ছবি : আপন দেশ
চলছে অগ্রহায়নের শেষ দশক। শীতের আগমনী বার্তা দিয়ে বিদায় নিতে যাচ্ছে ঋতুরানী হেমন্ত। বাজারে উঠছে শীতকালীন নানা ধরণের সবজি। আগের তুলনায় সরবরাহ বাড়ায় দাম কিছুটা কমেছে। ফলে জনমনে স্বস্তি এছেছে। তবে অস্বস্তিতে ফেলেছে সয়াবিন তেল। হঠাৎ করেই বাজার থেকে উধাও এ ভোজ্যতেল।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন মানেই সকাল সকাল উঠে ব্যাগ গুছিয়ে বাজারে যেতে হবে। লম্বা লিস্ট ধরিয়ে দিয়ে বলা হয় এটা নেই সেটা নেই। সব আনতে হবে। মাস শেষ পকেটের অবস্থা যাই থাকুক বাজারে যেতেই হবে। না হলে আবার দুপুরের খাবার জুটবে না। শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) সকালে যাত্রা পথে এ প্রতিবেদককে কথাগুলো বলেন চাকরিজীবী সোহেল রানা। এরপর প্রতিবেদক চলে যায় তার অফিসের দিকে আর সোহেল যায় বাজারে।
অফিসে যাওয়ার পথে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে আগের গত সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম কমেছে। যেমন আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা কমেছে। ডিমের দাম ডজনে ৫ টাকা কমে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি ও লাউ পিস হিসেবে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা কমেছে। তবে বাজার থেকে অনেকটা উধাও হয়ে গেছে সয়াবিন তেল। অনেকেই বলছেন এটা কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়েছে।
কমলাপুর বাজারের গিয়ে দেখা যায় এসব চিত্র। বিক্রেতারা বলছেন, গত শুক্রবারও বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আলু ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা মঙ্গলবারে এসে ৫ টাকা কমেছে। সরবরাহ বাড়ায় শীতকালীন সবজির দামও কমেছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি ও লাউ পিস হিসেবে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা কমেছে। প্রতি কেজি টমেটো ১৩০ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০ টাকা। একইভাবে প্রতিকেজি গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০-১১০ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ১৪০-১৫০ টাকা।
সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম ৫ টাকা কমে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতা আরাফাত হোসেন বলেন, বাজারে শীতকালীন সবজির জোগান বেড়েছে। ডিমের ওপর চাপ কিছুটা কম। গত সপ্তাহে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকায়, গত বুধবার থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আরেক দোকানদার জানিয়েছেন, এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা কমেছে পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়, আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা। একইভাবে ৫ থেকে ১০ টাকা দাম কমে প্রতি কেজি ছোলা ১২৫ টাকা থেকে ১৪০ টাকায় ও প্রতিকেজি চিনি ১২৫ টাকা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মাছের মধ্যে আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ও কাতল ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙ্গাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আকারভেদে ইলিশের দাম দেড় হাজার থেকে ২২০০ টাকার মধ্যে।
দেশি মুরগি ও খাসির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাংসের মধ্যে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা দরে। সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, পাকিস্তানি কক মুরগি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস হাড় ছাড়া ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের চালের দাম খুচরায় গত সপ্তাহে কেজিতে ২-৩ টাকা করে বেড়েছিল। চলতি সপ্তাহেও সেই বাড়তি দর অব্যাহত আছে। কাটারিভোগ আতপ ২৫ কেজির বস্তা ২১০০ টাকা, বেতি আতপ ৩২৫০ থেকে ৩৩০০ টাকা, হাফ সেদ্ধ নাজিরশাইল ২২০০ টাকা ও পাইজাম আতপ ১৭৮০ থেকে ১৭৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এদিকে মুগদা বাজারের ৫-৬টি মুদি দোকান ঘুরে মেলেনি কোনো সয়াবিন তেল। আরিফ নামের একজন বিক্রেতা বলেন, কোম্পানি রেট বাড়াবে, এখন সাপ্লাই বন্ধ। ২-৩ দিন ধরে কোনো সয়াবিন তেল দিচ্ছে না।
আরেক বিক্রেতা বলেন, অনেক দোকানে সয়াবিন তেল নাই। অনেকেই আবার মজুত করে রাখছেন দাম বাড়লে বেশি দামে বিক্রি করবে।
কয়েকটি দোকানে প্যাকেটজাত সয়াবিন পাওয়া গেছে। তারা তেল বিক্রি করছে গায়ের রেটেই। রূপচাদা ১ লিটার সয়াবিন তেল ১৬৭, ৩ লিটার ৩৩৪ টাকা ও ৫ লিটার ৮১৮ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সম্প্রতি শুল্ক, কর কমিয়ে সয়াবিন তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু সয়াবিনের দাম কমেনি। বিক্রেতারা বলছেন, তারা চাহিদার ১০ শতাংশ তেলও পাচ্ছেন না।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।