ছবি: আপন দেশ
ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের বিভিন্ন অনিয়মে জড়িত হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। অনিয়মের প্রেক্ষিতে ৬ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ আব্দুল জলিলকে ইসি চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করেছে। জলিল বর্তমানে পর্ষদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন। এখন পর্ষদ সদস্য পদ থেকে অপসারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালক আপন দেশ'কে বলেন, ইসলামী ব্যাংকের ইসি চেয়ারম্যানের বিষয়ে আমরা গভর্নরের ইন্সট্রাকশন পেয়েছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, হয়তো করেছেনও।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ ডিসেম্বর একটি খেলাপি প্রতিষ্ঠানকে ২৫০ কোটি ঋণ অনুমোদন করে ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি (ইসি)। বিষয়টি জানতে পেরে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি টিম তদন্তে যায়। তদন্ত কর্মকর্তারা এ ঋণ অনুমোদনের ক্ষেত্রে ইসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের সরাসরি সম্পৃক্ততা পায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তির মুখে ওই ঋণ অনুমোদন বাতিল করে পরিচালনা পর্ষদে পাঠায় ইসি।
আরও পড়ুন<<>> এবার জলিলে ডুবছে ইসলামী ব্যাংক!
অনিয়মে ভর করে দেয়া জলিলের ঋণ প্রস্তাব বাতিল করেছে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। প্রামাণিত হয়েছে জলিলের অনিয়ম। এ পরিস্থিতিতে জলিলকে শাস্তির আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাইছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ এ ব্যাংকটিতে অনিয়মকারী আব্দুল জলিল ইস্যুতে ফাইল চালাচালিতে বেশ তপ্ত হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাকে বাঁচাতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকেরই পরিচালক পদমর্যাদার কিছু কর্মকর্তা। তবে গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের শক্ত অবস্থানের কারণে শেষ রক্ষা হচ্ছেনা আব্দুল জলিলের।
আরও পড়ুন<<>> ওয়াকিদের স্মার্ট ক্যারিশমায় শীর্ষ খেলাপিরাও পেত সিআইবি ছাড়পত্র
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা কথা বলেছেন আপন দেশের সঙ্গে। আইনী বাধ্যবাধকতা থাকায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেছেন, বিগত সরকারের আমলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গুটিকয়েক কর্মকর্তার সহযোগিতার কারণে বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ ব্যাংক লুট করার সুযোগ পেয়েছে। বর্তমান সরকার চাচ্ছে আর্থিক খাতে সুশাসন ফেরাতে। কিন্তু আগের মতো অনিয়মকারীদের বাঁচাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা ঢাল হয়ে দাঁড়ালে সরকারের উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরসরকার পতনের পর ইসলামী ব্যাংকসহ সমস্যাগ্রস্ত ১১ ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংকের এ পুনর্গঠিত বোর্ডেরই সদস্য ইসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগকৃত এ পর্ষদ সদস্য ঋণ ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মে জড়িয়েছে। ফলে আবারও ইমেজ সংকটে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাই, আব্দুল জলিলকে শাস্তির আওতায় এনে দৃষ্টান্ত স্থাপনের মাধ্যমে অন্য ১০টি ব্যাংকের পর্ষদ সদস্যদেরও সতর্কবার্তা দিতে চাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন<<>> ন্যাশনাল লাইফের সাড়ে চারশ’ কোটি টাকা মোরশেদের পেটে
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা আপন দেশ’কে বলেন, ৫ আগস্টের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুততার সঙ্গে ১১টি ব্যাংকের বোর্ড পুনর্গঠন করে দিয়েছিল। তখন কিন্তু খুব বেশি যাচাই বাছাই করার সুযোগ ছিল না। এখন যদি কেউ অনিয়ম করে এবং এ অনিয়ম প্রমাণিত হয়, তাহলে তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনা উচিত। বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে পর্ষদ থেকে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে বসাতে পারে, অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের মৌখিক পরামর্শে ওই ব্যাংকের পর্ষদ অভিযুক্ত সদস্যকে বাদ দিয়ে নতুন কাউকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে বাকিরাও সতর্ক হবে।
আপন দেশ/এবি
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।