Apan Desh | আপন দেশ

ইসলামী ব্যাংকের জলিলের আরও জালিয়াতির খোঁজ পেল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৭:৩১, ৩ মার্চ ২০২৫

আপডেট: ২২:৩১, ৩ মার্চ ২০২৫

ইসলামী ব্যাংকের জলিলের আরও জালিয়াতির খোঁজ পেল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ফাইল ছবি

ইসলামী ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারীর ঘটনার তদন্তের কেঁচো খুঁড়তে সাপ পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ব্যাংকটির গ্রাহকদের আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইসলামী ব্যাংকের সাবেক ইসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিলের অপকর্মের একেরপরএক নতুন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ নিয়ে এখন বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের মধ্যে চিঠি চালাচালি হচ্ছে। মো. আব্দুল জলিল এখনো ব্যাংকটির পরিচালক পদে আছেন।

ইসি চেয়ারম্যান থেকে অপসারণ করা হলেও তার বিষয়ে আরও সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এমন তথ্য মিলেছে।

সংশ্লিষ্টসূত্রের দাবি, ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটিতে (ইসি) উত্থাপিত মেমোতে পরিবর্তন এনে নিজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে ঋণ অনুমোদন করেছেন আব্দুল জলিল। 

গত ৫ আগস্টের প্রেক্ষাপটে নতুন বোর্ড গঠনের পরও ইসলামী ব্যাংকে ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এতে নেতৃত্ব দেন নবগঠিত পর্ষদের ইসি চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল। অনিয়মের জেরে ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ আব্দুল জলিলকে ইসি চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করেছে। এখন তাকে বোর্ড থেকে অপসারণের পথে আগাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ লক্ষ্যে ব্যাংকের অন্যান্য পরিচালকদের থেকে আব্দুল জলিলের অনিয়মের বিষয়ে মতামত নিচ্ছে। 

আরও পড়ুন<<>> ‘ইসলামী ব্যাংকের জলিলের ফয়সালা চলতি সপ্তায়’

গত ১০ ডিসেম্বর ট্রু ফেব্রিক্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে সকল ব্যাংকিং নীতিমালা লঙ্ঘন করে ঋণ অনুমোদন দেয় ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি (ইসি)। ওই কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন আব্দুল জলিল যিনি একসময় ট্রু ফেব্রিক্সে চাকরি করতেন। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ঋণ নিয়ে তদন্তে নামলে ২৩ ডিসেম্বর তড়িঘড়ি করে ঋণ অনুমোদনটি বাতিল করে দেয় ইসি। প্রস্তাবটি পরিচালনা পর্ষদে পাঠানো হলে সেখানেও বাতিল হয়ে যায়। এ ঋণে ৭টি গুরুতর অনিয়ম পায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত দল। এসব অনিয়মে আব্দুল জলিলের সংশ্লিষ্টতা সন্দাহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। এ ঋণ কেলেঙ্কারির প্রেক্ষিতে ইসি চেয়ারম্যান পদ যায় আব্দুল জলিলের। 

আলোচ্য ঋণটিতে ৭টি অনিয়মের বিষয়ে আব্দুল জলিলের ব্যাখ্যা জানতে গত ১২ জানুয়ারি চিঠি দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত ২৩ জানুয়ারি এর জবাব দিয়েছিলেন তিনি। সে জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। এর প্রেক্ষিতে ২ নম্বর অভিযোগের বিষয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আবার পাল্টা চিঠি দিয়ে ইসির অন্যান্য সদস্যদের মতামত ও ব্যাখ্যা চেয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

আলোচ্য ঋণটিতে অনিয়মের পাশাপাশি এখানে জালিয়াতিরও প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছিল, ঋণ প্রস্তাবটি বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদনের শর্তে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু নির্বাহী কমিটিতে উক্ত শর্তের পরিপালন না করে প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘনের দায় আব্দুল জলিলের ওপরই বর্তায়। 

এ অভিযোগের জবাবে মো. আব্দুল জলিল লিখিতভাবে জানান, কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যানের অনুমোদন করার কোনো সুযোগ নেই। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সকল ইসি সদস্য ও উর্ধতন নির্বাহী কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন। 

আরও পড়ুন<<>> বেনামি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে মোরশেদ আলমের শত শত কোটি টাকা পাচার

আব্দুল জলিলের এ জবাবের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। তিনি আপন দেশ’কে বলেন, ট্রু ফেব্রিক্সের ঋণটির বিষয়ে আব্দুল জলিল জালিয়াতিরও আশ্রয় নিয়েছেন। ঋণ প্রস্তাবের মেমোতে 'বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে' লাইনটি লেখা থাকলেও সভার কার্যবিবরণী চূড়ান্ত করার সময় এ লাইনটি বাদ দিয়ে দেন আব্দুল জলিল। অর্থাৎ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ঋণটি ইসিতে পাশ করিয়ে নিয়েছেন তিনি।  

এ তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় ইসলামী ব্যাংকের নির্বাহী কমিটির অন্যান্য সদস্যদের বক্তব্যের। বাংলাদেশ ব্যাংকের চিঠির প্রেক্ষিতে তারা যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাতে দেখা গেছে, ঋণ প্রস্তাবের মেমোর ২৯ নম্বর পৃষ্ঠায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছিল।

আপন দেশ/এবি

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়