ছবি : আপন দেশ
পৌষের মাঝামাঝি দেশজুড়ে জেঁকে বসেছে শীত। কুয়াশায় ঢাকা দেশের অধিকাংশ এলাকা। সূর্যের দেখা নেই দু’দিন ধরেই। হাড় কাপানো কনকনে ঠাণ্ডায় কম্বলের নিচে থাকতেই ভাল লাগে। কিন্তু পেট তো আর শীত মানে না। তাই তো অনিচ্ছা সত্বেও জীবিকার তাগিদে বেড় হতে হয়ে কর্মজীবী মানুষকে। রোজগার করেই ছুটতে হয় বাজারে।
ভরা মৌসুমে অবশ্য শীতকালীন সবজিতে ভরপুর বাজারগুলো। ততে বেশ স্বস্তি মিলেছে। তবে অস্বস্তি ছড়াচ্ছে বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য উপকরণ চাল। রাজধানীর বাজারে শীতকালীন সবজির দাম অনেকটা কমে এসেছে। তবে ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার হতাশ করেছে সাধারণ ক্রেতাদের।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (০৩ জানুয়ারি) রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজারে ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের ৪০ টাকার মুলা দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকায়, ৪০ টাকার ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১০ টাকা কমে ৩০ টাকা, ৪০ টাকার পেঁপে ৩০ টাকা, ৫০ টাকার শালগম ৪০ টাকায়, ৬০ টাকার শিম ৪০ থেকে ৫০, শশা ১০ টাকা কমে ৫০, ৬০ টাকার গোল বেগুন ৫০, লম্বা বেগুন ৩০ থেকে ৪০, ৪০ টাকার কলার হালি ৩০, লাউ প্রতিটি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া গত সপ্তাহের মতো করলা, পটোল, ঝিঙা ও ধুন্দল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শশা ৫০, গাজর ৬০, লালশাক, পালং, কলমি ও ভাতি শাক প্রতি আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাড়া-মহল্লার বাজারে সবজির মানভেদে দামের পার্থক্য রয়েছে।
শাজাহানপুরের সবজি বিক্রেতা জহুরুল ইসলাম বলেন, আগের তুলনায় সবজির দাম অনেক কমেছে। এখন সরবরাহ বেশি হওয়ায় কম দামে স্বস্তিমত ক্রেতার হাতে সবজি তুলে দিতে পারছি। এতে ক্রেতারাও খুশি হচ্ছেন।
আমিনুল নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজার শীতকালীন সবজিতে ভরপুর। এতে দাম কমছে। এমন দাম থাকলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য সুবিধা।
গত সপ্তাহেও আলু-পেঁয়াজের দাম ছিল কমতির দিকেই। চলতি সপ্তাহেও কিছুটা কমেছে। গত সপ্তাহের ৫৫-৬০ টাকার আলু প্রতি কেজিতে ৫ টাকা কমে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে কেউ কেউ ৬০ টাকা দরেও বিক্রি করছে। দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজিতে ৫ টাকা কমে ৫০ থেকে ৫৫, ভারতীয় নতুন পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। এ ছাড়া দেশি রসুন ২৫০ ও ভারতীয় রসুন প্রতি কেজি ২২০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা, নতুন ভারতীয় আদা ১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজির দাম কমলেও বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম। ৬০ টাকার নিচে ভালো মানের কোনো চাল নেই বাজারে। আমনের ভরা মৌসুমেও দাম কমছে না চালের। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে মিনিকেট চালের দাম। দুই সপ্তাহ আগে মিনিকেটের দাম ছিল ৭৫ টাকা, যা বর্তমানে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি নতুন আটাশ ৬০, পুরোনো আটাশ ৬৫, পাইজাম ৬০, কাটারিভোগ ৮৫ টাকা, বাসমতী ৯৪-৯৮, পোলাওর চাল ১২০ থেকে ১২৫ টাকা ও আমন ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
কমলাপুরের চাল বিক্রেতা আলিফ বলেন, আমি বেশি দামে কিনে বেশিতেই বিক্রি করি। মিলারদের কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম। বাড়তি দামের প্রভাবে মানুষ চাল কম কিনছেন। ফলে কমেছে চালের বেচাকেনাও।
এক ক্রেতা বলেন, সবজির দাম কমলেও চালের দাম কমার কোনো নামগন্ধ নেই। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে বাজার করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। সরকারের উচিত ভালোভাবে চালের বাজারে অভিযান চালানো। তাহলে হয়তো দাম কমতে পারে।
চালের দাম বাড়লেও আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্যতেল। বোতলজাত পাঁচ লিটারের সয়াবিন ৮৫০ এবং এক লিটার ১৭৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া খোলা পামওয়েল প্রতি লিটার ১৬০ ও কেজি ১৭৫ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
গত সপ্তাহের ৩৫০ টাকার সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৪০ টাকায়। এক কেজি ওজনের ব্রয়লার মুরগি ২০০ থেকে ২১০ টাকা প্রতি কেজি, ২ থেকে ৩ কেজি ওজনের ব্রয়লার ১০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে পাড়া-মহল্লার বাজারে ৫০ টাকা হালি ফার্মের ডিম ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
মাছের বাজারে পাঁচ কেজি ওজনের রুই ৫০০ টাকা কেজি, ছোট রুই ২৫০, পাবদা আকারভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০, চাষের শিং ৪৫০ থেকে ৭০০, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০, কৈ আকারভেদে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০, এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২০০ ও জাটকা ইলিশ ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ১৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ এবং হাড় ছাড়া গরুর মাংস ৯৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।