ফাইল ছবি
আর মাত্র দুদিন পরেই ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করা হবে। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে প্রায় সাত লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। যেখানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরর লক্ষ্যমাত্রা হতে যাচ্ছে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের মাত্র দুই মাস বাকি থাকলেও তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য থেকে বহুদূরে প্রতিষ্ঠানটি।
অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৪ হাজার ৬৩১ কোটি ২৬ লাখ টাকা পিছিয়ে আছে এনবিআর। বিশাল ঘাটতি, সেই সঙ্গে নতুন অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়ছে; সবমিলিয়ে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কপালে।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই লাখ ৮৪ হাজার ৯২৬ কোটি টাকা, আলোচ্য সময়ে আদায় হয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা। যদিও রাজস্বের এই আহরণ বিগত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে সাত দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৮ শতাংশ অর্জিত হলেও বড় ঘাটতি এড়াতে পারেনি এনবিআর। ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হয়েছিল।
সূত্রানুসারে, আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ ১৯ হাজার ১২৫ কোটি টাকা। দশ মাসে মোট রাজস্ব ঘাটতির অর্ধেকেরও বেশি হয়েছে এ খাতে। একই সময়ে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাটে ঘাটতি হয়েছে ১০ হাজার ১৩৬ কোটি টাকা। আয়কর খাতে ঘাটতির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৩৬৯ কোটি টাকা।
আমদানি ও রফতানি খাতে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। এপ্রিল পর্যন্ত এ খাতে লক্ষ্য ছিল ৯৩ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। যেখানে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৪ হাজার ২২১ কোটি টাকা। যদিও আমদানির এই রাজস্ব ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে এক দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে ভ্যাটে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এপ্রিল পর্যন্ত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ আট হাজার ১৫১ কোটি টাকা। যার বিপরীতে ভ্যাট আদায় হয়েছে ৯৮ হাজার ১৪ কোটি টাকা। যদিও ভ্যাটের এই আয় ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ৪২ শতাংশ বেশি।
২০২২-২৩ অর্থবছরে আয়কর ও ভ্রমণ কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এপ্রিল পর্যন্ত আয়কর ও ভ্রমণ কর খাতে ৮৩ হাজার ৪২৮ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭৮ হাজার ৫৮ কোটি টাকা। তবে আয়কর খাতে এই আয় ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে তিন দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার অর্থবছরের শুরু থেকেই আমদানিকে নিরুৎসাহিত করেছে। এলসি খোলার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি এসেছে, সেটেলমেন্টও কমেছে। ফলে আমদানি ঋণাত্মক হয়ে যাওয়ায় শুল্ক আদায়ও কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে ঘাটতির ক্ষেত্রে। বিগত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বড় ঘাটতি থাকবে। যার প্রভাব পড়বে নতুন অর্থবছরের বাজেটে।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল ভ্যাট ও আয়কর থেকে এনবিআরের আরও বেশি রাজস্ব আদায় হবে। সেটা হয়নি। চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা যেখানে পূরণ হয় না, সেখানে আগামী অর্থবছরে প্রায় সাড়ে চার লাখ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা কীভাবে অর্জিত হবে, সেটি অবশ্যই চিন্তার কারণ।
এর আগে চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের নয় মাসে এনবিআর নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে ছিল ১৫ হাজার ৮০৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় তিন লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ১১ হাজার কোটি, মূসক আদায়ে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং আয়কর খাতে এক লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)-র সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা সারচার্জ বৃদ্ধিকে স্বাগত জানাই, কারণ তা আয় ও সম্পদের বৈষম্য কমাতে সহায়ক হবে। একইসঙ্গে রাজস্ব আদায় বাড়াতে সাহায্য করবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিকই আছে। তিনি বলেন, বিবিএস (বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো)-এর হিসাব অনুযায়ী, দেশে উল্লেখযোগ্যভাবে আয় ও সম্পদ বৈষম্য বেড়েছে। তাই আমাদের সম্পদে মনোযোগ দেয়া দরকার। কার্যকরীভাবে বৈষম্য কমানোর জন্য সর্বোচ্চ হারের ব্যক্তি করদাতাদের বর্তমান কর হার পুনর্মুল্যায়নের ওপর গুরুত্ব দেন এই অর্থনীতিবিদ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলছেন, সরকার রাজস্ব আহরণ বাড়ানো এবং বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। অনেক দিন ধরেই আমাদের রাজস্ব আহরণের প্রধান খাত ভ্যাট। একদিকে আমাদের রাজস্ব বাড়াতে হবে। আবার অন্যদিকে বৈষম্যও কমাতে হবে। তাই আমরা চলতি অর্থবছরে প্রত্যক্ষ করের অংশ অন্যান্য অর্থবছরের তুলনায় বাড়িয়েছি। আগামী বাজেটে প্রত্যক্ষ করের অংশ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়াতে না পারলেও অংশ বাড়তে পারে। আগামী বাজেটগুলোতে বৈষম্য কমানোর উদ্যোগ হিসেবে অবশ্যই প্রত্যক্ষ করের অংশ বাড়বে।
আপন দেশ/আরএ
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।