Apan Desh | আপন দেশ

লবণ উৎপাদনে ভাঙল ৬২ বছরের রেকর্ড 

কক্সবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১১:১৭, ৯ মে ২০২৩

আপডেট: ১১:২০, ৯ মে ২০২৩

লবণ উৎপাদনে ভাঙল ৬২ বছরের রেকর্ড 

ফাইল ছবি

লবণ উৎপাদনের মৌসুম শেষ হতে আর অল্প কদিন বাকি। কাগজে-কলমে লবণ মৌসুম চলে ১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পাঁচমাস। এরই মাঝে কক্সবাজার উপকূলের ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে ২১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আরও অন্তত ৩০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

লবণ উৎপাদনে রেকর্ড করেছেন প্রান্তিক চাষিরা। বাণিজ্যিকভাবে লবণ চাষে গত ৬২ বছরে ২১ লাখ মেট্রিক টন লবণ কখনো উৎপাদিত হয়নি। ২০২২ সালে সবচেয়ে বেশি ১৮ লাখ ১৫ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছিল।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, জেলাতে বাণিজ্যিক লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছিল ১৯৬০ সালে। চলতি মৌসুমে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে পর্যন্ত পাঁচ মাস) জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও, চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীতে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। ৬ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২১ লাখ ৭৫ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে এই সময়ে উৎপাদিত হয়েছিল ১৮ লাখ ১৫ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। এ হিসাবে চলতি মৌসুমে গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন লবণ বেশি উৎপাদন হয়েছে।

রোববার (৭ মে) টেকনাফের সাবরাং, শাহপরীরদ্বীপ, হ্নীলা ইউনিয়নের রঙিখালী, খারাংখালী, সিকদারপাড়া, কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল, চৌফলদন্ডী, পিএমখালী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উৎপাদিত লবণচাষিরা মাঠের উপর স্তূপ করে রেখেছেন। কেউ কেউ বাড়িঘরের আঙিনায় মজুত করে তার উপর পলিথিন বিছিয়ে দিচ্ছেন।

রঙিখালী গ্রামের চাষি গিয়াস উদ্দিন ও ও খারাংখালী  গ্রামের চাষি রহমত উল্লাহ বলেন, এখন প্রতি মণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪২০ টাকায়। কয়েক দিন পর অর্থাৎ বৃষ্টি হলেই লবণের মৌসুম শেষ হবে। তখন প্রতি মণ লবণের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা বেড়ে যেতে পারে। প্রতি মণ লবণ তখন ৫০০ টাকায় বিক্রি হবে এই আশায় চাষিরা লবণ মজুত করছেন।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, টানা ১৮ থেকে ১৯ দিনের দাবদাহ পরিস্থিতিতে লবণের বাম্পার উৎপাদন হচ্ছে। তা ছাড়া লবণের দামও বেশি পাওয়া যাচ্ছে। গত মৌসুমে প্রতি মণ লবণ ২৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায়। এবার ২৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাংলাদেশ লবণচাষি সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি ও মহেশখালীর লবণচাষি আনোয়ার পাশা চৌধুরী বলেন, বাণিজ্যিকভাবে লবণ উৎপাদন শুরুর ৬২ বছরে এবার চাষিরা লবণ উৎপাদনে যে সাফল্যে দেখিয়েছেন, অতীতে এমনটি আর হয়নি।

বিসিক লবণ উন্নয়ন প্রকল্পের মাঠ পরিদর্শক মো. ইদ্রিস আলী বলেন, ২০২০ সালে যখন লবণনীতি করা হয়, তখন দেশের লোকসংখ্যা ১৮ কোটি ধরে লবণের বার্ষিক চাহিদা ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছিল। এখন দেশের জনসংখ্যা গণনায় পাওয়া গেছে ১৭ কোটি। এ ক্ষেত্রে ২১ লাখ মেট্রিক টন লবণ দিয়ে ১৭ কোটি মানুষের বার্ষিক চাহিদা পূরণ সম্ভব। এখন দৈনিক গড়ে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে ১২ মেট্রিক টন।

বিসিকের কক্সবাজার লবণ শিল্পের উন্নয়ন কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, মৌসুমজুড়ে দাবদাহ, কম বৃষ্টি, ৬৬ হাজার একর জমির শতভাগে আধুনিক পলিথিন প্রযুক্তিতে চাষবাদ এবং অতিরিক্ত তিন হাজার একরের বেশি জমিতে লবণ চাষের কারণে উৎপাদনে নতুন রেকর্ড হয়েছে।

তিনি বলেন, আরও কিছুদিন সময় পাওয়া যাবে তাতে আরও ৩০-৪০ হাজার মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হবে। লবণের স্বয়ংসম্পূর্ণতা বজায় রাখতে সময়াবদ্ধ কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আধুনিক পদ্ধতিতে চাষিদের অগ্রিম লবণ চাষে উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রশিক্ষণ, লবণ চাষের নতুন এলাকা চিহ্নিতকরণ এবং সম্প্রসারণের উদ্যোগ চলছে। পাশাপাশি সহজ শর্তে লবণ চাষিদের ঋণ প্রদান, একরপ্রতি লবণ উৎপাদন বৃদ্ধিকরণ, লবণ চাষের জমির লিজ মূল্য নির্ধারণ, লবণ চাষের জমি সংরক্ষণ, আধুনিক পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদনে প্রদর্শনী ও উৎপাদিত লবণের মান নিয়ন্ত্রণে কারিগরি সহায়তা প্রদান, জরিপ পরিচালনা, লবণ চাষ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ এবং লবণ উৎপাদন, মজুদ ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে নিয়মিতভাবে মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। 

আপন দেশ/আরএ

মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

শেয়ার করুনঃ

সর্বশেষ

জনপ্রিয়