ফাইল ছবি
বগুড়া এইচএসসির ২০ শিক্ষার্থী সরকারি শাহ সুলতান কলেজে প্রবেশপত্র আনতে গিয়ে দেখেন তাদের একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিই হয়নি। ফলে দিতে পারেনি এইসএসসি পরীক্ষা।
তারা নিয়নিত কলেজের সকল ফি দিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। নিয়মিত ক্লাস ও কলেজের সকল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
কিন্তু বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) জানতে পরলো তারা কলেজের শিক্ষার্থী নন। ভর্তির সময় প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজের কর্মচারীদের প্রতারণার কারণে তারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারলেন না। প্রায় দুই বছর নিয়মিত ক্লাস করে চুড়ান্ত পরীক্ষার জন্য তারা কলেজে প্রবেশপত্র আনতে যান। তখনই তারা এসব তথ্য জানতে পারেন।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, কলেজে কর্মরত হারুনুর রশিদ এবং আব্দুল হান্নান নামে দুই কর্মরচারী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন: এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে মাতলামি, তরুণের কারাদণ্ড
প্রতারণার শিকার শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান জানান, এসএসসি পাস করার পর নিয়ম অনুযায়ী অনলাইনে ভর্তির জন্য আবেদন করেছিলেন। ওই আবেদনে তারা বগুড়ার একাধিক কলেজের নামে ভর্তির চয়েস হিসেবে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার একটিও কার্যকর হয়নি। পরে তারা লোকমুখে জানতে পারেন বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজে অফলাইনে এইচএসসিতে ভর্তি করা হচ্ছে। এরপর তারা ওই কলেজের দুই পিওন হারুনুর রশিদ এবং আব্দুল হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে ভর্তির জন্য তারা ১০ হাজার টাকা দাবি করেন।
শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান আরও জানান, আমি হারুনের কাছে ১০ হাজার টাকা দিলে তিনি আমাকে কলেজে ভর্তির রশিদ দেন। তারপর আমি কলেজে ক্লাস করতে থাকি। পরে পরীক্ষা এবং ফরম পূরণসহ বিভিন্ন সময় কলেজে এবং বোর্ডে জমা দেয়ার কথা বলে তিনি আরও টাকা হাতিয়ে নেন। নিয়মিত ক্লাস করার পাশাপাশি আমি টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং ফরম পূরণ করি। চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য প্রবেশপত্র চাইলে তিনি গত ১৬ আগস্ট সকাল ১০টায় কলেজে যেতে বলেন। ওইদিন কলেজে গেলে তিনি বলেন প্রবেশপত্র প্রিন্ট হয়নি। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে গিয়ে আনতে হবে। আমি রাজশাহী যাচ্ছি তোমরা অপেক্ষা কর।
আরেক শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার জানান, আমাকে প্রবেশপত্র নেয়ার জন্য হারুন পরীক্ষার দিন গত বৃহস্পতিবার ভোরে কলেজে যেতে বলেন। সকাল থেকে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী অপেক্ষার পর তাকে কলেজে না পেয়ে ফোন দিলে হারুন ফোন রিসিভ করেননি। পরে আমিসহ অন্যরা পরীক্ষাকেন্দ্র পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজে গেলে সেখানে আমাদের কোনও সিট খুঁজে পাইনি। এরপর কলেজে এসে জানতে পারি আমাদের ভর্তিই করানো হয়নি। ভর্তির রশিদসহ যেসব কাগজপত্র দেয়া হয়েছিল এর সবকিছুই নকল ছিল।
কলেজে সবার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের সময় পাঁচ থেকে সাতজন একই রকম প্রতারণা শিকার হয়েছিলেন। তবে ওই সময় কলেজের শিক্ষকদের প্রচেষ্টায় তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
কলেজ শিক্ষার্থীরা দাবি করেন, কলেজ স্টাফদের একটি সিন্ডিকেট গোপনে এসব প্রতারণামূলক কাজ করছে। হারুন ছাড়াও এই সিন্ডিকেটে একাধিক ব্যক্তি জড়িত।
বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকুর রহমান জানান, গত বুধবার থেকে আমরা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী পেয়েছি, যারা পরীক্ষার প্রবেশপত্র নিতে এসে ঘুরে গেছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি প্রতারণার কথা।
শাহ সুলতান কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আইয়ুব আলী জানান, ওই শিক্ষার্থীরা দুই বছরে কখনও কোনও শিক্ষকের কাছে আসেনি। যদি আসতো তাহলে হয়তো এই সমস্যা হতো না।
হারুনুর রশিদের বিষয়ে তিনি জানান, এর আগে অনৈতিক কাজে বরখাস্ত হয়েছিলেন হারুন। সে সময় তিনি এমন অপরাধ আর করবেন না মর্মে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
আরও পড়ুন: প্রশ্ন ফাঁসের গুজব ছড়ালে কঠোর ব্যবস্থা: শিক্ষামন্ত্রী
সরকারি শাহ সুলতান কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. রেজাউন নবী জানান, আমি বিগত সময়ের ঘটনা বলতে পারবো না। কয়েক মাস হলে আমি এই কলেজে যোগদান করেছি। ভর্তির নামে প্রতারণার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্ত কমিটি গঠন করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু জানান, বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে এসে ফিরে গেছে। বিষয়টি খুবই মর্মাহত। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে এই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
আপন দেশ/জেডআই
মন্তব্য করুন # খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, আপন দেশ ডটকম- এর দায়ভার নেবে না।