
ছবি : আপন দেশ
অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের মতই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছিল আলু, পেয়াজসহ নানা ধরনের সবজি। তবে শীতের শুরু থেকেই কমতে শুরু করে সবজির দামে। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নানারকম সবজিতে ভরপুর হয়ে উঠে কাঁচাবাজার। ফলে শীতল হয়ে আসে সবজি বাজার, তাতে স্বস্তি ফেরে ক্রেতাদের মধ্যে। কিন্তু অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায় চাল ও তেল। গত কয়েক মাস ধরেই চলছে এ দুই পণ্য নিয়ে অস্থিরতা চলছে।
এবার ভরা মৌসুমে চালের দাম কেজিপ্রতি ৪-৬ টাকা বেড়েছিল, যা এখন পাইকারি পর্যায়ে ১-২ টাকা করে কমতে শুরু করেছে। তবে বাজারে সয়াবিন তেলের যে সরবরাহ সংকট ছিল, সেটা এখনো কাটেনি, বরং আরও বাড়ছে। ভোক্তাদের চিন্তা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে আসন্ন পবিত্র রমজান।
প্রতি বছর রোজা শুরু হওয়ার আগে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে পণ্যের দাম বাড়ানো দেশের ব্যবসায়ীদের ‘ঐতিহ্যগত অভ্যাস’। এবারও একই ঘটনার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। হঠাৎ বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল। অথচ কয়েক দিন আগেই সয়াবিন তেলের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৮ টাকা। রোজার আগে আরেক দফা বাড়তে তৎপর তেল সিন্ডিকেট।
এদিকে মুরগি, মাংস, ডিমের দাম ওঠানামা করলেও মাছের দাম রয়েছে আগের মতো বাড়তি। গত কয়েক মাস ধরে বাড়তি দামেই মাছ বিক্রি হচ্ছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে সরেজমিনে রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
শীতকালীন সবজির সরবরাহ বেশি থাকায় এখনও স্বস্তিদায়ক দামেই পাওয়া যাচ্ছে সবজি। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে বড় সাইজের ফুলকপি ১৫-২০ টাকায়, বাধা কপি ২০ টাকায়, লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৩৫ টাকায়, গোল বেগুন ৬০ টাকা, টমেটো ৩০ টাকায়, পেঁপে ৩৫ টাকায়, শালগম ৩০ টাকায়, ঝিঙা ৬০ টাকায় ও পেঁয়াজের ফুল প্রতি মুঠো ১০ টাকায়, মুলা ১৫ টাকায়, গাজর ২০ টাকায়, করলা ৬০ টাকায়, শসা ৩০-৪০ টাকায়, শিম ৩০-৫০ টাকায়, শিমের বিচি ১০০ টাকায়, মটরশুঁটি ১২০ টাকা, ধনিয়া পাতা ৬০-৭০ টাকায়, কাচা মরিচ ৬০ টাকায়, প্রতি পিস লাউ মাঝারি ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও কিছুটা দাম কমে প্রতি কেজি আদা ১৪০ টাকা, রসুন ১৫০ টাকা, পেয়াজ ৫০ টাকা, নতুন আলু ৩০ টাকা, লাল আলু ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
ক্রেতাদের সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে সয়াবিন তেলের দাম ও সরবরাহ সংকট। দেড় মাস আগেও এ ধরনের সরবরাহ সংকট তৈরি করেছিল কোম্পানিগুলো। এরপর সরকার কেজিপ্রতি সয়াবিন তেলের দাম ৮ টাকা করে বাড়িয়ে দেয়। এরপর দু-এক সপ্তাহ সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও গত দুই সপ্তাহ ধরে আবারও সংকট তৈরি হয়েছে।
কমলাপুর বাজারে কয়েকটি দোকান ঘুরে তিনটি দোকানে সয়াবিন তেল পাওয়া গেছে। বিক্রেতারা জানান, কোম্পানি সরাসরি তেলের অর্ডার নিচ্ছে না। তাদের কিছু ডিলার এখন তেল বিক্রি করছে ব্ল্যাক মার্কেটের মতো নিজের দোকান থেকে। সেটাও আমাদের কাছে-ই গায়ের রেটে বিক্রি করছে, সে তেল নিজে পরিবহন খরচ দিয়ে দোকানে এনে বিক্রি করলে প্রতি লিটার তেলে দু-তিন টাকা বেশি দাম পড়বে।
সপ্তাহের ব্যবধানে ফার্মের লাল ডিমের দাম কিছুটা কমলেও অন্যান্য পণ্যের দামের তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি। ৫ টাকা কমে বড় বাজারে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে প্রতি ডজন ডিম ১৪০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
অপরিবর্তিত দামেই বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের মাছ। বাজারে পাঁচ কেজি ওজনের রুই ৫০০ টাকা কেজি, ছোট রুই ২৫০, পাবদা আকারভেদে ৪০০ থেকে ৪৫০, চাষের শিং ৪৫০ থেকে ৭০০, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০, কৈ আকারভেদে প্রতি কেজি ২৫০ থেকে ৩০০, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২৫০, এক কেজি ওজনের ইলিশ ২ হাজার ২০০ ও জাটকা ইলিশ ৫০০ টাকা কেজি, আকারভেদে প্রতি কেজি কাতলা ৪০০ থেকে ৪৫০, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০, ট্যাংরা ৫৫০ থেকে ৭০০, চিতল ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দেশের মানুষের খাদ্যের প্রধান অনুষঙ্গ চালের শুল্ক ছাড়েও দাম কমেনি। ভারত থেকে গত দুই মাসে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৯ হাজার ৬৮২ টন চাল আমদানি হয়েছে। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।
গত বছর দুই দফায় আমদানি করা চাল থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুরুতে চালের দাম কমাতে ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করেছিল আমদানি শুল্ক। এতে ফল আশানুরূপ না পেয়ে গত বছর (১ নভেম্বর) চালের ওপর থাকা সব আমদানি ও নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় এনবিআর। এ সিদ্ধান্তের ফলে চালের দাম প্রতি কেজিতে অন্তত ৯.৬০ টাকা কমবে বলে আশা করা হলেও উল্টো বেড়েছে দাম।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৬০ টাকার নিচে কোনো চাল বাজারে নেই। খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। ভালো মানের মিনিকেট ৮৪-৮৫, আটাশ প্রতি কেজি ৬৫, নাজিরশাল ৮০-৮৫, বাসমতী ৯৫ থেকে ১০০, চিনিগুঁড়া ১৪০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।