Apan Desh | আপন দেশ

নীতি সুদহার ১০ শতাংশ রেখেই মুদ্রানীতি ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবদেক

প্রকাশিত: ১৬:১১, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আপডেট: ২১:৩৪, ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

নীতি সুদহার ১০ শতাংশ রেখেই মুদ্রানীতি ঘোষণা

নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করছেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। নীতি সুদহার ১০ শতাংশ অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। 

সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিয়োগ স্থিতিশীল রাখতে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

২০২৩ সালের ২২ অক্টোবর নীতি সুদহার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশ করা হয়। ২০২২ সালের মে মাসে নীতি সুদহার ছিল ৫ শতাংশ। যা ধাপে ধাপে বাড়িয়ে বর্তমান পর্যায়ে আনা হয়েছে। গত দুই বছরে মোট ১০ বার সুদহার বৃদ্ধি করা হয়েছে।

দেশে দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি উচ্চ মাত্রায় রয়েছে। সুদহার বাড়িয়েও এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়নি। উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না। বরং আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাব পড়বে বিনিয়োগ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কর্মসংস্থানে। অর্থনীতিবিদরাও এ নিয়ে পরামর্শ দেন। নীতি সুদহার বাড়িয়ে বিনিয়োগ চাইলে ব্যবসায়ীদের ওপর এর প্রভাব কিছুটা হলেও পড়বে বলে মত দেন তারা। এ পরিস্থিতির মধ্যে গত মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে আসে। সার্বিক দিক বিবেচনায় এনে নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখা হলো।

আরও পড়ুন>>>আজ নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা হচ্ছে

এদিকে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। যেটা চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের একই লক্ষ্যমাত্রা (৯ দশমিক ৮ শতাংশ) ছিল। আর সরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগের মুদ্রানীতিতে সরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত নভেম্বরে বেসরকারি ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। যা ২০২১ সালের মে মাসের (৭.৫৫ শতাংশ) পর সর্বনিম্ন। এ প্রবৃদ্ধি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক নিচে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ৯ দশমিক ৮ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। যা গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধের প্রক্ষেপণের তুলনায় সামান্য কম।

মুদ্রানীতি আপনার জীবনে কী প্রভাব ফেলবে?

বাংলাদেশ ব্যাংক আজ আগামী ছয় মাসের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে। এতে অর্থনীতির গতিপথ, মূল্যস্ফীতির অবস্থা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা রয়েছে। আপনার জীবনে মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়বে নাকি কমবে, তা বুঝতে পারবেন। আবার কর্মসংস্থানের সুযোগ কতটা বাড়বে, এর দিকনির্দেশনাও পাবেন। উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণ কতটা ব্যয়বহুল হবে, তা জানতে পারবেন।

মুদ্রানীতি কী
একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে যে নীতি গ্রহণ করা হয়, তাকে মুদ্রানীতি বলে। মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে ওই দেশের সর্বোচ্চ আর্থিক কর্তৃপক্ষ। সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করে।

মুদ্রানীতির ইতিহাস
বাংলাদেশে প্রথম মুদ্রানীতি চালু হয় ২০০৬ সালে। তখন বছরে দুবার এটি ঘোষণা করা হতো। ২০১৯ সালে এটি বছরে একবার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও ২০২৩ সালে আবার আগের নিয়মে ফিরে আসা হয়। বিশ্বে মুদ্রানীতির ধারণাটি অনেক পুরোনো। যা প্রথম প্রচলন করে ১৬৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংক অব ইংল্যান্ড।

এ মুদ্রানীতিতে কী থাকবে?
নতুন মুদ্রানীতিতে আগামী ছয় মাসে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা। নীতি সুদহার ও সরকারি-বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি কত হবে তার দিকনির্দেশনা থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক খোলাবাজার কার্যক্রম, সংবিধিবদ্ধ জমার অনুপাত পরিবর্তন ও সুদহার সমন্বয়ের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবে।

নীতি সুদহার কীভাবে কাজ করে
কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদহারে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে স্বল্প সময়ের জন্য ঋণ দেয়, সেটাই হচ্ছে নীতি সুদহার। ইংরেজিতে একে বলে রেপো রেট। রেপোর বাংলা হচ্ছে পুনঃক্রয় চুক্তি। এটা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতির একটি অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি মনে করে বাজারে অতিরিক্ত তারল্য আছে, তাহলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওই তারল্য তুলে নেয়। এ জন্যও একটি নির্দিষ্ট সুদহার থাকে। অর্থ তুলে নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে সুদের হার দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে, তাকে বলা হয় রিভার্স রেপো। সাধারণত নীতি সুদহার বা রেপো রেটের তুলনায় রিভার্স রেপোর সুদহার কম থাকে।

নীতি সুদহার বেশি থাকলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে নিরুৎসাহিত হয়। সুদ বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কম ঋণ নেবে। ব্যাংক ঋণ কম নিলে মানুষও কম ঋণ পাবে। ফলে বাজারে টাকার সরবরাহ কম থাকবে। বাজারে টাকার সরবরাহ কম থাকলে জিনিসপত্রের দাম বেশি বাড়তে পারে না।

জীবনে মুদ্রানীতির প্রভাব
সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো মূল্যস্ফীতি। আয়ের সঙ্গে সংগতি না রেখে খরচ বেড়ে গেলে অর্থাৎ মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেলে মানুষের কষ্ট বাড়ে। এ জন্য মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়। মানুষের অপ্রয়োজনীয় ভোগকে নিরুৎসাহিত করা হয়। কিছু উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। আগের চেয়ে সুদের হার বাড়িয়ে ঋণের খরচ বাড়ানো হয়। এতে ব্যবসায়ীরা ঋণ নিতে নিরুৎসাহিত হন। আমদানি খরচও বাড়ে। আবার বিলাস পণ্যে এলসি মার্জিন বাড়িয়েও পণ্য আমদানির রাশ টানা হয়। ফলে ভোগের চাহিদাও কমবে। বাজারে গিয়ে আপনি বিলাস পণ্যের দাম বেশি দেখলে কিনতে নিরুৎসাহিত হবেন।

তাই মুদ্রানীতিতে সুদের হার, মূল্যস্ফীতির হার—এসব কমানো বা বাড়ানো হলো কি না, এর ওপর মানুষের জীবনধারণ কতটা স্বস্তির হবে, তা বোঝা যায়। মনে রাখতে হবে, শুধু বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগ দিয়ে এ দেশে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন। ১০ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের বেশি আছে।

সুদের হার বাড়ানোর অসুবিধাও আছে। সুদের হার বাড়ানো হলে প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়তে পারে। ঋণের সুদের হার বেড়ে গেলে উদ্যোক্তারা প্রতিষ্ঠান সম্প্রসারণ বা নতুন প্রতিষ্ঠান করতে উৎসাহিত হবেন না। এ কারণে কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাবে। সাধারণ মানুষের চাকরি বা কাজ কম পাবেন। এতে বেকারত্ব বাড়বে। কয়েক বছর ধরেই বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নয়।

আপন দেশ/এমবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়