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য একটা কালো ইতিহাস-উল্লেখ করা হয় সভায়।

আরও পড়ুন<<>> রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক এখনো স্বাধীন হয়নি! পদোন্নতি মিলে তার ইশারায়

বক্তরা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, সম্প্রতি গঠিত টাস্কফোর্সের মাধ্যমে ব্যাংক খাতের অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। গভর্নরের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেখানে ব্যাংক খাতের সুশাসন ফিরিয়ে আনতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে ফরহাদ হোসেনের এ বক্তব্য দেশের আর্থিক খাতকে নতুনভাবে অস্থিতিশীল করে তোলার কোন ষড়যন্ত্রের অংশ কিনা তা খতিয়ে দেখা আবশ্যক।

বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ফরহাদ হোসেনের বক্তব্যের প্রতিটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণকসহ ব্যাখ্যা দাবি করছে। কিভাবে এবং কোন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাগণ বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ব্লাকমেইলিং করেছে তা এবং যারা করেছেন তাদের নাম প্রকাশ করতে হবে। অন্যথায়, বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মীদের পক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল তাকে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রাঙ্গণে অবাঞ্চিত ঘোষণা করবে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য হবে-জানান প্রতিবাদকারীরা। -বিজ্ঞপ্তি

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়