ছবি : আপন দেশ
উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে বলা হয় অর্থনীতির নীরব ঘাতক। এ ঘাতক কতটা নির্মম হতে পারে, নিম্নআয়ের মানুষেরা তা হাড়ে হাড়ে টের পান। মূল্যস্ফীতির চাপে নিষ্পেষিত হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। নিম্ন মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের স্বল্প আয়ের বড় অংশ চলে যাচ্ছে খাদ্যের পেছনে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে ফেলেছে চাল ও তেল।
শীতকালীন সবজিতে এখন বাজার ভরপুর। তাই দাম কিছুটা কম। সবজি ছাড়া আর কোনো নিত্যপণ্যের দাম ক্রেতার নাগালের মধ্যে নেই। আমনের ভরা মৌসুমেও বেড়েছে চালের দাম। মাছ, মুরগি ও মাংস সবকিছুরই দাম রীতিমতো আকাশচুম্বি।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাজধানীর বেশ কিছু বাজার ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।
সরেজমিনে কমলাপুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি টমেটো ৫০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা, ফুলকপি ২০ টাকা, বাঁধা কপি ২০-৩০ টাকা, পেঁয়াজের কালি ১৫ টাকা আটি, চিচিঙ্গা ৪০, সিম প্রকার ভেদে ২০-৪০ টাকা, কাঁচা মিষ্টি কুমড়া মাঝাড়ি আকাড়ের প্রতি পিস ৪০ টাকা, কাঁচামরিচ কেজি ৪০-৬০ টাকা, লাউ আকার ভেদে প্রতি পিস ৩০-৪০, কালো বেগুন ৫০, লম্বা বেগুন ৪০, শালগম ২০, শশা ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া নতুন আলু ৩৫ টাকা, নতুন দেশি পিঁয়াজ ৫০ টাকা, ইন্ডিয়ান রসুন ২২০-২৪০ টাকা, দেশি আদা ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা জহুরুল ইসলাম বলেন, এখন বাজার কিছুটা স্থিতিশীল আছে। সবজির সরবরাহ বেশি তাই দাম কম, ক্রেতাদের ভোগান্তি কিছুটা কমেছে। শাক-সবজির দাম এর চেয়ে কমা আর সম্ভব না।
রফিকুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, এখন কিছুটা স্বস্তিতে আছি। আগে ৫০০ টাকা নিয়ে বাজারে আসলে দুই/তিনটা সবজি নিতেই টাকা শেষ হয়ে যেত কিন্তু এখন এই টাকায় ব্যাগ ভরেই বাজার নিয়ে ফিরতে পারছি। সরকারের উচিৎ মধ্যস্বত্বভোগীদের দিকে নজর দিয়ে কৃষক ও ভোক্তাকে স্বস্তি দেয়া।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা যায় প্রতি কেজি পাবদা ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, চাষের শিং ৫০০ থেকে ৫৫০, আকারভেদে চাষের পাঙ্গাশ ১৮০-২২০ টাকা, ১ কেজি ওজনের রুই ২৫০, ৪ থেকে ৫ কেজির রুই ৪৫০ টাকা এবং চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকায়। আর আকারভেদে প্রতি কেজি কাতলা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা ও চিতল ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি দেশি শিং ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার এবং শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার ওপরে। তবে ঝাটকার দাম ৫০০ টাকার মধ্যে।
মাংসের দামও ঊর্ধ্বমুখী বাজারে। প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০-২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০-৬৫০ টাকা। আর প্রতি পিস দেশি হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি খাসির মাংস বেড়েছে ৫০ টাকা। বর্তমান দাম ১২০০ টাকা। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। আর হাড়ছাড়া মাংস প্রতি কেজি ৯৫০ টাকা।
শ্রমিক আরিফ বলেন, সারা বছর মাছ-মাংসের দাম বেশিই থাকে। ঈদ ছাড়া মাংস চোখেই দেখি না। এ আয় দিয়ে বড় মাছ বা গরুর মাংস কি না, সম্ভব না।
মাংস বিক্রেতা হাসান বলেন, বাজার থেকে গরু কিনে আনার পর প্রতি কেজির দাম পড়ে ৭৩৭ টাকা। তাহলে কত টাকা কেজি বিক্রি করব? এ ছাড়া দোকান ভাড়া ও যাতায়াত খরচও রয়েছে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি মিনিকেট ও নাজির শাইল ৭৫ থেকে ৮০, আটাশ ৬০ থেকে ৬৫, বাসমতী ১০০ এবং পাইজাম ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা বিক্রি হচ্ছে। তবে এই চাল নিউমার্কেট ও পাড়া মহল্লার খুচরা বাজারে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা করে বেশি।
তবে অপরিবর্তিত রয়েছে আলু, পেঁয়াজ ও সয়াবিন তেলের দাম। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ১৮৫, খোলা পামতেল ও সুপার প্রতি কেজি ১৭৫ টাকা, বোতলজাত সয়াবিন ৫ লিটার ৮৪০ থেকে ৮৫০ এবং ১ লিটার ১৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।