
ছবি : আপন দেশ
রমজানে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবারে শসা, লেবু ছাড়া মোটামুটি স্বস্তিদায়ক ছিল সবজির বাজার। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের তৎপতায় এটি সম্ভব হয়েছিল বলেই অনের মত। রোজার পর ঈদুল ফিতরে খুব একটা দাম বাড়ে নিত্য ভোগ্যপন্যের। মুরগির দাম কিছুটা বাড়লেও এ সপ্তাহে তা কমে এসেছে। তবে সরবরাহ কমে যাওয়া বাড়তে শুরু করেছে সবজির দাম। পাশাপাশি নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে সয়াবিন তেলের।
সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। রমজান তুলনায় বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই কমবেশি বেড়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ সবজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০ টাকার আশপাশে, যা আগের তুলনায় প্রায় ২০ টাকা বেশি।
সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে বর্তমানে চাহিদার তুলনায় সবজির সরবরাহ কম। শীতের অধিকাংশ সবজি শেষ হয়ে গেছে আর গ্রীষ্মের অনেক সবজি এখনো বাজারে কম। এ কারণে দাম বেড়েছে।
রাজধানীর রামপুরা বাজারে গিয়ে দেখা যায় গ্রীষ্মকালীন সবজি বেগুন প্রকারভেদে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৯০ থেকে টাকা, পটল ৬০ থেকে ৮০ টাকা, ধুন্দল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, কচুর লতির কেজি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সজনের কেজি ১৪০ টাকা, ঝিঙে ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁপে ৫০ টাকা এবং কাঁচা আম ৬০ টাকা কমে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে শিমের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। ফুলকপি প্রতিটি ৬০ টাকা পিস, বাঁধা কপি ৫০ টাকা, লাউ ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাকা টমেটো প্রকারভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৫০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসার কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এসব বাজারে লেবুর হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ১৪০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা। চাল কুমড়া প্রতিটি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্যাপসিকাম ১২০ টাকা ও মিষ্টি কুমড়া ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
লাল শাকের আঁটি ১০ টাকা, লাউ শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা, পালং শাক ১০ থেকে ১৫ টাকা, কলমি শাক ৩ আঁটি ২০ টাকা, পুঁই শাক ৩০ থেকে ৪০ টাকা ও ডাঁটা শাকের দুই আঁটি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৫ টাকা বেড়ে ৩৫-৪৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া আলু, আদা, রসুন ও আলুর দাম আগের মতোই রয়েছে।
বাজার করতে আসা আমির হোসেন বলেন, দাম বেশি কারণে আজ আধা কেজি করে সবজি কিনলাম। দাম যখন আবার কমবে তখন ১ কেজি করে সবজি নেব। আজকের বাজারে সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে। মূলত ঈদের পর থেকেই সবজির দাম বাজারে বেশি। ঈদের আগে পুরো রমজান মাস জুড়ে সবজি কিনা খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছে সাধারণ ক্রেতারা। কিন্তু এখন আবার দাম বেড়ে যাচ্ছে এতে করে সাধারণ ক্রেতাদের অস্বস্তি শুরু হচ্ছে।
সপ্তাহ ব্যবধানে বাজারে মুরগির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। এসব বাজারে সোনালি কক মুরগি কেজিতে ৫০ টাকা কমে ২৭০ এবং সোনালি হাইব্রিড কেজিতে ৪০ টাকা কমে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
লাল লেয়ার মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ২৮০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৭০ টাকা, ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ৩০ টাকা কমে ১৮০ টাকা এবং দেশি মুরগি কেজিতে ২০ টাকা কমে ৬৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়। হাঁসের ডিমের ডজন ২২০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকা।
এসব বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৭৮০ টাকা। গরুর কলিজা ৮০০ টাকা, গরুর মাথার মাংস ৪৫০ টাকা, গরুর বট ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা এবং খাসির মাংসের কেজি এক হাজার ১৫০টাকা থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।
অন্যদিকে সপ্তাহ ব্যবধানে মাছের বাজার কিছুটা চড়া রয়েছে। পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ইলিশে দাম কিছুটা বেড়েছে ৫০০ সাইজের ইলিশ মাছ ১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মাছের মধ্যে এক কেজি শিং মাছ চাষের (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, দেশি মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা , মৃগেল ৩৬০ থেকে ৪০০ টাকায়, চাষের পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২৩০ টাকায়, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়, বড় কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২২০ থেকে ২৩০ টাকায়, মলা ৬০০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১৩০০ টাকায়, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি মাছ ৫০০ টাকায়, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০ টাকায়, রুপচাঁদা ১২০০ টাকা, বড় বাইম মাছ ১২০০ থেকে ১৪০০ টাকা, দেশি কই ১২০০ টাকা, সোল মাছ ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বেলে মাছ ৮০০ টাকা, কুড়াল মাছ ৮০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা এবং কাইকলা মাছ ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
তবে বাজারে আবারও সয়াবিন তেলের কিছুটা সংকট দেখা দিয়েছে। অনেক দোকানেই তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে। অর্থাৎ কোনো দোকানে ৫ লিটারের বোতলজাত তেল থাকলেও এক-দুই লিটারের বোতল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার কোনো কোনো দোকানে প্রতি লিটারে নির্ধারিত দাম ১৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বিক্রেতারা বলেন, কোম্পানি তেল দেয় না। ঈদের পর থেকে অর্ডার নিচ্ছে না। যে কারণে ৫ টাকা বেশি দিয়ে বাইরে থেকে কিনে আনি।
এর আগে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে একলাফে ১৮ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার মালিকরা। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দুই দফা বৈঠকের পরও দাম বাড়ানোর কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
ঈদের ছুটির আগে শেষ কর্মদিবস ২৭ মার্চ ট্যারিফ কমিশনে এ বিষয়ে চিঠি দিয়ে ১ এপ্রিল থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৯৩ টাকা হবে বলে জানায় পরিশোধন কারখানার মালিকদের ওই সংগঠন। সে হিসাবে লিটারে দাম বাড়ছে ১৮ টাকা। তবে দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের অনুমতি এখনো মেলেনি। যে কারণে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।