সৈয়দ মিজানুর রহমান ও আহসান এইচ মনসুর। ফাইল ছবি
গুরুদায়িত্ব পাবার পরদিনই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে একহাত নিলেন এবি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান।
ব্যাংক খাতে গ্রাহকদের আস্থাহীনতা ও চলমান অস্থিরতার জন্য তিনি গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে দায়ী করেছেন।
সোমবার (০৯ ডিসেম্বর) ব্যাংকটির ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপসহ চারটি নতুন সেবা বাজারে আনা উপলক্ষ্যে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গভর্নরকে অভিযুক্ত করে বক্তব্য দিলেন তিনি। এ সময় সংকটাপন্ন এ ব্যাংকটিতে স্বাধীন নিরীক্ষা (ইন্ডিপেন্ডেন্ট অডিট) না চালানোর পক্ষেও নিজের অবস্থান তুলে ধরেন সৈয়দ মিজানুর।
রাজধানীর হোটেল আমারিতে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনের একদিন আগেই ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন মিজানুর রহমান। এবি ব্যাংকের এমডি তারিক আফজাল অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করলে ব্যাংক পর্ষদ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমানকে চলতি দায়িত্ব দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, কার্যক্রম শুরুর প্রথমদিন থেকেই এবি ব্যাংকের সেবা ভালো ছিলো। কিন্তু ব্যাংক খাতে অনাস্থা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে খাতটি চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এবি ব্যাংকও বর্তমানে চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ব্যাংক খাতে অনাস্থার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরকে দায়ী করে সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ব্যাংক খাতে আমরা গভর্নরের বার্তা ঠিকভাবে পাচ্ছি না। যে কারণে ব্যাংকগুলোর ওপর গ্রাহক আস্থা পাচ্ছেন না। গভর্নরের পক্ষ থেকে ব্যাংক খাতে সঠিক বার্তা আসলে আর্থিক খাতের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে আমার বিশ্বাস।
২০১৯ সাল থেকেই ব্যাংকটি ৫ শতাংশের নিচে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে আসছে। সবশেষ দুই বছরে দিয়েছে ২ শতাংশ হারে। শেয়ার দর এখনো অভিহিত মূল্য (১০ টাকা) এর নিচে সাড়ে ৭টাকায় লেনদেন হচ্ছে। এতে বিনেয়োগকারিরা লোকসান গুনছেন ব্যাংকটিতে বিনিয়োগ করে।
গত কয়েক বছরের ও সদ্য পদত্যাগ করা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সময়ে দেয়া ঋণের উপর স্বতন্ত্রভাবে নিরিক্ষীক নিয়োগ দিয়ে নিরপেক্ষভাবে নিরিক্ষা করার উদ্যোগ নেয়া হবে কি না, প্রশ্নে সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের অডিট হয়েছে, ব্যাংক প্রতিবছর অডিট করে। এরপর নতুন করে কোনো অডিটের প্রয়োজন দেখছি না। শেয়ার দর হিসাবে বিনিয়োগকারীরা লোকসানে আছে। সংকট কেটে গেলে ভালো মুনাফা দিতে পারবে ব্যাংক’ মন্ত্যব্য তার।
এদিকে ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বক্তব্যের বিপরীত কথা বলেছেন ব্যাংকটির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক জেড এম বাবর খান।
তিনি বলেন, আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা পাচ্ছি৷ পাশাপাশি আমরা সবসময় আমাদের গ্রাহকদের পাশে পেয়েছি।
আরও পড়ুন<<>> কানাডা থেকে এবি ব্যাংকের এমডির পদত্যাগ
ব্যাংকটির পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, এবি ব্যাংক অনেক সেবা বাজারে আনছে। সামনের দিনগুলোতে ডিজিটাল বেজ্ড সেবা চালু করা উচিত। তারিক আফজাল (সাবেক এমডি) এখন এবি ব্যাংকে নেই। নতুন নেতৃত্বে এ ব্যাংকটিকে এগিয়ে নিতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এবি ব্যাংকের ইন্টারনেট ব্যাংকিং অ্যাপের নাম দেয়া হয়েছে ‘এবি ডিরেক্ট’। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি এবি ইলহাম, এবি আমানী, কোটিপতি ডিপোজিট স্কিম (কেডিএস) ও এবি স্বাচ্ছন্দ্য নামে চারটি নতুন পণ্যসেবা গ্রাহকদের জন্য নিয়ে এসেছে।
এবি ডিরেক্ট ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহকগণ ঘরে বসে আধুনিক সকল ব্যাংকিং সুবিধা পাবেন। এছাড়া ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক মুদারাবা ডিপোজিট একাউন্ট ‘এবি ইলহাম’ দিচ্ছে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিককে আকর্ষণীয় মুনাফা লাভের সুযোগ। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক একাউন্ট ’এবি আমানী’ নারী গ্রাহকদের জন্য বিশেষ একটি সঞ্চয়ী হিসাব, যেখানে রয়েছে ইন্স্যুরেন্সসহ আরও বিশেষ কিছু সুবিধা।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, মাসিক সঞ্চয়ের ভিত্তিতে যেকোনো আমানতকারীকে কোটিপতি হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দিতে এবি কোটিপতি ডিপোজিট স্কিম আনা হয়েছে। যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই একাউন্ট খুলতে পারবেন।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম, হেড অব ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন তানিয়া সাত্তার খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।